দুই যুগ পর মঞ্চে আফজাল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অভিনয়নৈপুণ্যে হাজারো মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও পরে বিজ্ঞাপননির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েছেন আফজাল হোসেন। তার শুরুটা হয়েছিল মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। পরে জীবিকার ব্যস্ততায় মঞ্চে অভিনয় করেননি প্রায় দুই যুগ। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মঞ্চে অভিনয় করতে যাচ্ছেন এই নন্দিত অভিনয়শিল্পী। নাটকের নাম ‘পেন্ডুলাম’। মাসুম রেজার রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিচ্ছেন দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। এটি যৌথভাবে প্রযোজনা করছে ঢাকা থিয়েটার ও দেশ নাটক। আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হতে পারে বলে জানা গেছে।

আফজাল হোসেন , ‘জীবিকার ব্যস্ততার কারণে এই সময়টাতে মঞ্চে অভিনয় করা হয়নি। টেলিভিশন নাটকেও হাতে গোনা কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। তবে থিয়েটার থেকে দূরে ছিলাম না। ঢাকা থিয়েটারসহ বিভিন্ন নাট্যদলের বেশ কয়েকটি নাট্য প্রযোজনার পোস্টার ডিজাইন করেছি। একাধিক নাটকের সেট ডিজাইনও করেছি। এ ছাড়া আমার নাট্যদল ঢাকা থিয়েটারের বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। নাট্যদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। তবে জীবিকার বাস্তবতায় মঞ্চে অভিনয় করা হয়নি।’

নাট্যসংগঠন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রায় চার দশক আগে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেছিলেন আফজাল। এই নাট্যদলে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন শিমূল ইউসুফ, হুমায়ুন ফরীদি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সুবর্ণা মুস্তাফাসহ অনেককে। মূলত একই নাট্যদলে কাজ করার সুবাদে আফজাল-সুবর্ণা-ফরীদি হয়ে ওঠেন বন্ধু। পরে এই বন্ধুত্বের গল্প দেশজুড়ে আলোচিত হয়। আর ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ। এ ছাড়া অসংখ্য গুণী অভিনয়শিল্পীর জন্ম দেওয়া ঢাকা থিয়েটার মূলত ছিল আফজাল হোসেনের শিল্পমানস গড়ার মূল ভিত্তি।

অনেক দিন পর নাসির উদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনায় মঞ্চে অভিনয় প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘করোনা মহামারীতে যখন অলস সময় কাটাচ্ছি, তখনই নাটকটির ব্যাপারে পরিকল্পনা হয়। তারপর আমরা অনলাইনে মহড়া শুরু করি। কিছুদিন হলো শারীরিক উপস্থিতিতে মহড়া কক্ষে গিয়ে মহড়া করছি। নাসির উদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনায় কাজ করাটা সব সময়ই আনন্দের। অনেক কিছু শিখি।’

জানা যায় ২০১৮ সালে ‘পেন্ডুলাম’ নাটকটি লিখেছেন মাসুম রেজা। মূলত তিনটি চরিত্র মঞ্চে অভিনয় করবে। এতে রতন চরিত্রে দেখা যাবে আফজাল হোসেনকে। আর লাসিং ও এসপ চরিত্রে দেখা যাবে নাজনীন চুমকি ও কামাল আহমেদকে। নাটকটি নগর প্রেক্ষাপটে। একজন সাধারণ মানুষের বদলে যাওয়ার গল্প। পুঁজিবাদী সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে অসংগতির সময়ে বেড়ে ওঠা একজন মানুষের প্রায় শেষ বয়সে এসে তার অবস্থাটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

অনেক দিন পর মঞ্চে ফেরা নিয়ে দারুণ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে উল্লেখ করে আফজাল হোসেন বলেন, ‘জীবন তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা রুটিনে চলতে থাকে। সেখানে যখন নতুন সৃজনশীল কিছু যুক্ত হয়, তখন তো আনন্দ কাজ করে। এই বয়সে এসে এমন একটি নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি কিংবা এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছি, এটা ভীষণ আনন্দের।’

টেলিভিশন নাটকের কাজ প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি তো এক যুগের বেশি সময় ধরে খুব বেশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করিনি। “ছোটকাকু” নামে একটি ধারাবাহিক নাটক কয়েক বছর ধরে নিয়মিত নির্মাণ করছি। করোনার জন্য এটির শ্যুটিংও বন্ধ ছিল। আবার শুরু করেছি। আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনিভিত্তিক একটি ডকু ফিকশন নির্মাণ করছি। নাম ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। এটির ব্যাপ্তি দুই ঘণ্টার। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অনুদানে নির্মিত এই ডকু ফিকশনটি লিখেছেন আনজীর লিটন ও চিত্রনাট্য করেছেন মাসুম রেজা। স্বামী, স্ত্রী ও তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে এই ডকু ফিকশনের গল্পটা এগিয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও এটি তার জীবনী নয়। খুব আলাদা ধরনের গল্প।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর