হাওরের বুকে নদীর পাড় দিয়ে চলবে গাড়ি

জাকির হোসাইনঃ কিশোরগঞ্জ জেলার ৭টি উপজেলা নিকলী, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, কুলিয়ারচর, ইটনা, বাজিতপুর ও করিমগঞ্জ নিয়ে বিস্তীর্ণ সমুদ্রসমান হাওরাঞ্চল। এ বিশাল জলরাশির বুকের ওপর দিয়ে নির্মিত উঁচু পাকা সড়ক দিয়ে সারা বছর এখন চলবে গাড়ি। সে লক্ষ্যে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে সেতু। সেতুটির নির্মাণ শেষ হলেই হাওর থেকে সরাসরি বাস যাবে রাজধানীসহ সারা দেশে। হাওর বার্তা রির্পোতে ধারণা, এতে বদলে যাচ্ছে অবহেলিত হাওরবাসীর জীবনযাত্রা।

যারা সারাজীবন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যেতে বাহন হিসেবে ব্যবহার করত লঞ্চ আর নৌকা। যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করত নৌযানের জন্য আর জেলা সদরে পৌঁছতে সময় লাগত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। তারা দেখবে এবার নৌকার পথে পাকা সড়ক ধরে কীভাবে বাস যায় হাওরে। দ্বীপের মতো এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে এবার যাতায়াতের মাধ্যম হবে লাক্সারি বাস। এবার আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা মনে ভীতি নিয়ে বসে থাকতে হবে না নৌকা বা লঞ্চের আশায়। অল্প সময়েই হাওরবাসী পৌঁছতে পারবে যার যার গন্তব্যে।

প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জের জেলা সদরের সঙ্গে মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি উঁচু ও ডুবোসড়কের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এসব সড়ক নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে। পাশাপাশি হাওর ঘিরে সৃষ্টি হতে পারে পর্যটনশিল্পের অপ রুপ সম্ভাবনা। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা হলে সরকারও পেতে পারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত হাওরে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক ছিল।

এ নিয়ে এলাকায় একটি প্রবাদও চালু ছিল ‘বর্ষায় নাও (নৌকা) আর শুকনোয় পাও (পা)।’ আর এটি কেবল প্রবাদ নয়, বাস্তবেও তাই। কারণ বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের প্রধান বাহন নৌকা। শুকনো মৌসুমে তাদের হেঁটেই সে এলাকায় চলাচল করতে হতো। এ কারণে হাওরের মাছ ও এলাকার একমাত্র কৃষিপণ্য ধানের দাম অনেকটাই কম ছিল। এছাড়া নারী ও শিশু মৃত্যুর পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। এ অবস্থায় হাওরবাসীর বিড়ম্বনার শেষ থাকত না। এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অবহেলিত হাওরের যোগাযোগ উন্নয়নে যে কয়েকটি সড়কের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে।

ইটনা, মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক। সম্ভাব্য ২৮ কিলোমিটার ডুবোসড়ক ও সাড়ে সাত কিলোমিটার উঁচু সড়ক রয়েছে আরো হচ্ছে। সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য তিনটি ব্রিজ নির্মাণ ও দুইটি ফেরি সার্ভিস হচ্ছে। এরই মধ্যে এ সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে হাওর বার্তা রির্পোতে জানা গেছে। এছাড়া মিঠামইনের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগের জন্য ৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ, বালিকলা-মিঠামইন সড়ক নির্মিত হচ্ছে।

৬ কিলোমিটার উঁচু সড়ক ও ৭.২ কিলোমিটার ডুবোসড়কের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এতে তিনটি নদীতে ফেরি সার্ভিস থাকছে। আরেকটি বড় সড়ক হচ্ছে ইটনা-বড়াইবাড়ি-চামড়াঘাট সড়ক। ১০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার ডুবোসড়ক ও ৪.১ কিলোমিটার উঁচু সড়কের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ সড়কে থাকছে তিনটি সেতু ও তিনটি ফেরি সার্ভিস। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি চামড়াঘাটে এনে রাখা হয়েছে। এছাড়া নিকলী সদর থেকে শহরমূল হয়ে বড় হাওরের ভেতর দিয়ে করিমগঞ্জের গুণধর পর্যন্ত ১০.৫ কিলোমিটার উঁচু সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। এতে প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রকল্পের অধীনে নিকলীর সুয়াইজনী নদীতে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া হাওরের ইউনিয়ন ও উপজেলা যোগাযোগ স্থাপনে ৪৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বদলে যাবে হাওরের জীবনযাত্রার মান। অবসান হবে হাওরবাসীর যোগাযোগ দুর্ভোগ।

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কিশোরগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের বাজিতপুর উপজেলার দিঘিরপাড় থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। তিনটি সেতু নির্মাণও শেষ পর্যায়ে। কিছু দিনের মধ্যেই বাজিতপুরে ঘোড়াউত্রা নদীর দিঘিরপাড় এলাকায় কয়েকটি ফেরি বসানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, হাওরের যোগাযোগ উন্নয়নে প্রথমে ডুবোসড়ক ও উঁচু সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। অবহেলিত হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে কেবল হাওরবাসী নয়, সারা দেশের মানুষ এর সুফল পাবে বলে তিনি জানান।

সূত্রঃ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপির ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর