নিজাম (নেতকোনা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনা মদনে অবাধে চলছে ফসলি জমির মাটি বিক্রি। কৃষকদের সামান্য টাকা দিয়ে অসাধু চক্র কৃষি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটির ওপরের অংশ) তুলে নিয়ে বিক্রি করছে। এতে জমির উর্বরতা হারিয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে এবং পরিবেশও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসন কোন রকম কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে।
জানা গেছে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কৃষিজমি থেকে মাটি সংগ্রহ বা ভারী যানবাহনে পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের জন্য জরিমানা ও কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। তবুও এক শ্রেনির অসাধু চক্র নিয়ম ভেঙে জমির মাটি বিক্রি করছেন।
নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল মদন উপজেলার মানুষের প্রধান অর্থকারী ফসল হচ্ছে ধান। হাওর পাড়ে মূলত এক ফসলি জমিতে বোরো ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে কৃষক পরিবারগুলো। এর মধ্যে কিছু আমন আবাদের জমিও রয়েছে। ভাদ্র মাসে আমন জমি রোপন করলে অগ্রাহায়ণ মাসে সেই জমির ফসল কর্তন করা হয়। অপর দিকে কার্তিক মাসে হাওরের পানি কমতে থাকে। অগ্রহায়ণ ও পোষ মাসে বোরো জমি রোপন করে কৃষকরা। আমন ফসল কর্তন ও বোরো ফসল রোপনের মাঝে যে সময়টা থাকে সেই সময়ে এক শ্রেনির অসাধু চক্র ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব চালায়। এই সুযোগে বিভিন্ন খাস জমি, নদীর তীর কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মাটি পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক্টর। পাকা ও কাঁচা রাস্তায় মাটি পরিবহনের ভাড়ী গাড়ি চলাচল করায় রাস্তাগুলোর বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সরজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রশাসনকে অবগত করলেও কোন রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাটি ব্যবসায়ী জানান,‘ আমরা কৃষদের টাকা দিয়ে মাটি কিনে ব্যবসা করছি। মাটির ব্যবসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় টাকাও দিতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে উর্বরতা নষ্ট হয়। এতে করে ওই জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যায়। মদন উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে দেখা যাচ্ছে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির টপ সয়েল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন ও পরিবেশ উভয়ই বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাত জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া বিষয়ে অবগত হয়েছি। এসিল্যান্ড না থাকায় ব্যবস্থা নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।