শিম চাষের স্বর্ণভূমি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এবার শিমের উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। জমির আল, খালের পাড়সহ শিম চাষ বাদ যায়নি বেড়িবাঁধ আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশও। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৫০ কোটি টাকার শিম উৎপাদিত হলেও এবার তা বেড়ে হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সীতাকুণ্ডের শিম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারগুলো।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে ল্যাইটা, বাইট্যা, পুঁটি, ছুরি, কার্তি কোটা ও কার্তিক বাটা—এই সাত জাতের শিম উৎপাদিত হয়েছে। তবে এদের মধ্যে ল্যাইটা শিমের ফলন বেশি হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টরে ৩০ টন হিসেবে মোট উৎপাদন ৯০ হাজার টন ছাড়িয়েছে।
উপজেলার পাঁচ হাজারের বেশি কৃষক শিম চাষে নিয়োজিত। উপজেলার উত্তরের নুনাছড়া থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত সর্বাধিক শিম উৎপাদিত হয়। পাশাপাশি, পাহাড়ি এলাকা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে অতিরিক্ত ৫ হাজার টন শিম উৎপাদিত হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, সীতাকুণ্ডের শিম স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাইকারেরা জমি থেকেই শিম কিনে নিয়ে যান, ফলে কৃষকদের পরিবহন খরচ বাঁচে। এতে তাঁরাও যেমন ন্যায্য দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বিদেশে রপ্তানির কারণে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।
পৌর সদরের নুনাছড়া এলাকার কৃষক নুরুন্নবী জানান, ১৫০ শতক জমিতে শিম চাষে তাঁর ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তাঁর জমিতে আগাম শিম উৎপাদিত হয়, তা বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন এবং মৌসুম শেষে আরও দেড় লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।
হাতিলোটা এলাকার কৃষক মোহাম্মদ লোকমান হোসেন জানান, ১০০ শতক জমিতে শিম চাষ করে খরচ বাদে তিনি লক্ষাধিক টাকা লাভ করেছেন। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, শীত মৌসুমে সীতাকুণ্ডের প্রতিটি কৃষিজমিতে শিমের সমারোহ দেখা যায়। কৃষকেরা জমি থেকেই শিম বিক্রি করতে পারেন, ফলে তাঁরা সহজেই ন্যায্যমূল্য পান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, গত বছর সীতাকুণ্ডে ৭০ হাজার টন শিম উৎপাদিত হয়েছিল, যা এবার বেড়ে ৯০ হাজার টনে পৌঁছেছে। কৃষকদের উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ দেওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।