ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্ন চুরি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ১ বার

অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমঃ
স্বপ্নও চুরি হয়ে যায় – ভাবতে অবাক লাগে।কতো স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয়েছি।বহু স্বপ্ন পুতুল খেলার ছলে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছি।উচু নীচু পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের সাঁকো বেয়ে পৌঁছে গেছি ৬৪ তে।এখনও সূঁতায় গাঁথা শেষ হয়নি স্বপ্নের পাহাড়। তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে।কার অপেক্ষায় যেন হাত বাড়িয়ে রাখি।স্বপ্নের চশমা চোখ থেকে সরাতে পারি না।স্বপ্নের পৃথবীটা আমায় সর্বদা আছন্ন করে রাখে।সাগর পাড়ে গেলেও স্বপ্ন আমার অঁছল ছাড়ে না। বরং দৌড়ায় সাগরের ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে।একটি বিখ্যাত গানের উক্তি কানের কাছে বাজতে থাকে — “কত যে স্বপ্ন মূকূলে ঝরে যায়”। আমাদের কতো স্বপ্নই তো হারিয়ে ফেলেছি ,চুরি হয়ে গেছে অবচেতন মনে ও অকারণে।চোখের তারায় সাত রঙে ডুবানো বাদবাকী স্বপ্ন আছে বলেই এখনও আছি বেঁচে।

শৈশবে টক,ঝাল, মিস্টিতে ঠাসা, লজ্জা কাতর শিহরণে কম্পমান, কচুপাতার পানির মতো ভাসমান স্বপ্নছিলো নখের গোড়ায় গোড়ায়,যার ছিলো না কোন আগা মাতা।বার বার লক্ষ্য চ্যুত হয়েছি,পিছল পথে অন্ধকার কড়িডোরে হারিয়েছি।তারপরও ক্লান্তীহীন চলার পথে সর্বদা স্বপ্নের লেজে ঘুড়ি বেঁধে রেখেছি।

যৌবনে অনেক স্বপ্ন ছিলো — এই হবো,সেই হবো, শুনাম, খ্যাতি,বাহবা ছড়িয়ে দিযে পৌঁছে যাবো হিমালয়ের উঁচু চূড়ায়। তা কি হতে পেরেছি।স্কুল জীবনে পরীক্ষার খাতায় “জীবনের লক্ষ্য কি” রচনা লিখতে গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছি ডাক্তার হবো।তা কি হতে পেরেছি। খাতা কলমের আড়ালে ডাক্তার হওযার স্বপ্ন চুরি হয়ে গেছে।
একাত্তরে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার রক্তাক্ত স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধে জীবন বাজী রেখে লড়াই করতে নেমেছিলো এ দেশের স্বাধীনতাকামী জনতা । কেউ কেউ জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে ” ও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা” এই বলতে বলতে শহিদ হয়েছে।আসেনি ফিরে লাল সবুজের পতাকা হাতে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের আলো বাতাসে। চুরি হয়ে গিয়েছে স্বাধীনতার আঁকা বাঁকা স্বপ্নগুলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের রক্ত স্রোতে। তাদের রক্তে ধুয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতার ফল ভোগ করছে একাত্তরের পরবর্তী প্রজন্ম।

একটি ছেলে বা মেয়ে বিয়ের রাজ মূকুট মাথায় তুলে বিয়ের আসরে বসে। এরপর বাসরের ফুল ফোটায়। স্বপ্নের পর স্বপ্ন দেখার পালা চলতে থাকে।সবাই তো চায় সুখী হতে। প্রশ্ন রেখে বলতে চাই,সবাই কি স্বপ্নের চূড়ান্ত বাস্তবতা দিয়ে সফলতা পায়। কেউ পায়, কেউ পায় না।হতাশার সাগরে ডুবে, আগুনে পুড়ে ছাই ভষ্ম হয়ে যায়। স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় নাটকীয় ভাবে।তারপরও সংসার সাজাতে হয়,বুনতে হয় স্বপ্নের বটবৃক্ষ।

