মেহেরপুরে ধান, গম, আলু, ভুট্টা ও নানা রকম সবজি চাষের পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ফল বাগান করেও সফল হচ্ছেন চাষিরা। ফলের মধ্যে রয়েছে, চায়না কমলা, মাল্টা ও ড্রাগন ফল। ফল বাগান করে লাভবান হওয়ায় সবজি চাষের পাশাপাশি অনেকেই এখন ঝুঁকছেন বিদেশি বিভিন্ন ফলের বাগান করতে।
মেহেরপুর জেলায় বিভিন্ন চায়না কমলা, মাল্টা বাগান ঘুরে জানা গেছে, বাগান মালিকদের সফলতার গল্প। বাগানের প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কমলা। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা দিচ্ছে হলুদ ও সবুজ রংয়ের কমলা। কমলার ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। বাতাসে ছড়াচ্ছে কমলার সুস্বাদু ঘ্রাণ। বাগান দেখতে ও কমলা কিনতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ক্রেতারা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের বাগান মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে চারা রোপণ করি। ২০২৩ সালে প্রথম ফল আসে গাছে। এ বছর প্রচুর ফল হয়েছে। আশা করি ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারব।
গাংনী উপজেলা কসবা গ্রামের নুরুজ্জামান রুবেল নামের এক যুবক প্রথমে দশ কাঠা জমিতে কমলা ও মাল্টা বাগান করেন। গাছে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় পরে সাড়ে সাত বিঘা জমিতে কমলা ও আড়াই বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান করেছেন। চারা রোপণের প্রায় চার বছরের মাথায় দেড় বিঘা জমির মাল্টা তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। দুই বছরের মাথায় অল্প ফল ধরলেও এ বছর পুরোপুরি সফলতা আসে। বর্তমানে যে পরিমাণ কমলা আছে তা প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশাবাদী এই তরুণ। তার বাগানে রয়েছে চায়না, দার্জিলিং ও মেন্ডারিং জাতের কমলা ও মাল্টা এবং পেয়ারা।
বাগান দেখতে আসা সজিব বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় সাধারণত চায়না কমলার ফলন ভালো হয় না। কিন্তু আমাদের সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে রুবেল ভাই। বাগানে প্রতিটি গাছে কমলার ফলন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি।
কসবা এলাকার মনিরুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে কমলা হচ্ছে এটা অবাক করার মতো। নিজ দেশে নিজ হাতে কমলা ছিড়ে খাওয়া স্বপ্নের মতো।
বাগান মালিক নুরুজ্জামান রুবেল বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরে একটি বাগান দেখে নিজে বাগান করব সিদ্ধান্ত বলে নেই। জীবন নগরের ওমর ফারুক নামের এক নার্সারি মালিকের কাছ থেকে কমলা ও সাখাওয়াত ভাইয়ের কাছ থেকে মাল্টার চারা নিয়ে প্রথমে ১০ কাঠা শুরু করি। পরে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে বাগান করি। বাগানে তিন জাতের সাড়ে ৭শ গাছ আছে। বাগানের বয়স প্রায় চার বছর হতে চলেছে। এবারই প্রতিটি গাছে প্রত্যাশার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ফল এসেছে। বিঘা প্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বক্রি হবে আশা করছি। তবে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ফল বাগান করতে প্রণোদনা পাওয়া যায় তা দিয়ে আগ্রহীদের ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হলে ফল বাগান আরও বাড়বে।
গাড়াডোব গ্রামের চায়না কমলার বাগান মালিক আকবর আলী বলেন, আমার বাগানের বয়স ৫ বছর। এখন নিয়মিত কমলা বিক্রি করছি। তবে এখানকার চায়না কমলা স্বাদ বেশি টক। আমরা চেষ্টা করছি টক কমিয়ে মিষ্টি করার। তাহলে চাহিদা বাড়বে। কৃষি বিভাগ আমাদের নানা ভাবে সহযোগিতা করছে।
ফল ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গার ইমদাদুল হক,বাদামতলির সুমন পাটোয়ারি জবীননগরের শাহিন আলী বলেন, আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে ফলের পাইকারী ব্যবসা করি। ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম থেকে বিদেশি ফলের ব্যবসা করি। দু বছর থেকে মেহেরপুর থেকে কমলা, চয়না, কমলা ও ড্রাগন ফল কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছি। তবে কমলার যে স্বাদ তাতে মিষ্টির পরিমাণ কম, টক বেশি। কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি টকের পরিমাণ কমিয়ে মিষ্টি করা যায় তাহলে মেহেরপুর জেলাও হবে ফল উৎপাদনের সম্ভাবনাময় জেলা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টার বাগান, ২৫ হেক্টর জমিতে চায়না কমলার বাগান ও ৪৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন বাগানে ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে মেহেরপুর জেলায় ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। আমরা বিভিন্ন কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছি। তবে মেহেরপুর শুধু সবজিতে নয়, ফল উৎপাদনেও বিপ্লব হবে।