সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার গাজীপুরের বিলাসবহুল বাংলো এখন অরক্ষিত। ওই বাংলোতে দিনব্যাপী চলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। আর বিকেলে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা এবং রাত হলেই মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছাড়াও অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বাংলোটি।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাংলো। চারপাশে সীমানা প্রাচীর ঘেরা ডুপ্লেক্স বাড়ি, শান বাঁধানো পুকুরঘাট, বাগানসহ নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। প্রতি বছর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ওই বাংলোতে সময় কাটাতে যেতেন। চলতি বছরও তারা এ বাংলোতে গিয়েছিলেন। এছাড়াও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকসহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ওই বাংলোতে জরুরি সভা করতেন। মাঝে মধ্যেই রাতে জাতীয় পতাকা লাগানো কালো গ্লাসের গাড়ি ঢুকতো। তখন বাংলোর চারপাশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকতো। কখনো ভোরেই গাড়িগুলো চলে যেত, কখনো দু-এক দিন থাকতেন তারা।
অপরদিকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাকর্মী দ্বারা রক্ষিত থাকায় বাংলোতে এক সময় সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরেই বাংলোটিতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। বাংলোতে ঢুকে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। লুট করে নিয়ে যায় টিভি, ফ্যান, এসি, ফ্রিজ, টাকা, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক তার, দুটি গেটসহ বিভিন্ন মালামাল। সব ছোটখাটো স্থাপনাও নষ্ট করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে ওই বাংলোটি অরক্ষিত রয়েছে। বাংলোর দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ছোট দোকান। কোনো গেট নেই, নেই পাহারাদাররাও। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় গেটের ভেতরে পশ্চিমপাশে চোখে পড়ে ঝোপঝাড়ে ফেনসিডিলের খালি বোতল। পাশের সিকিউরিটির কক্ষে মিলে যৌন উত্তেজকের বিভিন্ন উপাদানসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নমুনা।
একটু হেঁটে সামনে যেতেই বিশাল বিলাস বহুল বাংলোর দেখা মিলল। বাংলোটি সম্পূর্ণ পোড়া। প্রতিটি কক্ষে পোড়া চিহ্ন, দরজা জানালা, আসবাবপত্রসহ কোনো মালামাল নেই। দোতলায় দিনের বেলাতেও কয়েকজন যুবক গাঁজা সেবন করছেন। তার দুর্গন্ধে দিশেহারা দর্শনার্থীরাও। সেখানে বেশ কয়েকজন মাদকাসক্ত যুবক এসব বিষয়ে সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলেন। ওই বাংলোর পশ্চিমে সুইমিং পুল ও সামনে দক্ষিণে শান বাঁধানো পুকুর। কয়েকজন শিশু-কিশোর পুকুরের সিড়িতে বসে গল্প করছেন। বিকেল হলেই পুকুরের পশ্চিম পাশে মাঠে শিশু-কিশোর ও যুবকরা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলাধুলা করে। বাংলোর দক্ষিণ পাশের সীমানা ভেঙে কয়েকটি রাস্তা করেছে দুর্বৃত্তরা। মহাসড়ক থেকে সরাসরি ওই রাস্তা দিয়ে বাংলোর ভেতরে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, দিনব্যাপী দর্শনার্থীর আনাগোনা ও স্থানীয়দের চলাচলের কারণে কিছুটা শান্ত অরক্ষিত বাংলোটি। কিন্তু রাত নামলেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে বাংলো এলাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে হলেই বাংলোতে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছাড়াও অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। তবে মাদকসেবীদের আড্ডাসহ বিভিন্ন অপরাধ রোধে ওই বাংলো এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি জোরদারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম, দিদার হোসেন ও পোশাক শ্রমিক জিহাদ রহমান বলেন, এ বাংলো অরক্ষিত থাকায় দিনব্যাপী দর্শনার্থী আসে ও স্থানীয়রা সীমানার ভাঙা অংশ দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু রাতের বেলায় এখানে ঢুকতে ভয় করে। কারণ তখন এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধ সংঘঠিত হয়।
দর্শনার্থী লাবু মিয়া ও মমিন আলী বলেন, এখানে অনেক জায়গা এবং সুন্দর। এজন্য এখানে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। কেউ কেউ খেলাধুলা করে, কেউ কেউ আড্ডা দেয়। তবে এটা রক্ষিত হলে এখানে গাঁজা, মদ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকসেবীরা আড্ডা দিতে পারবে না।
মিলন হোসেন, কিবরিয়া বিশ্বাস নামে দুইজন বলেন, এ এলাকাটি কারখানায় ঘেরা, তেমন কোনো মাঠ নেই। তাই প্রতিদিন বিকেলে শিশু-কিশোর, যুবকরা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলাধুলা করে। তবে মাদকসেবীদের আড্ডাসহ বিভিন্ন অপরাধ রোধে ওই বাংলোটি সরকারের অধীনে নিয়ে প্রশাসনের নজরদারির দাবি স্থানীয়দের।
কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) মহিদুল ইসলাম জানান, ওই বাংলোটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। এভাবে পরিত্যক্ত পড়ে থাকলে বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এটা এভাবে ফেলে রাখা যাবে না। এটাকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে নিরাপত্তা দিলে এ রকম ঘটনা ঘটবে না। তবে মাদক রোধসহ নানা অপরাধ ঠেকাতে আমাদের পুলিশ টহল অব্যাহত রেখেছে।