জেলার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে মাদক স্পট। সময়ের ব্যবধানে বাড়ছে এসব স্পটের বিস্তৃতি। মাদক স্পট বন্ধে আপ্রাণ চেষ্টা করেও স্পটের সংখ্যা কমাতে পারছে না প্রশাসন। মাদক নির্মূলে সংশিশ্লষ্ট প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও রহস্যজনক কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। জেলার প্রতিটি উপজেলার চিহ্নিত মাদক স্পটগুলো চলছে জমজমাট।
জানাগেছে, বেনাপোল থেকে সবজির গাড়িতে, মাছের পোনা সরবরাহের গাড়িতে, মালবাহী ট্রলারে এবং জাহাজে বহনকৃত মালের নীচে করে আসছে মাদক। এছাড়াও ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম-স্বরুপকাঠির সীমান্ত এলাকা থেকে এবং গাভারামচন্দ্রপুরের কাঁচাবালিয়া এলাকায় বানাড়িপারা থেকে মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ভয়াবহ মাদকের মধ্যে বেশি আসছে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা। পাশাপাশি রয়েছে হেরোইন ও গাঁজা। শহরের সাধনার মোড়, কাঁসারি পট্টি, টিএন্ডটি রোড, ফকির বাড়ি রোড, ডাক্তার পট্টি রোড, কামারপট্টি রোড, ইসলামী ব্যাংকের পিছনে (ডাকঘাটা), শেখ মুজিব সড়ক, বান্দাঘাট, তামাকপট্টি, পৌর খেয়াঘাট, মধ্য চাঁদকাঠি জালাইকর বাড়ি, পূর্ব চাঁদকাঠি বাস্তুহারা, ঝালকাঠি লঞ্চঘাটের দক্ষিন পাড়ে (নদীর ওপারে), আমিরাবাদসহ শহর ও শহরতলীর ডজন খানেক স্পটে বিনা বাধায় চলছে আমদানি করা মাদকের ব্যবসা। ব্যবসা সমূহ সরকার দলের বড় কোন নেতা পরিচালনা না করলেও ছোট পর্যায়ের পদ-পদবীধারী নেতারা এ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে মোবাইলে চলে এসব মাদক ব্যবসা।
ভারতের হিলি, উজাল, আপ্তইর, হাড়ীপুকুর, পাঞ্জুল, ত্রিমোহনী, ডাঙ্গার হাট, পতিরামপুর, শিয়ালা, বাঙ্গালীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফেন্সিডিল কারখানা। এসব কারখানার ফেন্সিডিল ভারতের সীমান্ত পথে পাচার হয়ে অভিনব কৌশলে বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ব্যবসার মালবাহী ট্রলার, শিশুদের স্কুল ব্যাগের মাধ্যমে ও ভ্যানের বডিতে সাজিয়ে বিভিন্ন স্থানের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। বেশি লাভজনক হওয়ায় এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে শিশু, মহিলা ও যুবসমাজ। অসৎ সঙ্গ, শখের বশে ও সহজ প্রাপ্তি হওয়ায় সেবনে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ও যুবসমাজ। বর্তমানে ওইসব এলাকায় স্কুল-কলেজ পড়–য়া মাদকসেবীর সংখ্যাও অনেক রয়েছে বলে জানা গেছে। মাদক স্পটের বৃদ্ধির সাথে পাল্ল¬া দিয়ে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঝে মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযান চালালে সম্প্রতি সরকারী কর্মচারীসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, দিনের পর দিন ফেন্সিডিল, হেরোইন ও ইয়াবার ব্যবসা বেড়েই চলেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা সাথে বহন না করে কোন নির্জন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে মোবাইলে চুক্তির মাধ্যমে লেনদেন করে। লেনদেন ঠিকমত পরিশোধ হলে জানিয়ে দেয়া হয় তার কাক্সিক্ষত বস্তুর স্থান। ক্রেতা সে অনুযায়ী খুঁজে বের করে নেন তার ক্রয়কৃত বস্তু। মোবাইলে কথা বলার সময় পার্শ্ববর্তী কেউ যাতে তার ভাষা বা টাকার অংক বুঝতে না পারে সে জন্য ইয়াবাকে বলা হয় গুটি বা বুতাম। ফেন্সিডিলকে যে কোন একটি তরকারীর নাম এবং গাঁজাকে সবজি বলে উচ্চারণ করা হয়। টাকার পরিমাণের সময় ৫শ টাকাকে ৮ আনা এবং ১ হাজার টাকাকে ১ টাকা বলে। ৫ শ’ টাকার নীচে ২শ টাকা হলে ২, ৩শ টাকা হলে ৩ এভাবে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে ব্যবসায়ী, মানবাধিকার কর্মী, সংবাদ কর্মী, রাজনীতিক নেতাসহ বিভিন্ন নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় লোকালয়ের একটু আড়ালে ড্রেনে অথবা কোন নর্দমার দিকে তাকালেই দেখা যায় ফেন্সিডিলের খালি বোতল। খুচরা আদান-প্রদানের সময় দেখা যায় ২ ও ৫ টাকার নতুন নোটে আগুনের হাল্কা পোড়ার দাগ। অপরদিকে উঠতি বয়সী মাদকাসক্তরা পূর্বে এক ধরনের গাম নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করলেও তারা বর্তমানে হাতের কাছে প্যাথেডিন পাওয়ায় তা দিয়ে নেশা করছে। এতে করে দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে যুবসমাজ। ঈদ উপলক্ষে এ মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে শান্তিপ্রিয় সচেতন জনগণ। ঝালকাঠি জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না। হাতে-নাতে যাকেই ধরতে পারি তাকেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।