কত রাজা বাদশা ফকির দরবেশ পৃথবীর বুকে এলো, স্বপ্ন বুনতে বুনতে হারিয়ে গেলো অন্ধকার গহ্বরে। ফেলে গেলো স্বপ্ন মাখা ছাই ভষ্ম মুক্তা মানিক। যা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে করছে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ। একটি ইতিহাস খ্যাত স্বপ্ন চুরির কথা বলছি– নবাব সিরাজ উদ্দোল্লাহর মন ও মননে আঁকা ছিলো পলাশির যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন। এ জন্য তার পক্ষে যথেস্ট সৈন্য,গোলাবারুধ,যুদ্ধাস্র মওজুদ ছিলো।কিন্তু আপন স্বজনদের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে প্রেক্ষাপট যায় পাল্টে।যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে শুধু রাজ্য হারাতে হয়নি। নবাব সিরাজ উদ্দোল্লাহকে তার সেনাপতি মীরজাপরের কূট ষঢ়যন্ত্রের কারনে প্রাণও হারাতে হয়। এভাবেই সৃস্টির আদিকাল কাল থেকে কত স্বপ্ন হয়েছে চুরি, তার হিসেব নিকেষ নেই নথি খতিতে জমা।
শ্যামল তার ক্লাসমেট সুন্দরী মেয়েটিকে মনে মনে ভালবাসতো।চোখের তারায় লুকিয়ে রাখতো বালোবাসার স্বপ্ন কথা। প্রায় দিনেই ধুয়া উড়ানো চায়ের কাপে গাল গপ্পের ঝড় তুলতো। পকেটে লাল গোলাপ নিযে এলেও বাড়িয়ে দেয়ার সাহস পেতো না।মেয়েটি ছিলো ধনীর দুলালী।তা ছাড়া মুসলিম ধর্মালম্বী। তেলে পানিতে হলো না মিশ্রন৷ স্বপ্নের মুকুল ঝড়ে গেলো । মেয়েটির জায়গা হয় অন্যের বাগানে।
অফিসে যাওয়ার পথে দেখি এক অটো রিক্সার ড্রাইভার হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সে বলতে থাকে –মেডাম আমার সব স্বপ্ন পুড়ে গেছে।আমার ইচ্ছা ছিলো আপনার কলেজে আমার এতমাত্র ছেলেকে পড়াবো। অনেক বিদ্যান বানাবো।নিজে তো মুর্খ, আক্ষেপ করে মরলাম সারা জীবন।সে স্বপ্ন পুরণ করবো ছেলেকে দিয়ে।কিন্তু না পারলাম না।ফর্মফিলাপের টাকা দিয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে এলো ঘরে।আবারও কান্না করে বলে, কি করবো ম্যাডাম? উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না।
স্বপ্নের প্রজাপতি পাখা মেলতে পারলো না। এ ভাবেই খসে পড়ে বহু স্বপ্ন, পুড়ে মরে, চুরি হযে যায় ।কিন্তু স্বপ্নের কি দোষ।প্রিয় পাঠক আপনি আমি যখন না ফেরার দেশে চলে যাবো,আমাদের স্বপ্নের উপায় কি হবে। কাফনের তো পকেট নেই কবরে নিয়ে যেতে পারবো না। স্বপ্নগুলো কোন ডালে বসে কাঁদবে? তা হলে কি স্বপ্নগুলো চুরি হয়ে যাবে। অন্য কারো ঘরে বাঁধবে বাসা? উত্তর আছে কি কারো জানা?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

স্বপ্ন চুরি

আপডেট টাইম : ০২:১১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমঃ
স্বপ্নও চুরি হয়ে যায় – ভাবতে অবাক লাগে।কতো স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয়েছি।বহু স্বপ্ন পুতুল খেলার ছলে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছি।উচু নীচু পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের সাঁকো বেয়ে পৌঁছে গেছি ৬৪ তে।এখনও সূঁতায় গাঁথা শেষ হয়নি স্বপ্নের পাহাড়। তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে।কার অপেক্ষায় যেন হাত বাড়িয়ে রাখি।স্বপ্নের চশমা চোখ থেকে সরাতে পারি না।স্বপ্নের পৃথবীটা আমায় সর্বদা আছন্ন করে রাখে।সাগর পাড়ে গেলেও স্বপ্ন আমার অঁছল ছাড়ে না। বরং দৌড়ায় সাগরের ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে।একটি বিখ্যাত গানের উক্তি কানের কাছে বাজতে থাকে — “কত যে স্বপ্ন মূকূলে ঝরে যায়”। আমাদের কতো স্বপ্নই তো হারিয়ে ফেলেছি ,চুরি হয়ে গেছে অবচেতন মনে ও অকারণে।চোখের তারায় সাত রঙে ডুবানো বাদবাকী স্বপ্ন আছে বলেই এখনও আছি বেঁচে।

শৈশবে টক,ঝাল, মিস্টিতে ঠাসা, লজ্জা কাতর শিহরণে কম্পমান, কচুপাতার পানির মতো ভাসমান স্বপ্নছিলো নখের গোড়ায় গোড়ায়,যার ছিলো না কোন আগা মাতা।বার বার লক্ষ্য চ্যুত হয়েছি,পিছল পথে অন্ধকার কড়িডোরে হারিয়েছি।তারপরও ক্লান্তীহীন চলার পথে সর্বদা স্বপ্নের লেজে ঘুড়ি বেঁধে রেখেছি।

যৌবনে অনেক স্বপ্ন ছিলো — এই হবো,সেই হবো, শুনাম, খ্যাতি,বাহবা ছড়িয়ে দিযে পৌঁছে যাবো হিমালয়ের উঁচু চূড়ায়। তা কি হতে পেরেছি।স্কুল জীবনে পরীক্ষার খাতায় “জীবনের লক্ষ্য কি” রচনা লিখতে গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছি ডাক্তার হবো।তা কি হতে পেরেছি। খাতা কলমের আড়ালে ডাক্তার হওযার স্বপ্ন চুরি হয়ে গেছে।
একাত্তরে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার রক্তাক্ত স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধে জীবন বাজী রেখে লড়াই করতে নেমেছিলো এ দেশের স্বাধীনতাকামী জনতা । কেউ কেউ জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে ” ও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা” এই বলতে বলতে শহিদ হয়েছে।আসেনি ফিরে লাল সবুজের পতাকা হাতে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের আলো বাতাসে। চুরি হয়ে গিয়েছে স্বাধীনতার আঁকা বাঁকা স্বপ্নগুলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের রক্ত স্রোতে। তাদের রক্তে ধুয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতার ফল ভোগ করছে একাত্তরের পরবর্তী প্রজন্ম।

একটি ছেলে বা মেয়ে বিয়ের রাজ মূকুট মাথায় তুলে বিয়ের আসরে বসে। এরপর বাসরের ফুল ফোটায়। স্বপ্নের পর স্বপ্ন দেখার পালা চলতে থাকে।সবাই তো চায় সুখী হতে। প্রশ্ন রেখে বলতে চাই,সবাই কি স্বপ্নের চূড়ান্ত বাস্তবতা দিয়ে সফলতা পায়। কেউ পায়, কেউ পায় না।হতাশার সাগরে ডুবে, আগুনে পুড়ে ছাই ভষ্ম হয়ে যায়। স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় নাটকীয় ভাবে।তারপরও সংসার সাজাতে হয়,বুনতে হয় স্বপ্নের বটবৃক্ষ।

কত রাজা বাদশা ফকির দরবেশ পৃথবীর বুকে এলো, স্বপ্ন বুনতে বুনতে হারিয়ে গেলো অন্ধকার গহ্বরে। ফেলে গেলো স্বপ্ন মাখা ছাই ভষ্ম মুক্তা মানিক। যা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে করছে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ। একটি ইতিহাস খ্যাত স্বপ্ন চুরির কথা বলছি– নবাব সিরাজ উদ্দোল্লাহর মন ও মননে আঁকা ছিলো পলাশির যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন। এ জন্য তার পক্ষে যথেস্ট সৈন্য,গোলাবারুধ,যুদ্ধাস্র মওজুদ ছিলো।কিন্তু আপন স্বজনদের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে প্রেক্ষাপট যায় পাল্টে।যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে শুধু রাজ্য হারাতে হয়নি। নবাব সিরাজ উদ্দোল্লাহকে তার সেনাপতি মীরজাপরের কূট ষঢ়যন্ত্রের কারনে প্রাণও হারাতে হয়। এভাবেই সৃস্টির আদিকাল কাল থেকে কত স্বপ্ন হয়েছে চুরি, তার হিসেব নিকেষ নেই নথি খতিতে জমা।
শ্যামল তার ক্লাসমেট সুন্দরী মেয়েটিকে মনে মনে ভালবাসতো।চোখের তারায় লুকিয়ে রাখতো বালোবাসার স্বপ্ন কথা। প্রায় দিনেই ধুয়া উড়ানো চায়ের কাপে গাল গপ্পের ঝড় তুলতো। পকেটে লাল গোলাপ নিযে এলেও বাড়িয়ে দেয়ার সাহস পেতো না।মেয়েটি ছিলো ধনীর দুলালী।তা ছাড়া মুসলিম ধর্মালম্বী। তেলে পানিতে হলো না মিশ্রন৷ স্বপ্নের মুকুল ঝড়ে গেলো । মেয়েটির জায়গা হয় অন্যের বাগানে।
অফিসে যাওয়ার পথে দেখি এক অটো রিক্সার ড্রাইভার হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সে বলতে থাকে –মেডাম আমার সব স্বপ্ন পুড়ে গেছে।আমার ইচ্ছা ছিলো আপনার কলেজে আমার এতমাত্র ছেলেকে পড়াবো। অনেক বিদ্যান বানাবো।নিজে তো মুর্খ, আক্ষেপ করে মরলাম সারা জীবন।সে স্বপ্ন পুরণ করবো ছেলেকে দিয়ে।কিন্তু না পারলাম না।ফর্মফিলাপের টাকা দিয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে এলো ঘরে।আবারও কান্না করে বলে, কি করবো ম্যাডাম? উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না।
স্বপ্নের প্রজাপতি পাখা মেলতে পারলো না। এ ভাবেই খসে পড়ে বহু স্বপ্ন, পুড়ে মরে, চুরি হযে যায় ।কিন্তু স্বপ্নের কি দোষ।প্রিয় পাঠক আপনি আমি যখন না ফেরার দেশে চলে যাবো,আমাদের স্বপ্নের উপায় কি হবে। কাফনের তো পকেট নেই কবরে নিয়ে যেতে পারবো না। স্বপ্নগুলো কোন ডালে বসে কাঁদবে? তা হলে কি স্বপ্নগুলো চুরি হয়ে যাবে। অন্য কারো ঘরে বাঁধবে বাসা? উত্তর আছে কি কারো জানা?