ঢাকা ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আটকে গেছে সচিব শওকতের সম্পদের অনুসন্ধান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩৫৬ বার

সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা সম্পদের অনুসন্ধানকাজ আটকে রয়েছে। বর্তমানে তিনি পিআরএল (অবসরোত্তর ছুটি) ভোগ করছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ সরকারি ও বেসরকারি ৬টি প্রতিষ্ঠান তথ্য সরবরাহ না করায় এ অনুসন্ধানকাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার ড. শওকত হোসেনের সম্পর্কে ‘বিষয়টি অতীব জরুরী’ লিখে তথ্য চেয়ে চিঠি দিলেও কোনো তথ্যই ওই সব দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়নি। সর্বশেষ তথ্য না দিলে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়ে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিয়েছে কমিশন। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, রিহ্যাবের কাছে আগে দু’বার জরুরী ভিত্তিতে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসের শুরুতে তৃতীয়বারের মতো রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বরাবর দুদক আইন ২০০৪-এর ১৯(৩) ধারায় হুঁশিয়ারি দিয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এমনভাবে রিহ্যাবসহ সরকারি-বেসরকারি ৬টি দফতরে একাধিকবার তথ্য চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো দফতর বা প্রতিষ্ঠান থেকে ড. শওকত হোসেনের কোনো তথ্যই সরবরাহ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, রিহ্যাবসহ ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে ড. শওকত হোসেনের তথ্য পাওয়া না গেলে অনুসন্ধানকাজ অসম্পন্ন থেকে যাবে। আর অসম্পন্ন অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করলে প্রকৃত সত্য গোপন থেকে যেতে পারে। তাই তথ্য পাওয়ার স্বার্থে কমিশন থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

যে সব প্রতিষ্ঠান তথ্য দিতে গড়িমসি করছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ১৯(৩) ধারায় এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ধরায় বলা আছে— কোনো কমিশনার বা কমিশন থেকে বৈধ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্তসংশ্লিষ্ট কাজে বাধা দিলে বা কোনো নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি অমান্য করলে তা দণ্ডনীয় হবে। এ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ৩ বছর অথবা যে কোনো মেয়াদে কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের মে মাসে ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক।

ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, শওকত হোসেন তার স্ত্রী ড. আয়েশা খানমের নামে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে (রোড-৯, বাড়ি-১৩৪) ৬ কাঠা প্লটের ওপর ছয়তলা ভবন করেছেন, যার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। গুলশান-১ এর ১২ নম্বর রোডের ২২০ নম্বর এ্যাপার্টমেন্টে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সাভারের আশুলিয়ায় রয়েছে ১২০ বিঘা জমি, যার মূল্য ৭৫ কোটি টাকা। ভালুকায় রয়েছে ৪০ বিঘা জমি, যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। রাজধানীর বনানীতে স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ৮ কাঠার প্লট কিনেছেন। এর বাজারমূল্য ৩৮ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে স্ত্রী ও শ্যালকদের বিও এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার।

এ ছাড়া ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল স্ত্রী, মা ও নিজের নামে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় (অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অপরাধ) মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। দুদকের দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদনী শিবলী। এ ছাড়া ড. শওকতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পৃথক ৩টি মামলার তদন্তও করছেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আটকে গেছে সচিব শওকতের সম্পদের অনুসন্ধান

আপডেট টাইম : ১১:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা সম্পদের অনুসন্ধানকাজ আটকে রয়েছে। বর্তমানে তিনি পিআরএল (অবসরোত্তর ছুটি) ভোগ করছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ সরকারি ও বেসরকারি ৬টি প্রতিষ্ঠান তথ্য সরবরাহ না করায় এ অনুসন্ধানকাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার ড. শওকত হোসেনের সম্পর্কে ‘বিষয়টি অতীব জরুরী’ লিখে তথ্য চেয়ে চিঠি দিলেও কোনো তথ্যই ওই সব দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়নি। সর্বশেষ তথ্য না দিলে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়ে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিয়েছে কমিশন। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, রিহ্যাবের কাছে আগে দু’বার জরুরী ভিত্তিতে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসের শুরুতে তৃতীয়বারের মতো রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বরাবর দুদক আইন ২০০৪-এর ১৯(৩) ধারায় হুঁশিয়ারি দিয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এমনভাবে রিহ্যাবসহ সরকারি-বেসরকারি ৬টি দফতরে একাধিকবার তথ্য চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো দফতর বা প্রতিষ্ঠান থেকে ড. শওকত হোসেনের কোনো তথ্যই সরবরাহ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, রিহ্যাবসহ ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে ড. শওকত হোসেনের তথ্য পাওয়া না গেলে অনুসন্ধানকাজ অসম্পন্ন থেকে যাবে। আর অসম্পন্ন অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করলে প্রকৃত সত্য গোপন থেকে যেতে পারে। তাই তথ্য পাওয়ার স্বার্থে কমিশন থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

যে সব প্রতিষ্ঠান তথ্য দিতে গড়িমসি করছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ১৯(৩) ধারায় এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ধরায় বলা আছে— কোনো কমিশনার বা কমিশন থেকে বৈধ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্তসংশ্লিষ্ট কাজে বাধা দিলে বা কোনো নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি অমান্য করলে তা দণ্ডনীয় হবে। এ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ৩ বছর অথবা যে কোনো মেয়াদে কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের মে মাসে ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক।

ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, শওকত হোসেন তার স্ত্রী ড. আয়েশা খানমের নামে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে (রোড-৯, বাড়ি-১৩৪) ৬ কাঠা প্লটের ওপর ছয়তলা ভবন করেছেন, যার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। গুলশান-১ এর ১২ নম্বর রোডের ২২০ নম্বর এ্যাপার্টমেন্টে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সাভারের আশুলিয়ায় রয়েছে ১২০ বিঘা জমি, যার মূল্য ৭৫ কোটি টাকা। ভালুকায় রয়েছে ৪০ বিঘা জমি, যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। রাজধানীর বনানীতে স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ৮ কাঠার প্লট কিনেছেন। এর বাজারমূল্য ৩৮ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে স্ত্রী ও শ্যালকদের বিও এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার।

এ ছাড়া ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল স্ত্রী, মা ও নিজের নামে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় (অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অপরাধ) মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। দুদকের দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদনী শিবলী। এ ছাড়া ড. শওকতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পৃথক ৩টি মামলার তদন্তও করছেন তিনি।