বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করে বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভবন নির্মাণ এবং ভূমি সংস্কারের বিধিবিধান রয়েছে। তেমনি বিমানবন্দরের ভেতরেও ভবন এবং রানওয়ে করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশনের (আইকাও) নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই দেশের তিন বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল, হযরত শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের আশপাশে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, যা বিমান উড্ডয়ন-অবতরণে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিরাপদ বিমান চলাচলের লক্ষ্যে কয়েক বছর পরপর জরিপের মাধ্যমে ক্রিটিক্যাল (বিপজ্জনক) পয়েন্ট শনাক্ত করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংস্থাটির সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী শাহজালাল, শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে ৮৩টি বিপজ্জনক পয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, সম্প্রতি এই তিনটি বিমানবন্দরের ৬০টি বিপজ্জনক পয়েন্টের ডব্লিউজিএস-৮৪ কো-অর্ডিনেটস এবং উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় বেবিচক। পরে শাহজালাল বিমানবন্দরের ২৫টি, শাহ আমানতের ১২ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরের ১৩ পয়েন্টসহ ৫০টি বিপজ্জনক পয়েন্টের তালিকা পাঠানো হয়। জরিপকাজ চলাকালে আরও কিছু ক্রিটিক্যাল পয়েন্টের সন্ধান পায় বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। চলতি মাসে জরিপ অধিদপ্তরে শাহজালালে ১৭টি, শাহ আমানতে ২ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরে ১৬টিসহ মোট ৩৫টি অতিরিক্ত বিপজ্জনক পয়েন্টের ডব্লিউজিএস-৮৪ কো-অর্ডিনেটস ও উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য তালিকা পাঠায় বেবিচক।
বেবিচকের চিঠিতে বলা হয়, বিপজ্জনক পয়েন্ট নির্ণয়ের চূড়ান্ত তালিকায় অতিরিক্তসহ সব স্থানের তথ্য রাখতে হবে। জরিপের জন্য ইতোমধ্যে ৬০টি স্থানের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ৮৩টি স্থানের জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। আর কক্সবাজার বিমানবন্দরের দুটি রানওয়ের জরিপ করা প্রয়োজন হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উড়োজাহাজ অবতরণ-উড্ডয়নে বিমানবন্দর এলাকা ঝুঁকিমুক্ত রাখা বাধ্যতামূলক। এ জন্য আইকাওয়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সব বিমানবন্দর এসব নির্দেশনা মেনে চলে। বিপজ্জনক পয়েন্টস ও বিমানবন্দর এলাকায় নিয়মের বাইরে গিয়ে যেসব ভবনের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে, সেগুলো অপসারণ করতেই হবে। না হলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ইতোমধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় বেশ কিছু ভবন অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, পাইলট যেন সহজে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ করাতে পারেন, সেদিকে বেবিচকের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এ ছাড়া পাইলটরা উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে কোনো ধরনের অস্বস্তিবোধ করলে তা বেবিচককে অবহিত করেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বেবিচকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরও এটি তদারকি করে। এসব স্থান জরিপের পর এগুলো সিস্টেমে সেট করা হয়, তা দেখে পাইলটরা উড়োজাহাজ অপারেশন করেন। বিগত সরকারের সময়ে কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে এবং অনৈতিকভাবে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করেছে, যা এই এলাকার জন্য প্রযোজ্য নয়। এগুলো অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, ক্রিটিক্যাল পয়েন্টের ডব্লিউজিএস-৮৪ নির্ণয়ের সঙ্গে উচ্চতা নির্ণয়েরও প্রয়োজন হয়। এটা নির্ণয় করে এআইপিতে পাবলিশ করা হয়। এটা পাইলটদের প্রয়োজন হয়। জরিপ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কয়েক বছর পরপর করতে হয়। এটি আইকাওয়ের নিয়ম। যেসব পয়েন্ট নতুন করে সংযোজন হয়, সেগুলো জরিপ করাতে হয়।