ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসছে বিশাল রাজস্বের চাপ পরোক্ষ করের চাপ বাড়ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৮:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মে ২০১৫
  • ৫৮০ বার

৯ মাসে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের চিত্র ছিল ৭৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

 

দেশে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। সরকারও প্রতি বছর অধিক হারে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করছে। যদিও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রায় কিছুটা কাটছাঁট করা হয়। বেশি রাজস্ব আদায় উন্নয়ন ব্যয় পরিকল্পনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রাজস্ব আদায়ের ওপর ভিত্তি করেই ফি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু রাজস্ব বোর্ড খাতে আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্য হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের চিত্র ছিল ৭৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। অর্থাত্ রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এরমধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক খাতে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ৩০ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এ দুটি খাতেও আদায় বেড়েছে যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ হারে।
বলা আবশ্যক যে, জানুয়ারি থেকে প্রায় তিন মাস রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা করতে পারেনি ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। ফলে লক্ষ্যমাত্রা বেশ পিছিয়ে যায় আয়কর ও ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও কার্যত অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবুও অর্থবছরের ৯ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ হারে। আর আসছে অর্থবছরের জন্য ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে যাচ্ছে সরকার।
গত কয়েক বছরের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পরোক্ষ করের বড় খাত ভ্যাট আদায় বাড়ছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় বেড়েছিল প্রায় ১২ শতাংশ। ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ।
এত বেশি হারে আদায়ের পরও বলা হয়ে থাকে জনগণ কর দেয় না। কিংবা বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা কম। কিন্তু করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর না থাকলেও এদেশে সবাই কর দিচ্ছেন। প্রতিটি পর্যায়ে কর দেয়ার পরও সবাই কর দিচ্ছে না- এমন কথা বলা অযৌক্তিক বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীগণও একই সুরে কথা বলেন। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোকে দেখানোর জন্য মূলত করদাতা বাড়ানোর পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানায় এনবিআরের একটি সূত্র। তবে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর দিকে জোর না দিয়ে বৃহত্ পর্যায়ে কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, সবাই নানাভাবে কর দেয় বলেই রাজস্ব বাড়ছে। আগামী অর্থবছরেও বিশাল রাজস্বের ‘টার্গেট’ নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থবছরে ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাড়তি আদায় করতে হবে অন্তত ৩০ শতাংশ। অতীতে কখনোই এ হারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, এবার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা হলে তা বাস্তবসম্মত ছিল। কিন্তু ৩০ বা ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা হবে। সেই সঙ্গে শুল্ক, কর ও ভ্যাট ফাঁকি কমিয়ে আনা আর মামলায় আটকে থাকা বিশাল সংখ্যক রাজস্বের একটি অংশ আদায় করার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে চায় সরকার।

আগামী অর্থবছরও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ হলে তা অর্জনও দুরূহ হবে বলে মনে করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কারণ জাতীয় আয়ের ভিত্তি বেড়েছে। কিন্তু এ হারে রাজস্ব বাড়াতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার। কিন্তু এনবিআরের বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় এমন লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলে তা অর্জন দুরূহ হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আসছে বিশাল রাজস্বের চাপ পরোক্ষ করের চাপ বাড়ছে

আপডেট টাইম : ০৬:৩৮:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মে ২০১৫

৯ মাসে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের চিত্র ছিল ৭৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

 

দেশে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। সরকারও প্রতি বছর অধিক হারে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করছে। যদিও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রায় কিছুটা কাটছাঁট করা হয়। বেশি রাজস্ব আদায় উন্নয়ন ব্যয় পরিকল্পনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রাজস্ব আদায়ের ওপর ভিত্তি করেই ফি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু রাজস্ব বোর্ড খাতে আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্য হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের চিত্র ছিল ৭৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। অর্থাত্ রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এরমধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক খাতে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ৩০ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এ দুটি খাতেও আদায় বেড়েছে যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ হারে।
বলা আবশ্যক যে, জানুয়ারি থেকে প্রায় তিন মাস রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা করতে পারেনি ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। ফলে লক্ষ্যমাত্রা বেশ পিছিয়ে যায় আয়কর ও ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও কার্যত অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবুও অর্থবছরের ৯ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ হারে। আর আসছে অর্থবছরের জন্য ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে যাচ্ছে সরকার।
গত কয়েক বছরের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পরোক্ষ করের বড় খাত ভ্যাট আদায় বাড়ছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় বেড়েছিল প্রায় ১২ শতাংশ। ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ।
এত বেশি হারে আদায়ের পরও বলা হয়ে থাকে জনগণ কর দেয় না। কিংবা বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা কম। কিন্তু করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর না থাকলেও এদেশে সবাই কর দিচ্ছেন। প্রতিটি পর্যায়ে কর দেয়ার পরও সবাই কর দিচ্ছে না- এমন কথা বলা অযৌক্তিক বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীগণও একই সুরে কথা বলেন। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোকে দেখানোর জন্য মূলত করদাতা বাড়ানোর পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানায় এনবিআরের একটি সূত্র। তবে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর দিকে জোর না দিয়ে বৃহত্ পর্যায়ে কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, সবাই নানাভাবে কর দেয় বলেই রাজস্ব বাড়ছে। আগামী অর্থবছরেও বিশাল রাজস্বের ‘টার্গেট’ নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থবছরে ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাড়তি আদায় করতে হবে অন্তত ৩০ শতাংশ। অতীতে কখনোই এ হারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, এবার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা হলে তা বাস্তবসম্মত ছিল। কিন্তু ৩০ বা ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা হবে। সেই সঙ্গে শুল্ক, কর ও ভ্যাট ফাঁকি কমিয়ে আনা আর মামলায় আটকে থাকা বিশাল সংখ্যক রাজস্বের একটি অংশ আদায় করার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে চায় সরকার।

আগামী অর্থবছরও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ হলে তা অর্জনও দুরূহ হবে বলে মনে করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কারণ জাতীয় আয়ের ভিত্তি বেড়েছে। কিন্তু এ হারে রাজস্ব বাড়াতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার। কিন্তু এনবিআরের বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় এমন লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলে তা অর্জন দুরূহ হবে।