ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪০:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • ৬ বার

রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তি ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের শর্ত হিসেবে একটি দাবি-দাওয়ার তালিকা দিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাতে এই তথ্য জানা গেছে। মস্কো এই তালিকায় কী কী অন্তর্ভুক্ত করেছে বা শর্তগুলো মেনে নেওয়ার আগেই তারা কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি কি না—তা স্পষ্ট নয়। ওই দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত তিন সপ্তাহে রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তারা সরাসরি ও ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সূত্র দুটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, ক্রেমলিনের শর্তগুলো বেশ বিস্তৃত এবং পূর্বে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে উপস্থাপিত দাবিগুলোর মতোই।

এর আগে, রাশিয়া দাবি করেছিল—ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে না, দেশটিতে কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েন করা যাবে না এবং ক্রিমিয়া ও আরও চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে অবশ্যই যুদ্ধের ‘মূল কারণসমূহ’ সমাধান করতে হবে। এর মধ্যে একটি মূল কারণ হলো—ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পুতিনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছেন যে, তিনি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন কি না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি এটিকে শান্তি আলোচনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মেনে নেবেন।

পুতিন এই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত এবং এর বিস্তারিত শর্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা ও বিশ্লেষকের আশঙ্কা, সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিন এই যুদ্ধবিরতিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং আলোচনাকে ব্যাহত করতে পারেন।

কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিকে একটি বৃহত্তর শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

গত দুই দশকে রাশিয়া এ ধরনের অনেক দাবি উত্থাপন করেছে এবং এর কিছু দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাতেও স্থান পেয়েছে। সর্বশেষ, ২০২১ সালের শেষ ও ২০২২ সালের শুরুতে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মস্কো এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছিল। সে সময় কয়েক হাজার রুশ সেনা ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান করছিল, আক্রমণের নির্দেশের অপেক্ষায়।

রাশিয়া তখন যে দাবি করেছিল, তার মধ্যে ছিল পূর্ব ইউরোপ থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক কার্যক্রম সীমিত করা। বাইডেন প্রশাসন কিছু শর্ত প্রত্যাখ্যান করলেও, যুদ্ধ ঠেকানোর প্রচেষ্টায় কয়েকটি বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে আলোচনা করা একটি খসড়া চুক্তি শান্তি আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেই চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়নি। ওই আলোচনায় রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদের আশা ত্যাগ করতে হবে এবং স্থায়ীভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত রাষ্ট্র হতে হবে। এ ছাড়া, ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর ওপর রাশিয়া ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর সঙ্গে চলমান আলোচনা কীভাবে পরিচালনা করছে, সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুটি পৃথক আলোচনায় যুক্ত—একটি মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে, অন্যটি ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির বিষয়ে। তবে প্রশাসনের অভ্যন্তরেই এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত মাসে সিএনএনকে তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল আলোচনাগুলো ছিল ‘যুক্তিসংগত ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা’ এবং তা ‘শান্তি চুক্তির পথপ্রদর্শক হতে পারে।’

কিন্তু ট্রাম্পের শীর্ষ ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক দূত জেনারেল (অব.) কিথ কেলোগ সম্প্রতি কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি ইস্তাম্বুল চুক্তিকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে দেখেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি করতে হবে।’

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাশিয়ার এসব দাবি শুধু ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি গঠনের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং পশ্চিমা সমর্থকদের সঙ্গেও সমঝোতার ভিত্তি তৈরি করতেই করা হচ্ছে। গত দুই দশক ধরে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একই ধরনের দাবি জানিয়ে আসছে—যা পশ্চিমাদের ইউরোপে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি তৈরির সক্ষমতাকে সীমিত করবে এবং সম্ভবত পুতিনের প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায় রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করা স্টেন্ট বলেন, ‘তাদের দাবিগুলো মোটেও পরিবর্তিত হয়নি। আমি মনে করি, তারা প্রকৃতপক্ষে শান্তি বা অর্থবহ যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, রাশিয়ার আগ্রাসন আসন্ন বলে মনে করা হয়েছিল। তা প্রতিহত করতে বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্রেমলিনের তিনটি দাবির বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন।

এই দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—ন্যাটোর নতুন সদস্য দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক মহড়া নিষিদ্ধ করা, ইউরোপ বা রাশিয়ার সীমানার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ককেশাস ও মধ্য এশিয়া পর্যন্ত মার্কিন ও ন্যাটো সামরিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক ও পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা কোরি শাকে বলেন, ‘এগুলো সেই পুরোনো রুশ দাবি, যা ১৯৪৫ সাল থেকেই চলে আসছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যক্রম দেখে ইউরোপীয়রা শুধু ভয় পাচ্ছে যে আমরা তাদের পরিত্যাগ করছি, বরং তারা আশঙ্কা করছে যে আমরা শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন

