মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে জাল টাকা প্রস্তুতকারী কয়েকটি চক্র। গরু ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে এরা সক্রিয় হয়। পুলিশের দাবি, এসব চক্রের ব্যাপারে তারাও সতর্ক। কয়েকটি চক্রকে শনাক্তও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার চক্র ও অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা রুখতে আমরা আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এসব চক্রের কিছু সংখ্যক সদস্যদের ধরতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, ঈদে পশুর হাটগুলোতে আমরা জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন দিচ্ছি। এছাড়া হাটের ইজারাদাররা যেন এ মেশিনের ব্যবস্থা করে তার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও কিছু মেশিন পশুর হাটগুলোতে দেয়া হবে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হাটগুলোতে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প, সিসি টিভি, প্রচুর সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। হাটের আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ হকার, চা-পান বিক্রেতাদের কড়া নজরদারি থাকবে।
ব্যবসায়ীসহ জন-সাধারণকে স্থায়ী দোকান থেকে খাবার কিনতে এবং যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নিতে আহবান জানান তিনি।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে গুরু নিয়ে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার লেনদেনের কারণে সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী চক্র।
জানা গেছে, জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি চক্র। এদের সঙ্গে কিছু অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। তাদের মধ্যে কয়েকটি চক্রকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঈদে পশুর হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরন মেশিন প্রদান করবে ৪১টি ব্যাংক। প্রত্যেকটি হাটকে একেক ব্যাংকের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। আর সামগ্রিকভাবে অবস্থার তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে সারা দেশে এ বছর পশুর হাটগুলোতে প্রায় এক হাজার জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন দেয়া হবে বলে জানা গেছে। গত বছরের রমজানে ঢাকাসহ সারাদেশের বড়-বড় মার্কেটে সরবরাহ করা হয় ১৩০টি মেশিন। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ শতাধিক জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রয়োজনে নতুন মেশিনও সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রচলিত নোটগুলোর মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটই বেশি পরিমাণে জাল হচ্ছে। জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম ও নোটসহ যেসব প্রতারক চক্র ধরা পড়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই ওই সব নোটের জালকারী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাল নোট চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়। জামিনে মুক্ত হয়ে আবার একই রকম অপরাধ কর্ম করে যাচ্ছে জাল টাকা কারবারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে জাল নোট বিষয়ে ১৪৫ মামলা হয়েছে। মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৩৩টি। বছরের পর বছর এসব মামলা চললেও তা থেকে যাচ্ছে অনিষ্পন্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এক হাজার টাকার নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ১৩টি এবং ৫০০ টাকার প্রথম ১১টি। তার মধ্যে রয়েছে রং পরিবর্তনশীল হলোগ্রাফিক সুতা, অসমতল ছাপ, রং পরিবর্তনশীল কালি, উভয়দিক থেকে দেখা, অন্ধদের জন্য বিন্দু, জলছাপ, এপিঠ-ওপিঠ ছাপা, অতি ছোট আকারের লেখা, লুকানো ছাপা, সীমানাবর্জিত ছাপা, পশ্চাত্পট মুদ্রণ, নম্বর এবং ইরিডিসেন্ট ও স্ট্রাইপ।