টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত ৪ অক্টোবর প্লাবিত হয় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলা। এতে দুর্ভোগে পড়েন দুই লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ধান ও সবজির ক্ষেত, সড়ক ও বাঁধে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরছে মানুষ। তবে পানি নামতেই দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃখ হয়ে ভাসছে। আকস্মিক এ বন্যায় আমন ধানে ৩১৫ কোটি ৯৮ লাখ ও সবজিতে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধান ও সবজি মিলিয়ে তিন উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে মোট ৩২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
কৃষকরা জানান, বন্যার পানি কমেছে। ফলে ভেসে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। ধান ও সবজির চারা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। আবারো পুনরায় চাষাবাদ করতে হবে। কিন্তু অনেকেরই নেই চাষাবাদ করার মতো টাকা। বন্যার আগে অনেকে ঋণ ও ধারদেনা করে চাষ করেছেন। এখন ঋণ পরিশোধসহ নতুন করে চাষাবাদ করা নিয়ে দিশেহারা হচ্ছেন তারা।
হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা এলাকার কৃষক মতিন মিয়া বলেন, ১২ কাটা জমিতে ধান ও সবজি চাষ করেছিলাম। আকস্মিক বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। এ বন্যা আমাকে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের কৃষক কবির সারোয়ার সুজন বলেন, ৪০ বছর ধরে মাছচাষ করে আসছি, সেইসঙ্গে ধানও। কখনো ভাবতে পারিনি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ফুলপুর উপজেলার সিংহেস্বর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ধানের জমি ও সবজির ক্ষেত সবই নষ্ট হয়ে গেছে। কী খাইয়া বাঁচবো জানি না। সরকার আমাদের দিকে নজর না দিলে আর কোনো উপায় থাকবে না
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ধোবাউড়ায় ধান ১০ হাজার ৫৬০ হেক্টর, সবজি হেক্টর ১৮ হেক্টর, হালুয়াঘাটে ধান ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর, সবজি ৪৫ হেক্টর ও ফুলপুরে ৩ হাজার ৮৯৩ হেক্টর ধান ও ৪৫ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ধোবউড়ায় ধানে ১৩৪ কোটি ৭৫ লাখ, সবজিতে ১ কোটি ৮ লাখ, হালুয়াঘাট ধানে ১৩১ কোটি ৫৬ লাখ, সবজিতে ২ কোটি ৭০ লাখ ও ফুলপুরে ধানে ৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ও সবজিতে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধান ও সবজি মিলিয়ে তিন উপজেলায় মোট ৩২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, তিন উপজেলায় ১ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণের জন্য স্ব স্ব বিভাগে চিঠি দেওয়া আছে।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের সহযোগিতার লক্ষ্যে পরামর্শের পাশাপাশি সহযোগিতা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।