বিপিএলে হতাশ করলেন যারা

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এখন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য নিজেকে প্রমাণের বড় প্লাটফর্ম। সেই সঙ্গে তরুণ ক্রিকেটার ও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়াদেরও সুযোগ থাকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের। বিপিএলের চতুর্থ আসরে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের উপর একটু বেশিই নজর ছিল। কারণ আসর শেষ হতেই নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য দেশ ছাড়তে হয়েছে তাদের। ক্রিকেটাররাও সুযোগটা বেশ ভালোভাবে লুফে নিয়েছেন। ফর্মে না থাকা মুশফিকুর রহীম নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ থেকে শুরু করে তরুণ মোসাদ্দেক হোসেনও নিজেকে প্রমাণ করেছেন ব্যাট ও বল হাতে। এর মধ্যে অবশ্য সুপার ফ্লপ হলেও নিউজিল্যান্ড সফরে জায়গা পেয়েছেন সৌম্য সরকার ও শুভাগত হোম। আবার ভালো খেলে জায়গা হয়নি নাসির হোসেন ও শাহরিয়ার নাফীসের। এদের বাইরে জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন তরুণ ও অভিজ্ঞ তারকা হতাশ করেছেন বিপিএলে। এর মধ্যে ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও আল আমিন হোসেন। আল আমিন আর লিটনের পারফরম্যান্স ছিল ভীষণ হতাশ করা। এই আসরে আরো একটি হতাশার নাম আবু হায়দার রনি। এই পেসার বিপিএলের তৃতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার হয়ে ২১ উইকেট পেলেও এবার বরিশালের হয়ে ৭ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। জাতীয় দলের হয়ে ৫টি টি-টোয়েন্টি খেলা রনির উপর তাই এবার ভরসা রাখেননি নির্বাচকরা।
ইমরুল কায়েস এখন দেশের টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিম ইকবালের সঙ্গে সেরা জুটি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বিপিএলের তৃতীয় আসরে ছিলেন শীর্ষ রান সংগ্রহকারী। বিপিএলে তামিম যেখানে ৫ ফিফটি হাঁকিয়ে ৪৭৫ রান করে শীর্ষ রান সংগ্রহকারী সেখানে ইমরুল কায়েস ১২ ম্যাচ খেলে করেছেন ২১.৪১ গড়ে ২৫৭ রান। ফিফটি হাঁকিয়েছেন মাত্র ১টি। কায়েস প্রথম ৬টি ম্যাচে করেন ১২৪ রান। এরপর নিজেকে ফিরে পাননি। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা এই আসরে শেষ চারের আগে বাদ পড়লেও কায়েসের শেষ মুহূর্তে জ্বলে ওঠায় ও তার জাতীয় দলের পারফরম্যান্স বিবেচনাতে নিউজিল্যান্ড সফরে যেতে কোনো সমস্যাই হয়নি। ইমরুল নিজেকে খুঁজে পেলেও জাতীয় দলে তামিমের সঙ্গী হতে আসা সম্ভাবনাময় দুই তরুণ ছিলেন একবারেই ব্যর্থ। এর মধ্যে একজন ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। অন্যজন রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলা সৌম্য সরকার। এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ১২ ম্যাচে ১২.২৭ গড়ে করেছেন ১৩৫ রান। যদিও তার উপর আস্থা রেখেছে বিসিবি। যে কারণে বিপিএলে সুপার ফ্লপ সৌম্য জাতীয় দলেই রয়েছেন। কিন্তু সৌম্যর মতো ভাগ্য হয়নি লিটন কুমার দাসের। ১০ ম্যাচে ৭ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তার সংগ্রহ মাত্র ৬৪ রান। সর্বোচ্চ ২৪ রান এসেছিল তার ব্যাট থেকে।
অন্যদিকে শুধু জাতীয় দলই নয়, বিপিএলেও সুপার ফ্লপ শুভাগত হোমের ভাগ্যটা অসাধারণ। বিপিএলের চতুর্থ আসরে ১৩ ম্যাচে মাত্র ৯.৫৮ গড়ে ১১৫ রান করে সবাইকে হতাশ করলেও তিনি জাতীয় দলের জায়গা হারাননি। একই অবস্থা উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানেরও ১১ ম্যাচে সংগ্রহ মাত্র ১১৪ রান। কিন্তু এই সময় মুশফিকুর রহীমের পর দেশের সেরা এই তরুণ কিপার দলে টিকে গেছেন শুধু কিপিং দিয়েই। জাতীয় দলে সদ্য অভিষেক হওয়া তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের দল রাজশাহী কিংস ফাইনাল খেললেও তিনি ব্যাট-বল হাতে ছিলেন ব্যর্থ। ১৫ ম্যাচে ১১.২৮ গড়ে করেছেন ৭৯ রান, সর্বোচ্চ ৪১। আর বল হাতে নিয়েছেন ১২টি উইকেট। জাতীয় দলের স্পিনার তাইজুল ইসলামও বল হাতে আহামরি ছিলেন না। বরিশালের হয়ে ১২ ম্যাচে তার শিকার ১০ উইকেট। অবশ্য তার চেয়ে আরেকটি ম্যাচ বেশি খেলে ১১টি উইকেট নিলেও জাতীয় দলে এবার জায়গা হয়নি স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেলের। জাতীয় দলের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা পেসার আল আমিন হোসেনের। বরিশালের হয়ে পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন ৫টি উইকেট। সেই সঙ্গে মাঠের বাইরে বিতর্কে জড়িয়ে ১২ লাখ টাকা জরিমানা গুণে সুযোগ হারিয়েছেন জাতীয় দলে ফেরারও।
ব্যাট হাতে ব্যর্থ যারা
ক্রিকেটার ম্যাচ রান গড় ৫০/১০০
ইমরুল কায়েস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ১২ ২৫৭ ২১.৪১ ১/০
সৌম্য সরকার (রংপুর রাইডার্স) ১২ ১৩৫ ১২.২৭ ০/০
শুভাগত হোম (খুলনা টাইটান্স) ১২ ১১৫ ৯.৫৮ ০/০
নুরুল হাসান (রাজশাহী কিংস) ১১ ১১৪ ১৪.২৫ ০/০
লিটন কুমার দাস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ১১ ৬৪ ১০.৬৬ ০/০
বল হাতে ব্যর্থ যারা
ক্রিকেটার ম্যাচ উই. গড় সেরা শিকার
মোশাররফ হোসেন (খুলনা টাইটান্স) ১৩ ১১ ২৪.০০ ৩/৩১
তাইজুল ইসলাম (বরিশাল বুলস) ১২ ১০ ২৭.৬০ ৩/১৮
আল আমিন হোসেন (বরিশাল বুলস) ৫ ৫ ৩৩.৪০ ৩/৩৫
আবু হায়দার রনি (বরিশাল বুলস) ৭ ৪ ৫৩.৭৫ ২/৩৪

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর