ঢাকা ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃদ্ধাশ্রমে আছি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:২৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০২২
  • ১৬৯ বার

ড. গোলসান আরা বেগম

আমি কোথায় আছি কেমন আছি
যদি জানতে চাও
আমি ভালো আছি বৃদ্ধাশ্রমে আছি
যদি পারো দেখে যাও।

বিশ্বাস হয় না ভালো জীবন এখানে
সত্যি বলছি তো
নিজের মতো আছি ভালোভাবে আছি
বেশ আছি তো।

ইচ্ছে করেই এ জীবন বেছে নিয়েছি
স্বাধীনতায় বেঁচে আছি
নিবাসের অন্যদের সাথে থাকতে থাকতে
অজান্তেই ভালোবেসেছি।

সময় পেলে গল্প করি ঘুরাঘুরি করি
এরাই আমার আপন
চিন্তা নাই কারো জন্য ভাবনা নাই
ফুর ফুরে জীবন এখন।

ইচ্ছে হলে পুরানো দিনের গান শুনি
কবিতা আবৃতি করি
আকাশের তারা গুনি হারিয়ে যাই
চাঁদের পিঠে ছড়ে।

মনে কোন কষ্ট নাই যা যখন চাই
হাতের কাছে পাই
সময় মেপে ঔষধ খাই প্রেশার মাপি
ঘুমিয়ে যাই।

কে বলে বৃদ্ধাশ্রমে সুখ শান্তি নাই
প্রত্যাশার অধিক আছে
দরজা জানালায় প্রতিটি ধূলিকণায়
চাওয়া পাওয়ার পিছে।

জানতে চান কেন আছি বৃদ্ধাশ্রমে
সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি
স্বামী হারানোর পর একাকিত্ব তাড়াতে
সেই থেকে আছি।

দিন গুনে সময় পেরিয়ে গেছে অনেক
পাঁচ বছর আছি
জানি না কত দিন থাকবো বৃদ্ধাশ্রমে
থাকবো আমি বাঁচি।

বড় ছেলে বিদেশে ছোট ছেলে দেশে
তারা ভালো আছে
মায়ের হাতের দুধ ভাত খেতে চাইতো
দৌড়াতো আমার পিছে।

ছোট ছেলে চায়নি রাখতে বৃদ্ধাশ্রমে
করেছে কত মিনতি
আমাদের সাথে থাকলে হতো কি
কার কি ক্ষতি।

বউ মা অফিস করে সংসার সামলায়
বাচ্চার আদার যতন
একাই হয় পেরেশানি ব্যস্ত তার জীবন
ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা এখন।

আমার জন্য খানিক সময় নেই তাদের
বুঝতে পারি আমি
সুখে ভরপুর সাজানো সংসার ছেড়ে
বৃদ্ধাশ্রমে থামি।

কারো বোজা অবহেলায় বাঁচতে চাইনি
হউক আমার সন্তান
দেবো না তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সুযোগ
দেহে থাকতে প্রাণ।

চুনের কৌঠা শাড়ি ব্লাউজ যা ছিলো
আরো কত কিছু
রেখে এসেছি। সাজিয়েছি সুখ শয্যা
মাথা করে উচু।

সুস্থ্য দেহে বেঁচে থাকাটাই বেশী জরুরী
যে দিন জেনেছি
অর্থ বিত্ত কিচ্ছু আমার না।মাথা থেকে
ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি।

হাতে পায়ে থাকতে শক্তি।মাথায় বুদ্ধি
বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই নিয়েছি
স্বজন আত্মীয় সোনার বৈঠা সুখের নাও
ছেড়ে এসেছি।

মনে পড়ে কত কথা স্বপ্ন ছিলো চোখে
দিন চলে যায়
কি পেলাম কি হারালাম তার নতি খতি
রাখিনি খাতায়।

জঠরে সুগন্ধি ফুল ফুটাতে ভুল করিনি
ছিলাম দায়বদ্ধ
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অবিরত কতো
করেছি যুদ্ধ।

হেরে যাইনি ক্লান্ত হইনি হাত পা এগিয়ে
কুড়িয়েছি সফলতা
ভেঙ্গে পাথর গড়েছি সোনার সংসার
মনে পড়ে সে কথা।

চোখের সামনে কতো ছায়া চিত্র ভাসে
ভাসে গাঢ় অন্ধকার
বুঝে গেছি সময় ফুরিয়েছে।নেই কারো
আমাকে আর দরকার।

এসেছিলাম খালি হাতে।যাবোও সেভাবে
কেউ সঙ্গী হবে না
বৃদ্ধাশ্রমের পর স্থায়ী ঠিকানা হবে আমার
মাটির বিছানা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বৃদ্ধাশ্রমে আছি

আপডেট টাইম : ০৫:২৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০২২

ড. গোলসান আরা বেগম

আমি কোথায় আছি কেমন আছি
যদি জানতে চাও
আমি ভালো আছি বৃদ্ধাশ্রমে আছি
যদি পারো দেখে যাও।

বিশ্বাস হয় না ভালো জীবন এখানে
সত্যি বলছি তো
নিজের মতো আছি ভালোভাবে আছি
বেশ আছি তো।

ইচ্ছে করেই এ জীবন বেছে নিয়েছি
স্বাধীনতায় বেঁচে আছি
নিবাসের অন্যদের সাথে থাকতে থাকতে
অজান্তেই ভালোবেসেছি।

সময় পেলে গল্প করি ঘুরাঘুরি করি
এরাই আমার আপন
চিন্তা নাই কারো জন্য ভাবনা নাই
ফুর ফুরে জীবন এখন।

ইচ্ছে হলে পুরানো দিনের গান শুনি
কবিতা আবৃতি করি
আকাশের তারা গুনি হারিয়ে যাই
চাঁদের পিঠে ছড়ে।

মনে কোন কষ্ট নাই যা যখন চাই
হাতের কাছে পাই
সময় মেপে ঔষধ খাই প্রেশার মাপি
ঘুমিয়ে যাই।

কে বলে বৃদ্ধাশ্রমে সুখ শান্তি নাই
প্রত্যাশার অধিক আছে
দরজা জানালায় প্রতিটি ধূলিকণায়
চাওয়া পাওয়ার পিছে।

জানতে চান কেন আছি বৃদ্ধাশ্রমে
সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি
স্বামী হারানোর পর একাকিত্ব তাড়াতে
সেই থেকে আছি।

দিন গুনে সময় পেরিয়ে গেছে অনেক
পাঁচ বছর আছি
জানি না কত দিন থাকবো বৃদ্ধাশ্রমে
থাকবো আমি বাঁচি।

বড় ছেলে বিদেশে ছোট ছেলে দেশে
তারা ভালো আছে
মায়ের হাতের দুধ ভাত খেতে চাইতো
দৌড়াতো আমার পিছে।

ছোট ছেলে চায়নি রাখতে বৃদ্ধাশ্রমে
করেছে কত মিনতি
আমাদের সাথে থাকলে হতো কি
কার কি ক্ষতি।

বউ মা অফিস করে সংসার সামলায়
বাচ্চার আদার যতন
একাই হয় পেরেশানি ব্যস্ত তার জীবন
ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা এখন।

আমার জন্য খানিক সময় নেই তাদের
বুঝতে পারি আমি
সুখে ভরপুর সাজানো সংসার ছেড়ে
বৃদ্ধাশ্রমে থামি।

কারো বোজা অবহেলায় বাঁচতে চাইনি
হউক আমার সন্তান
দেবো না তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সুযোগ
দেহে থাকতে প্রাণ।

চুনের কৌঠা শাড়ি ব্লাউজ যা ছিলো
আরো কত কিছু
রেখে এসেছি। সাজিয়েছি সুখ শয্যা
মাথা করে উচু।

সুস্থ্য দেহে বেঁচে থাকাটাই বেশী জরুরী
যে দিন জেনেছি
অর্থ বিত্ত কিচ্ছু আমার না।মাথা থেকে
ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি।

হাতে পায়ে থাকতে শক্তি।মাথায় বুদ্ধি
বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই নিয়েছি
স্বজন আত্মীয় সোনার বৈঠা সুখের নাও
ছেড়ে এসেছি।

মনে পড়ে কত কথা স্বপ্ন ছিলো চোখে
দিন চলে যায়
কি পেলাম কি হারালাম তার নতি খতি
রাখিনি খাতায়।

জঠরে সুগন্ধি ফুল ফুটাতে ভুল করিনি
ছিলাম দায়বদ্ধ
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অবিরত কতো
করেছি যুদ্ধ।

হেরে যাইনি ক্লান্ত হইনি হাত পা এগিয়ে
কুড়িয়েছি সফলতা
ভেঙ্গে পাথর গড়েছি সোনার সংসার
মনে পড়ে সে কথা।

চোখের সামনে কতো ছায়া চিত্র ভাসে
ভাসে গাঢ় অন্ধকার
বুঝে গেছি সময় ফুরিয়েছে।নেই কারো
আমাকে আর দরকার।

এসেছিলাম খালি হাতে।যাবোও সেভাবে
কেউ সঙ্গী হবে না
বৃদ্ধাশ্রমের পর স্থায়ী ঠিকানা হবে আমার
মাটির বিছানা।