ঢাকা ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরিষা চাষ শীর্ষে মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৯ বার

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। প্রকৃতি সেজেছে হলুদ বর্ণের অপরূপ সাজে। শীতের সোনাঝরা রোদে মাঠজুড়ে যেন ঝিকিমিকি করছে হলুদ ফুলের সমারোহ। সাঁঝের বেলায় পশ্চিমাকাশের নরম রোদে সরিষার ফুলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। দিগন্ত জুড়ে হলুদ ফুলের হাতছানি। ফুল যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে মৌমাছিকে, এসো পান কর মধু, বিলিয়ে দাও জনতার মাঝে। প্রজাপতির দল ছুটে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। মৌমাছির গুঞ্জরণে মুখরিত সরিষার বিস্তীর্ণ মাঠ। প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে হলুদ-সবুজের মিতালি সরিষা খেতে। এ বছর সরিষার ভালো ফলনে কৃষকদের মুখেও রাঙা হাসি। সিরাজগঞ্জের বৃহত্তর চলনবিল সহ গ্রামগঞ্জে ফসলের মাঠে-মাঠে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ।
মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি-নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা খেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁপিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। হাত-পা-শুঁড়গুলো ফুলের সঙ্গে গেঁথে এক-অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে চলে যায় আপন নীড়ে। একইসঙ্গে সরিষা খেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও। অন্যদিকে সরিষা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। এতে বাড়ছে পর্যটন সম্ভাবনা। স্থানীয় দোকানপাটে বেড়েছে বিক্রি। ফলে লাভবান হচ্ছেন তারাও।
দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। ফলে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জে সরিষা আবাদ ভালো হওয়ায় এ জেলায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন চলছে সরিষা আবাদ। সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
ধান কাটা শেষে, যমুনা পাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জের কৃষকরা শুরু করেছেন সরিষার চাষ। কৃষকরা বলছেন, বারি-১৪, বারি-১৭ ও বিনা-৯ আধুনিক জাতের সরিষা চাষ হয় এ অঞ্চলে। এতে শুধু তেলের চাহিদাই নয়, গো-খাদ্যের খৈলের চাহিদাও পূরণ হয়। সেইসঙ্গে জ্বালানি ও মধু সংগ্রহ করেও সচল থাকছে সংসারের চাকা। সরিষা খেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটোছুটি করে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন বই হাতে ও স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মনে হয় তারা হলুদের রাজ্যে মিশে গেছে। আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সরিষা ফুল ছেঁড়া নিয়ে ভাই-বোনের খুনসুটিও বেশ চোখে পড়ে। ওই রাস্তাগুলো ব্যবহার করতে ভুলে না গ্রামের মেয়ে-বউসহ নানা বয়সী মানুষ। ওই পথ দিয়েই মাথায় বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোন এক মুরব্বি।

শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা। সরিষার দানা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও সরিষার দানা পানির সঙ্গে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা শর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা গাছগুলো সবুজ ও ফুলগুলো হলুদ রঙের। উল্লেখ্য, এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৯ হাজার হেক্টর বেশি। মূলত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণেই সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রম আর আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামেও দিগন্ত বিস্তৃত  মাঠজুড়ে হয়েছে সরিষার আবাদ। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ছেয়ে গেছে সমস্ত অঞ্চল। হলুদ ফুলের রঙে ভরে উঠেছে মাঠ আর মাঠ। নয়ন জুড়ানো দৃশ্যে মেতে উঠেছে কৃষকের ফসলের মাঠ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে উঠেছে সমস্ত অঞ্চল। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর চর-দ্বীপচরের প্রতিটি অঞ্চলে  হয়েছে সরিষার আবাদ। মৌমাছিতে ভরে গেছে সমস্ত সরিষার খেত। মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করছে এখানে। কুড়িগ্রাম জেলায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত বছর জেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকরা আমন আবাদ ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল।

কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কৃষকের সরিষা খেত দেখে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা আশা করছেন সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়াসহ সরিষার ভালো দামের আশাও করছেন। সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কৃষক সৈয়দ আলী (৭২), চাকিরপাশা ইউনিয়নের বাবলু চন্দ্র, ভোগডঙ্গার মাঠের পারের আবদুল মালেক (৪৩) জানান, বন্যার কারণে সরিষার আবাদ একটু দেরিতে হয়েছে। তবে বাম্পার ফলন হয়েছে। সরিষার দাম পাওয়া গেলে তারা  লাভবান হবে। প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হবে। আর সরিষার চাহিদা থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে এখানে ৪শ ৫টি চর-দ্বীপচরে এবার ব্যাপক সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার পাশাপাশি মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা।

স্থানীয় কৃষিবিদরা বলছেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ টন মধু সংগ্রহ করবে মৌচাষিরা। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর ৯ উপজেলার বিভিন্ন চর-দ্বীপচর সহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে চাষিরা সরিষার চাষাবাদ করেছে। সরিষা চাষাবাদের জন্য ২২ হাজার ৯০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষি বিভাগ কর্তৃক সবসময় কৃষকের মাঠে-মাঠে গিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি চাষিরা সরিষা চাষে লাভবান হবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সরিষা চাষ শীর্ষে মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ

আপডেট টাইম : ০১:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। প্রকৃতি সেজেছে হলুদ বর্ণের অপরূপ সাজে। শীতের সোনাঝরা রোদে মাঠজুড়ে যেন ঝিকিমিকি করছে হলুদ ফুলের সমারোহ। সাঁঝের বেলায় পশ্চিমাকাশের নরম রোদে সরিষার ফুলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। দিগন্ত জুড়ে হলুদ ফুলের হাতছানি। ফুল যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে মৌমাছিকে, এসো পান কর মধু, বিলিয়ে দাও জনতার মাঝে। প্রজাপতির দল ছুটে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। মৌমাছির গুঞ্জরণে মুখরিত সরিষার বিস্তীর্ণ মাঠ। প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে হলুদ-সবুজের মিতালি সরিষা খেতে। এ বছর সরিষার ভালো ফলনে কৃষকদের মুখেও রাঙা হাসি। সিরাজগঞ্জের বৃহত্তর চলনবিল সহ গ্রামগঞ্জে ফসলের মাঠে-মাঠে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ।
মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি-নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা খেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁপিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। হাত-পা-শুঁড়গুলো ফুলের সঙ্গে গেঁথে এক-অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে চলে যায় আপন নীড়ে। একইসঙ্গে সরিষা খেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও। অন্যদিকে সরিষা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। এতে বাড়ছে পর্যটন সম্ভাবনা। স্থানীয় দোকানপাটে বেড়েছে বিক্রি। ফলে লাভবান হচ্ছেন তারাও।
দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। ফলে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জে সরিষা আবাদ ভালো হওয়ায় এ জেলায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন চলছে সরিষা আবাদ। সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
ধান কাটা শেষে, যমুনা পাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জের কৃষকরা শুরু করেছেন সরিষার চাষ। কৃষকরা বলছেন, বারি-১৪, বারি-১৭ ও বিনা-৯ আধুনিক জাতের সরিষা চাষ হয় এ অঞ্চলে। এতে শুধু তেলের চাহিদাই নয়, গো-খাদ্যের খৈলের চাহিদাও পূরণ হয়। সেইসঙ্গে জ্বালানি ও মধু সংগ্রহ করেও সচল থাকছে সংসারের চাকা। সরিষা খেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটোছুটি করে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন বই হাতে ও স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মনে হয় তারা হলুদের রাজ্যে মিশে গেছে। আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সরিষা ফুল ছেঁড়া নিয়ে ভাই-বোনের খুনসুটিও বেশ চোখে পড়ে। ওই রাস্তাগুলো ব্যবহার করতে ভুলে না গ্রামের মেয়ে-বউসহ নানা বয়সী মানুষ। ওই পথ দিয়েই মাথায় বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোন এক মুরব্বি।

শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা। সরিষার দানা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও সরিষার দানা পানির সঙ্গে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা শর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা গাছগুলো সবুজ ও ফুলগুলো হলুদ রঙের। উল্লেখ্য, এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৯ হাজার হেক্টর বেশি। মূলত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণেই সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রম আর আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামেও দিগন্ত বিস্তৃত  মাঠজুড়ে হয়েছে সরিষার আবাদ। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ছেয়ে গেছে সমস্ত অঞ্চল। হলুদ ফুলের রঙে ভরে উঠেছে মাঠ আর মাঠ। নয়ন জুড়ানো দৃশ্যে মেতে উঠেছে কৃষকের ফসলের মাঠ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে উঠেছে সমস্ত অঞ্চল। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর চর-দ্বীপচরের প্রতিটি অঞ্চলে  হয়েছে সরিষার আবাদ। মৌমাছিতে ভরে গেছে সমস্ত সরিষার খেত। মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করছে এখানে। কুড়িগ্রাম জেলায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত বছর জেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকরা আমন আবাদ ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল।

কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কৃষকের সরিষা খেত দেখে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা আশা করছেন সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়াসহ সরিষার ভালো দামের আশাও করছেন। সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কৃষক সৈয়দ আলী (৭২), চাকিরপাশা ইউনিয়নের বাবলু চন্দ্র, ভোগডঙ্গার মাঠের পারের আবদুল মালেক (৪৩) জানান, বন্যার কারণে সরিষার আবাদ একটু দেরিতে হয়েছে। তবে বাম্পার ফলন হয়েছে। সরিষার দাম পাওয়া গেলে তারা  লাভবান হবে। প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হবে। আর সরিষার চাহিদা থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে এখানে ৪শ ৫টি চর-দ্বীপচরে এবার ব্যাপক সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার পাশাপাশি মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা।

স্থানীয় কৃষিবিদরা বলছেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ টন মধু সংগ্রহ করবে মৌচাষিরা। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর ৯ উপজেলার বিভিন্ন চর-দ্বীপচর সহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে চাষিরা সরিষার চাষাবাদ করেছে। সরিষা চাষাবাদের জন্য ২২ হাজার ৯০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষি বিভাগ কর্তৃক সবসময় কৃষকের মাঠে-মাঠে গিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি চাষিরা সরিষা চাষে লাভবান হবেন।