দেশের ৪৬০ উপজেলার জন্ম নিয়ন্ত্রণের খাবার বড়ির ভান্ডার শূন্য। আইনি জটিলতা শেষে মোট ৪৫ মিলিয়ন সাইকেল খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একটি প্যাকেজের আওতায় ৫টি লটের মাধ্যমে খাবার বড়িগুলো ক্রয় করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২১৬ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ফ্যামিলি প্ল্যানিং-ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি (এফএসডি) শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের জিওবি (উন্নয়ন) ও আরপিএ (জিওবি) খাতের অর্থায়নে খাবার বড়িগুলো সংগ্রহ করা হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, সরকারি পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে খাবার বড়ি তারমধ্যে অন্যতম। এসব খাবার বড়ি মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রে পাঠানো হবে এবং সেবা প্রদানকারীর (পরিবার কল্যাণ সহকারী) মাধ্যমে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ‘ডোর স্টেপ’ পদ্ধতিতে গ্রহীতার কাছে বিতরণ করা হবে।
৪র্থ এইচপিএনএসপিভুক্ত এফএসডি অপারেশনাল প্ল্যানে জিওবি (উন্নয়ন) খাতে ১২ মিলিয়ন সাইকেল এবং আরপিএ (জিওবি) খাতে ৩৩ মিলিয়ন সাইকেলসহ সর্বমোট ৪৫ মিলিয়ন সাইকেল খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) সংগ্রহের সংস্থান ছিল। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় উক্ত ক্রয়কাজ অন্তর্ভুক্ত করে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এই ক্রয় ৫ম সেক্টর প্রোগাম (জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৯) হতে সম্পন্ন করা হবে। ক্রয় পরিকল্পনায় বেশি সংখ্যক দরদাতাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি প্যাকেজকে ৫টি লটে বিভক্ত করা হয়। যার সুপারিশকৃত মোট মূল্য ২১৬ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উন্নয়ন বাজেটের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ অনুযায়ী এই ক্রয়ব্যয় অনুমোদনের সুপারিশ কর্তৃপক্ষ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩টি প্রতিষ্ঠান ৫টি লটে অংশগ্রহণ করে; তারমধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান রেনেটা লিমিটেড এবং টেকনো ড্রাগস লিমিটেড লট-১, ২, ৩ এবং ১টি প্রতিষ্ঠান: পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড লট-৪ ও ৫ এ অংশগ্রহণ করে। দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির সদস্য সচিব সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ এর বিমি ৯৭ এর উপবিধি (৬) অনুযায়ী সনদপত্র প্রদান করে। পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী কারিগরি এবং আর্থিক মূল্যায়নে সব দরদাতা রেস্পনসিভ হলেও লট ১, ২ ও ৩-এ দাখিলকৃত প্রতি সাইকেল ব্যয়ের (৪৬.৮৫ টাকা) সঙ্গে লট-৪ ও ৫ দাখিলকৃত সাইকেল প্রতি ব্যয়ের (৪৯.৭৫ টাকা) পার্থক্য ২.৯ টাকা। এ হিসেবে লট ১,২ ও ৩ এর তুলনায় লট-৪, ৫ এ দাখিলকৃত ১৮ মিলিয়ন ওরাল পিলের ব্যয় ৫.২২ কোটি টাকা বেশি বিবেচনায় এবং কার্যকর প্রতিযোগিতার ঘাটতি উল্লেখ করে গত ১৩ মার্চ তারিখ ক্রয়কারী কর্তৃক আলোচ্য প্যাকেজের ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিল করা করা হয়। এ প্রেক্ষিতে কারিগরি এবং আর্থিক মূল্যায়নে রেস্পনসিভ দুটি প্রতিষ্ঠান (টেকনো ড্রাগস লিমিটেড এবং পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড) প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বরাবর এবং চেয়ারম্যান, রিভিউ প্যানেল, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে আপিল দায়ের করে। রিভিউ প্যানেল-৪, বিপিপিএ লট ৪ ও ৫ এর আপীল আবেদন খারিজ করা হয়। কিন্তু লট ১,২,৩ এর আবেদনের পক্ষে রায় দেয়। ফলে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্ট তাদের পক্ষে রায় দেয়। এ প্রেক্ষিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করলে আদালত ‘কোন আদেশ প্রদান করা হলো না’ রায় দেয়।
