২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেছে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। এসব দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এতে দেশে বিদ্যমান নানা ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন উদ্ভট পরিস্থিতি এড়ানোও সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি কোনো অবস্থাতেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হোক, সেটিও চাইছেন না সমমনা দলগুলোর নেতারা। এ ক্ষেত্রে কৌশল ও সংযমের সাথে পথ চলতে চায় দলগুলো। কোনো অবস্থাতেই হঠকারি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে কর্মসূচি পালন করবে সমমনা দল ও জোটগুলো।
গতকাল শনিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সাথে পৃথক বৈঠক করেছে বিএনপি। এ বৈঠকেই এমন মতামত উঠে আসে।
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা বিভিন্ন দল ও
জোট নেতাদের সাথে ধারাবাহিক এই বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি।
ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে বিকাল ৪টায় ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শুরু হয়। এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সাথে পৃথক বৈঠক করে দলটি। এতে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
বৈঠকের পর নজরুল ইসলাম খান জানান, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের নানা সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। এসব জোট ও দলকে নিয়ে বিএনপি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করেছে। সেটার প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক বৈঠকের পর কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা গণমাধ্যমকে পরে জানানো হবে, জানান বিএনপির এই নেতা।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বৈঠকে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আগামী দিনের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছি। কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে এ বিষয়ে জোট নেতাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। সেখানে এসব জোট ও দলের নেতারা অভিন্ন সুরে জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে না। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হবে। এতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হবে।
বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবের ভিন্ন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে নেতারা বলেন, সরকারের মধ্যেই কোনো সমন্বয় নেই। এতে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সরকারের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকা উচিত এবং নির্বাচন ইস্যুকে তাদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত জোট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। চক্রান্তকারীরা যে কোনো উপায়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এমন সময়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাইকে আরও কৌশলী হতে হবে, আরও সংযমি হতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে কোনো বিভক্তি আনা যাবে না। এ সরকারকে নির্বাচন আয়োজনের সময় দিতে হবে। তবে সেটা যৌক্তিক হতে হবে। এটা নিয়ে সরকারের সাথে বিভেদ নয়, আলোচনার টেবিলকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
বৈঠকে যুগপৎ কোনো কর্মসূচির সিদ্ধান্ত না এলেও নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষত, কাউন্সিলরদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে খুব শিগগির কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১২ দলীয় জোট। ১২ দলীয় জোটের পক্ষে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।
বৈঠকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্ব দেন এর সমন্বয়ক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন দলের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান।