সাত জেলায় বন্যার আরও অবনতি,৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা চলছে। এর মধ্যে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে পানি নামছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে পুনরায় বন্যা শুরু হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলের পানি নেমে আসায় শনিবার মধ্যাঞ্চলের সাত জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলাগুলো হল- মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল। এছাড়া যেসব জেলায় বন্যা চলছে সেগুলো হল- ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ।

বন্যাদুর্গত এলাকার নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় বোনা আউশ, আমন ধান, আমন বীজতলা, শাকসবজির মাঠ তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত পরিবারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গরু-ছাগল নিয়ে স্কুল, উঁচু রাস্তায় ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা সড়কে পানি ওঠায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোরবানির জন্য গৃহপালিত গবাদিপশু নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা মারাত্মক বিপদে পড়েছে। বন্যার কারণে শুক্রবার সকাল থেকে শেরপুর-জামালপুর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মানুষজন নৌকায় করে যাতায়াত করছে।

পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুরের শিবচরে নদীভাঙনে মাদ্রাসা ভবনসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। টাঙ্গাইলে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে পানিতে ডুবে গ্রামপুলিশ সদস্যসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু ও একজন আহত হয়েছে। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় বানভাসিদের নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিটি বন্যাদুর্গত পরিবারে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) শনিবার এক বুলেটিনে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানিও হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া হ্রাস পাচ্ছে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি।
যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী সংলগ্ন ৯টি গ্রামে ইতোমধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার প্রায় চার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পার্শ^বর্তী দোহার উপজেলায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। চারটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মেঘুলা বাজারটির পুরো অংশ ইতোমধ্যে পানিতে ডুবে গেছে। নবাবগঞ্জ ঘোষাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম হোসেন বলেন, ৯টি গ্রামের লোক পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন যাপন করছে। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে।

ফরিদপুর ও চরভদ্রাসন : ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি সাত সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা কয়েক দিন পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল, চরমাধদিয়া, ডিক্রিরচর ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষ তাদের গবাদিপশু নিয়ে শহরের বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। পানির স্রোতে ফরিদপুর-সদরপুরের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুর সদর উপজেলা ছাড়াও সদরপুর, চরভদ্রাসন ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও কয়েকটি গ্রাম। এ চারটি উপজেলার ৩৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার সদরপুর উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। চরভদ্রাসনে শুক্রবার পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০৫ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কয়েক দিনে বন্যায় উপজেলার সবক’টি পদ্মার চর পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে নড়িয়া-জাজিরা আঞ্চলিক সড়কের ঈশ্বরকাঠি স্থানে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ঢাকা ও জাজিরার সঙ্গে নড়িয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

শিবচর (মাদারীপুর) : পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের তিন ইউনিয়নসহ সাত ইউনিয়নে নদীভাঙন বেড়েছে। তিন শতাধিক ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিস্তীর্ণ জনপদসহ আক্রান্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সড়ক ব্যবস্থাও। ভয়াবহ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চরাঞ্চলের পাঁচ ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে বাড়িঘরে পানি ঢোকায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে হু-হু করে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। এতে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি দৌলতদিয়া পয়েন্টে সাত সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১.০৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে ছয়টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের ১৯৬ গ্রামের প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যায় ৬৬১টি বাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার, জিআরের চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি চার সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এক সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া অন্য নদ-নদীর পানিও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। টাঙ্গাইলের বাসাইলে ঝিনাই নদীসংলগ্ন দেওলী-কামুটিয়া রাস্তার কামুটিয়া উত্তরপাড়ায় পঞ্চাশ মিটারের বেশি রাস্তা ভেঙে ঝিনাই নদীর পানিতে দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে ও বাসাইল-কাঞ্চনপুর সড়কের ছনকাপাড়া এলাকায় প্রবল স্রোতে একটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। এতে উভয় এলাকার প্রায় ৪৮ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) : শ্রীনগরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী বাঘড়া, ভাগ্যকুল ও রাঢ়ীখাল ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বাঘড়া ইউনিয়নের প্রায় রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ির উঠোনে এখন হাঁটু ও কোমর পানি। অপর দিকে ভাগ্যকুল ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা ভাগ্যকুল বাজারসহ আশপাশের রাস্তা ও বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের কবুতরখোলাসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।