রিডিউ প্যানেলের রায়ে লট ১,২,৩ এর পক্ষে রায় দেওয়ায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সভা করে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লট ১,২,৩ এর মাধ্যমে ২৭ মিলিয়ন সাইকেল ওরাল পিল ক্রয়ের জন্য সিসিজিপি-তে পাঠানোর লক্ষ্যে এ বিভাগে ক্রয় প্রস্তাব দাখিল করা হয়। অপরদিকে লট-১, ২ এবং ৩ এ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান রেনেটা লিমিটেড সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। উক্ত রিট পিটিশন অনুযায়ী আলোচ্য প্যাকেজের কার্যক্রমের উপর ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কর্তৃক রেনেটা লিমিটেডের রিট পিটিশনের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দাখিল করে। তার প্রেক্ষিতে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
কোর্টের রায় অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির (টিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মূল্যায়ন কমিটির সদস্যরা উল্লেখ করেন যে, আলোচ্য দরপত্রটি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আহবান করা হয়। এ পদ্ধতিতে আহবানকৃত দরপত্রের একটি লটে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃত মূল্যের সঙ্গে অন্য লটে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃত মূল্য ভিন্ন হওয়া অস্বাভাবিক না। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে আহ্বানকৃত দরপত্রের ক্ষেত্রে কোন প্যাকেজে যদি একাধিক লট থাকে তাহলে অংশগ্রহণকারী দরদাতাদের প্রত্যেকটি লটের জন্য আলাদাভাবে দরপত্রের শর্তপূরণ করতে হয়। বর্ণিত প্যাকেজের ক্ষেত্রেও লট-৪ ও ৫ এর অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড দরপত্রের সকল শর্তপূরণ করার প্রেক্ষিতেই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি উভয় লটের ক্ষেত্রে তাদের দরপত্র প্রাথমিক পরীক্ষা, কারিগরি মূল্যায়ন এবং আর্থিক মূল্যায়ন শেষে রেসপনসিভ ঘোষণা করে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইন উপদেষ্টার মতামত অনুযায়ী লট-৪ ও ৫ এর ১৮ মিলিয়ন সাইকেল খাবার বড়ি ক্রয়ে কোনরূপ বাধা নেই। এ প্রেক্ষিতে একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সুপারিশ এগিয়ে নিতে আইনগতভাবে কোন বাধা নেই মর্মে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি একমত পোষণ করে। যার মোট সুপারিশকৃত মূল্য ২১৬ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের খাবার বড়ির (তৃতীয় প্রজন্ম) মজুদ অবস্থা বিবেচনায় এই ক্রয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে,বর্তমানে ৪৬০ উপজেলায় খাবার বড়ি তৃতীয় প্রজন্ম মজুদ শূন্য রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীতে প্রায় ৩৯ শতাংশ সক্ষম দম্পতি খাবার বড়ির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান মজুদ ও বিতরণ হার অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে মাত্র ১৫ দিনের খাবার বড়ির মজুদ রয়েছে। আলোচ্য ক্রয়ের জন্য এই সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বৎসরে জিওবি (উন্নয়ন) এবং আরপিএ (জিওবি) খাতে মোট ৫২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জন্মনিরোধক সামগ্রী খাতে আর্থিক সংস্থান ছিলো এবং সে অনুযায়ী দরপত্র আহবান করা হয়েছিলো। ৫ম সেক্টর গ্রোগ্রামের আওতায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত ক্রয়ের জন্য ২১৬ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা টাকা অর্থায়ন সম্ভব হবে।
গুরুত্ব বিবেচনায় ৫টি লটের মাধ্যমে ৪৫ মিলিয়ন সাইকেল ওরাল পিল (তৃতীয় প্রজন্ম) ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।