হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ৭ বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ তথা হাওরবাসীর কাছে ভাটির শাদুর্ল হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ আ্যাডভোকেট এবারও হতে যাচ্ছেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। দলমত নির্বিশেষে জেলার সকল জনগণ তাকে সমর্থণ যানাছেন। এ খবরে কিশোরগঞ্জ জেলার সকল অধিকারীরা দোয়া ও সমর্থণ যানাছেন। আব্দুল হামিদ আ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।
আব্দুল হামিদের শিক্ষাজীবন শুরু কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন ভৈরব কেবি স্কুলে এবং নিকলী জেসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রী এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। এলএলবি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬ সময়কাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে করারুদ্ধ করে। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সনে একই কলেজের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ সাব-ডিভিশনের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে ময়সনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের জেলা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আব্দুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদীয় আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) এর সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ -৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ এর ২৫ জানুয়ারি স্পিকার নির্বাচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন ।
১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুল হামিদ ৭ম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ৮ম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্য়ন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার নির্বাচিত হন।
একজন সমাজ সেবক ও শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বনামখ্যাত আব্দুল হামিদ তার নির্বাচনী এলাকায় একাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলার সর্বত্র রয়েছে তার উন্নয়নমূলক অনেক কর্মকাণ্ড। এছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আজীবন সম্মানিত সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য এবার তার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে স্বাধীনতা পদক।
সর্বশেষ আবার হতে যাচ্ছেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। এদিকে তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ছে গোটা কিশোরগঞ্জ। জেলার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল হামিদের তৃতীয় বারে রাষ্ট্রপতি হলে জেলার সকল জনগণ দলমত নির্বিশেষে সবাই আনন্দিত ও গর্বিত হবে বলে মনে করেন। আব্দুল হামিদ পুরো জেলার গর্ব।
জেলার অধিবাসীরা জানান, কিশোরগঞ্জ রত্নগর্ভা জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কেননা এর আগে তারা পেয়েছেন আরো দুই রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ১৯তম রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান দু’জনই ছিলেন এই জেলার। এবার ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আছেন আবদুল হামিদ। তৃতীয় বারের মত রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন আবদুল হামিদ।
চলতি ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে বছরের শুরুতেই সকলেরই দৃষ্টি এখন ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে।
এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা-সমালোচনা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস বরাবরই কিশোরগঞ্জকে এগিয়ে রেখেছে। আর এ কারণে ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা ও গুঞ্জনের অন্ত নেই।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তৃতীয় মেয়াদে নিজে রাষ্ট্রপতি পদে না আসলে কিশোরগঞ্জের আরো দুই কৃতিত্ব ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে। ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আলোচনায়ও ঘুরে ফিরে আসতে পারে কিশোরগঞ্জের ২ কৃতী ব্যক্তিত্ব বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হমিদ ও দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম।
অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠপুত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসন থেকে চার চারবার দলীয় মনোনয়েনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পাশাপশি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে এ দুইজনের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আলোচনায় রয়েছে। আবার কেউ বলছেন, পিতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ন্যায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে দলের দুর্দিনে কান্ডারীর ভূমিকা পালন করায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে পারে।
নতুন বছরের শুরুতেই ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা-সমালোচনা। আর এ আলোচনায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নাম ও আলোচিত হচ্ছে। এ আলোচনায় থাকা চারজন ব্যক্তি কিশোরগঞ্জের।
এই কারণে বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা থেকে কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তানেরা বার বার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।