দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা রয়েছে। এতে করে দিন দিন বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এমনকি ঋণ পরিশোধেও ফের ঋণ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার এই পর্যায়ে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ব্যয় তা খুব আহামরি নয়। মূলত অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণেই এ টানাপড়েন। এ প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এনবিআরের কাছে পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কমেছে। এতে উন্নয়ন খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে সরকারি উন্নয়ন খরচ বাড়ানোর পরিবর্তে কমাতে হচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা চলতি মাসের মধ্যেই পেতে চায়। এ পরিকল্পনা আইএমএফের ওয়াশিংটনের পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে।
গত ৩ ডিসেম্বর আইএমএফের মিশন বাংলাদেশ সফরে এসেছে। তারা অর্থ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছে। গত বৃহস্পতিবার এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ। এতে বলা হয়, নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে হলে আগের তুলনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে। কীভাবে এ অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করা হবে, তার পরিকল্পনা দিতে বলেছে আইএমএফ। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এ পরিকল্পনা চলতি মাসের মধ্যেই পেতে চায় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে ভ্যাট শাখায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া বকেয়া কর, শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ে আরও তৎপরতা বাড়াতে পারে এনবিআর। আরেক কর্মকর্তা জানান, কোন খাতের কর রেয়াত কমানো সম্ভব, তা নিয়ে কাজ চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা চলছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করে আইএমএফকে জানানো হবে।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা (আইবাসের হিসাব অনুযায়ী), যা জিডিপির
৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আইএমএফের লক্ষ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের হার জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা রয়েছে।
এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। অর্থবছরের শুরুর পর জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার পাশাপাশি যোগ হয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ০৩ শতাংশ।