দীর্ঘ সাত বছর পর পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ঈদ উদযাপন করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, তিন নাতনি জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্?যাপন করবেন তিনি। সর্বশেষ, ২০১৭ সালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে লন্ডনে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেন খালেদা জিয়া।
গত ৮ জানুয়ারি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এর আগের দিন কাতারের আমিরের শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির পাঠানো রাজকীয় বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা থেকে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সেখান থেকে সরাসরি খালেদা জিয়াকে লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৫ জানুয়ারি চিকিৎসদের ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এবার যুক্তরাজ্যে পরিবারের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বেগম খালেদা জিয়া। ঈদের দিন সুস্থ থাকলে ছেলে তারেক রহমানকে সাথে নিয়ে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারেন।
এর আগে ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ওই সময় তিন মাস তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদ্?যাপন করেন। যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে একটি মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। এ অবস্থায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল থেকে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে কয়েক দফা আবেদন করা হয়। বৈশি^ক করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিলেও হাসিনা সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এর পর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এর পর ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। পরিবারের সান্নিধ্যে খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি জানান, দ্রুতই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) দ্য ক্লিনিকের অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের অধীনে বাসায় (তারেক রহমানের বাসা) থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন।
খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরতে পারেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ হোসেন বলেন, ঈদের পর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল টিমের পরামর্শে তিনি এপ্রিলের যে কোনো দিন দেশে ফিরতে পারেন। তবে পুরো বিষয়টি মেডিক্যাল টিমের অনুমতির ওপর নির্ভর করছে।