শেরপুর : ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে আরও ২০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শেরপুরের চরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরনো ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় শেরপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরপক্ষীমারী, কামারের চর, চরমোচারিয়া ও বলাইরচর ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, শনিবার কামারের চর ও চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ১২ মেট্রিক টন চাল, আলু, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

সরিষাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : শুক্রবার যমুনার পানি কিছুটা কমলেও জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সুবর্ণখালী, ঝারকাটা ও ঝিনাই নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দেওয়ানগঞ্জে বন্যার পানিতে দুই দিনে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে একজন। দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে পশ্চিম চর বাহাদুরাবাদ গ্রামে জিহাদ মিয়ার দেড় বছরের সন্তান রাজীব বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে পড়ে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। একই ইউনিয়নের চর বাহাদুরাবাদ গ্রামের আলমগীরের সাত বছরের ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সাজু মিয়া কলাগাছ নিয়ে বন্যার পানিতে খেলতে গিয়ে তলিয়ে যায়। শনিবার বিকালে স্থানীয় লোকজন তার লাশ উদ্ধার করে।

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে কয়েকটি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম, চিলমারী ও উলিপুর : কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সামান্য কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। প্রথম দফায় ১২ দিন ও দ্বিতীয় দফা বন্যায় টানা এক সপ্তাহ ধরে প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার সাড়ে তিন লাখ মানুষ। প্রায় ৫০ হাজার বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার জমির ফসলি ক্ষেত। সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার বায়েজিদ (৮), মুন্নি (১৮ মাস) ও গ্রামপুলিশ সদস্য সুরুজ্জামান (৪৫) নামে তিনজন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। চিলমারীতে পাট জাগ দিতে গিয়ে বানের পানিতে ডুবে সুরুজ্জামান সুরুজ (৪৫) নামে ওই গ্রাম পুলিশ সদস্য মারা যায়। চিলমারীতে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতিতে নদীর পানি হ্রাস পেলেও বাঁধের ভেতরে ঢুকে পড়া পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদ ও থানাসহ গোটা উপজেলা শহর।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপরে রয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ২১ সেমি. হ্রাস পেলেও এখনও বিপদসীমার ৮৮ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহর পয়েন্টে ১৯ সেমি. কমে বিপদসীমার ৬৫ সেমি. উপরে রয়েছে। করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ সেমি. হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২ সেমি. উপর দিয়ে বইছে। অপর দিকে তিস্তা নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়ছে।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কোনো কোনো স্থানে বাড়িঘরে নতুন করে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় তারা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় উপজেলার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের রূপপুর নতুনপাড়ার চর ও নিচু এলাকার ২ শতাধিক হতদরিদ্র তাঁত শ্রমিকের বাড়িঘর ও তাঁত কারখানা এখনও বন্যার পানিতে ডুবে আছে। ফলে এসব বাড়িঘরের শ্রমজীবী মানুষের হাতে কোনো কাজ না থাকায় তারা অতি কষ্টে আছে। তারা তাদের শিশুসন্তান নিয়ে ঘরের মধ্যে মাচা করে অথবা চৌকি উঁচু করে বন্যার পানির মধ্যে বাস করায় শিশুরা পানিতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।

নাটোর : নাটোরের নলডাঙ্গা পয়েন্টে বারনই নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার নলডাঙ্গা হাট পয়েন্টে বারনই নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে গেলেও তা ১৪ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়ার সোনাতলায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাঁচ সহস াধিক পরিবারের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা তাদের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। যারা আছেন তারা তাদের নিজেদের ও গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা, মধুপুর, পাকুল্লা ও তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের পাঁচ হাজার ৪৩৭টি পরিবারের ২৪ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : রোববার থেকে বৃষ্টিপাত অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ভাটিতে পানির টান না থাকায় দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও, সুরমা ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের পানি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। অধিকাংশ বীজতলা এখনও পানির নিচে থাকায় বীজবপনে বিলম্ব হচ্ছে। ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধসে যাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন, ফাটল ও পানি থাকায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীগুলোর পানি উপচে জেলার চারটি উপজেলার ফসলি মাঠ, গ্রামীণ সড়কসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, স্কুল, কলেজসহ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব উপজেলার বাসিন্দাদের। রাস্তা বানের পানিতে তলিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর