রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কালোদিবস। ২০০৪ সালের এদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় শহিদ হন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। শোকাবহ ঐ মর্মান্তিক ঘটনায় সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধসহ মাতৃভাষা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সাথে মিশে আছে লাখো শহিদের আত্মত্যাগ। এদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথও মসৃণ নয়। নানা চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র এগিয়ে চলেছে। অগণতান্ত্রিক শক্তি বারবার গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ওপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে অকালে জীবন দিতে হয়েছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। এরপরও ঘাতকচক্র থেমে থাকেনি। তাঁরা বঙ্গবন্ধু তনয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভা চলাকালীন ইতিহাসের বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালায়। তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেয়া এবং দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও হতে দেবে না। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান দলের ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত হন অর্ধ-সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী। এ হামলায় বেঁচে থাকা অনেকে আজও পঙ্গুত্ববরণ করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে সকল রাজনৈতিক দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণ একটি আত্মমর্যাদাশীল ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবেন, এ প্রত্যাশা করি।
আমি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
২১ আগস্ট উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাণী :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জঙ্গি তৎপরতা বিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
তখন চারদিকে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে। এর মধ্যেও আমাদের নেতা-কর্মীরা মানববর্ম সৃষ্টি করে সেদিন আমাকে রক্ষা করেন। আল্লাহতায়া’লার অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। তবে খুনীদের গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ আমাদের ২৪ জন নেতা-কর্মী। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী। তাঁদের অনেকেই আজও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বহন করছেন। অনেকে দেহে স্প্রিন্টার নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেওয়া। হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা। বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করা।
এ ধরনের নারকীয় হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। অনেক আলামত ধ্বংস করে। তদন্তের নামে এই নারকীয় ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। সত্য কখনও চাপা থাকে না। পরবর্তীকালে তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামাত জোটের অনেক কুশীলব এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
বিএনপি-জামাত জোট যখনই সরকারে এসেছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে অশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকেছে। কিন্তু দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ বিএনপি-জামাত জোটের হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে প্রত্যাখান করে পুনরায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদ এবং ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত মোট সাড়ে ছয় বছরে আমাদের সরকার হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে। ইতোমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমার প্রত্যাশা, রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হব।
আমি আশা করি, ২১ আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে একটি শান্তিপূর্ণ নিরাপদ স্বদেশ ও সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ অব্যাহত রাখতে দেশের সকল নাগরিক ঐক্যবদ্ধ হবেন। ২১ আগস্টের হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং তাদের মদদদাতাদের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের চির অবসান হবে। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। এই দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা।
আমি ২১ আগস্টের সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ; তাঁদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং আহতদের জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।
এস