আপডেট টাইম : ১১:৪০:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তি ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের শর্ত হিসেবে একটি দাবি-দাওয়ার তালিকা দিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাতে এই তথ্য জানা গেছে। মস্কো এই তালিকায় কী কী অন্তর্ভুক্ত করেছে বা শর্তগুলো মেনে নেওয়ার আগেই তারা কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি কি না—তা স্পষ্ট নয়। ওই দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত তিন সপ্তাহে রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তারা সরাসরি ও ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সূত্র দুটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, ক্রেমলিনের শর্তগুলো বেশ বিস্তৃত এবং পূর্বে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে উপস্থাপিত দাবিগুলোর মতোই।

এর আগে, রাশিয়া দাবি করেছিল—ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে না, দেশটিতে কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েন করা যাবে না এবং ক্রিমিয়া ও আরও চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে অবশ্যই যুদ্ধের ‘মূল কারণসমূহ’ সমাধান করতে হবে। এর মধ্যে একটি মূল কারণ হলো—ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পুতিনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছেন যে, তিনি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন কি না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি এটিকে শান্তি আলোচনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মেনে নেবেন।

পুতিন এই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত এবং এর বিস্তারিত শর্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা ও বিশ্লেষকের আশঙ্কা, সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিন এই যুদ্ধবিরতিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং আলোচনাকে ব্যাহত করতে পারেন।

কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিকে একটি বৃহত্তর শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

গত দুই দশকে রাশিয়া এ ধরনের অনেক দাবি উত্থাপন করেছে এবং এর কিছু দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাতেও স্থান পেয়েছে। সর্বশেষ, ২০২১ সালের শেষ ও ২০২২ সালের শুরুতে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মস্কো এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছিল। সে সময় কয়েক হাজার রুশ সেনা ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান করছিল, আক্রমণের নির্দেশের অপেক্ষায়।

রাশিয়া তখন যে দাবি করেছিল, তার মধ্যে ছিল পূর্ব ইউরোপ থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক কার্যক্রম সীমিত করা। বাইডেন প্রশাসন কিছু শর্ত প্রত্যাখ্যান করলেও, যুদ্ধ ঠেকানোর প্রচেষ্টায় কয়েকটি বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে আলোচনা করা একটি খসড়া চুক্তি শান্তি আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেই চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়নি। ওই আলোচনায় রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদের আশা ত্যাগ করতে হবে এবং স্থায়ীভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত রাষ্ট্র হতে হবে। এ ছাড়া, ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর ওপর রাশিয়া ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর সঙ্গে চলমান আলোচনা কীভাবে পরিচালনা করছে, সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুটি পৃথক আলোচনায় যুক্ত—একটি মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে, অন্যটি ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির বিষয়ে। তবে প্রশাসনের অভ্যন্তরেই এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত মাসে সিএনএনকে তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল আলোচনাগুলো ছিল ‘যুক্তিসংগত ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা’ এবং তা ‘শান্তি চুক্তির পথপ্রদর্শক হতে পারে।’

কিন্তু ট্রাম্পের শীর্ষ ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক দূত জেনারেল (অব.) কিথ কেলোগ সম্প্রতি কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি ইস্তাম্বুল চুক্তিকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে দেখেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি করতে হবে।’

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাশিয়ার এসব দাবি শুধু ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি গঠনের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং পশ্চিমা সমর্থকদের সঙ্গেও সমঝোতার ভিত্তি তৈরি করতেই করা হচ্ছে। গত দুই দশক ধরে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একই ধরনের দাবি জানিয়ে আসছে—যা পশ্চিমাদের ইউরোপে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি তৈরির সক্ষমতাকে সীমিত করবে এবং সম্ভবত পুতিনের প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায় রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করা স্টেন্ট বলেন, ‘তাদের দাবিগুলো মোটেও পরিবর্তিত হয়নি। আমি মনে করি, তারা প্রকৃতপক্ষে শান্তি বা অর্থবহ যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, রাশিয়ার আগ্রাসন আসন্ন বলে মনে করা হয়েছিল। তা প্রতিহত করতে বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্রেমলিনের তিনটি দাবির বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন।

এই দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—ন্যাটোর নতুন সদস্য দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক মহড়া নিষিদ্ধ করা, ইউরোপ বা রাশিয়ার সীমানার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ককেশাস ও মধ্য এশিয়া পর্যন্ত মার্কিন ও ন্যাটো সামরিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক ও পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা কোরি শাকে বলেন, ‘এগুলো সেই পুরোনো রুশ দাবি, যা ১৯৪৫ সাল থেকেই চলে আসছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যক্রম দেখে ইউরোপীয়রা শুধু ভয় পাচ্ছে যে আমরা তাদের পরিত্যাগ করছি, বরং তারা আশঙ্কা করছে যে আমরা শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি।’