ঢাকা ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ও শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ-নির্যাতন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • ২ বার

বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বাবা। গত মঙ্গলবার বাদীর (বাবা) লাশ পাওয়া যায় বাড়ির কাছের একটি ঝোপে। ২০১৬ সালে দিনাজপুরে প্রজনন অঙ্গ কেটে শিশুকে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনাটি আলোাচিত ছিল সারাদেশে। ওই মামলার অভিযুক্ত আসামি গত ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে বেরিয়ে গেছে। আরেক ঘটনায় মেহেরপুরে ৯ বছরের শিশু ধর্ষণের মামলায় আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়েই ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবারকে। এ ঘটনায় আসামিদের পক্ষ নিয়ে মামলা তুলে নিতে শিশুর পরিবারকে চাপ দেওয়ায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এভাবে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করে হত্যা-হামলার শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে। আবার তদন্ত ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণেও মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকে। সাক্ষীরাও আদালতে আসতে চাইছেন না। অনেক ক্ষেত্রে সাহস করে মামলা করার পর ভুক্তভোগী পরিবার আরও ভোগান্তির শিকার হয়ে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ ধরনের মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে

সম্পন্ন করার কথা বলা হলেও তা হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত প্রায় ৩৩ হাজার মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন। পাশাপাশি মামলার তদন্তেও কালক্ষেপণ হয়। বিচারের এমন দীর্ঘসূত্রতায় আসামিরা আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণ বা নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন খুবই কঠোর। তবে এটা বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। কারণ, আইন বাস্তবায়নে তদন্তকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুর্বলতা রয়েছে। ফলে অধিকাংশ মামলার সর্বশেষ পরিণতি সমঝোতায় গিয়ে ঠেকে। তাতে আসামি জামিন পেয়ে যায় এবং দণ্ড থেকেও মুক্ত হয়। অপরাধ করেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আসামিরা উৎসাহিত হয় এবং আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো পাশবিক ঘটনা থামনো যাচ্ছে না।

সুপ্রিমকোর্টের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন ৩২ হাজার ৯৭২টি মামলা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ১ হাজার ৬০৭টি মামলা। অন্যদিকে, পুলিশের কাছে তদন্তাধীন ২০ হাজার ১৩৫টি মামলা, যা মোট মামলার ৩৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গুর অবস্থার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হওয়া মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না। পুলিশ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে ব্যস্ত। নারী ও শিশু নির্যাতন-সংক্রান্ত মামলাগুলো তদন্তের জন্য আলাদা পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা থাকা উচিত। নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে আরও সোচ্চার হতে হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত আইন ২০১৩ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হয়। ট্রাইব্যুনাল যদি ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হয়, তা হলে তার কারণসংবলিত একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করবেন, যার একটি অনুলিপি সরকারকেও দিতে হবে। একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, নারী-শিশু নির্যাতন, দমন ও ধর্ষণের আইনটি অত্যন্ত কঠোর। কিন্তু প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। রাষ্ট্রপক্ষ যদি সবকিছু ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারে, তা হলে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নথিপত্রে তথ্য-প্রমাণাদি সঠিকভাবে উপস্থাপন না করার কারণে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। আবার বিচার বছরের পর বছর ঝুলে থাকলে বাদীপক্ষ সামাজিক নানা ধরনের বাধা ও হেনস্তার শিকার হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ১৭ হাজার ৫৭১টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অথচ এর আগের পাঁচ বছরের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৭৬৪টি, ২০২০ সালে ২২ হাজার ৫১৭, ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬, ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬ এবং ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ সর্ম্পকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ঘটনার চূড়ান্ত বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা অপরাধকে উৎসাহিত করে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার পেছনে সামাজিক অবক্ষয় অন্যতম কারণ। অসহিষ্ণুতা, শিক্ষার অভাব ও সামাজিক সুবিচারের অভাবে ধর্ষণ বাড়ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট মামলার ২০ হাজার ১৮৩টি পুলিশের কাছে তদন্তের জন্য রয়েছে। আইন অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। বর্তমানে পুলিশের কাছে সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ১ হাজার ৫৫৬, নরসিংদীতে ১ হাজার ৫৭৪ ও রংপুরে ১ হাজার ১১৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের সমাজে মনস্তাত্ত্বিকভাবে পুরুষের তুলনায় এখনো নারীদের দুর্বল হিসেবে ভাবা হয়। যে কারণে সুযোগসন্ধানী চরিত্রগুলো টার্গেট হিসেবে নারীদের বেছে নেয়। সেটাও ধর্ষণের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঢিলেঢালা কর্মকাণ্ডে এখন মনোভাবটা এমনÑ যেন অপরাধ করলেও কেউ তাদের ধরতে পারবে না বা পার পেয়ে যাবে।

মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের তথ্যমতে, ধর্ষণের শিকার ৭৫ শতাংশ নারীকে স্থানীয় পুলিশ মেডিক্যাল টেস্টের নামে অপেক্ষা করতে বাধ্য করে। এর মধ্যে এফআইআর করতে অস্বীকৃতি এবং নানারকম নথিপত্র বা প্রশাসনিক ধমক প্রয়োগের মাধ্যমে মেডিক্যাল টেস্ট বিলম্বিত করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীরা নানাভাবে ধর্ষণের ঘটনাটি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এর মধ্যে টেস্টের জন্য সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এতে ভমের বিচার না পাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ও শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ-নির্যাতন

আপডেট টাইম : ১০:৩১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বাবা। গত মঙ্গলবার বাদীর (বাবা) লাশ পাওয়া যায় বাড়ির কাছের একটি ঝোপে। ২০১৬ সালে দিনাজপুরে প্রজনন অঙ্গ কেটে শিশুকে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনাটি আলোাচিত ছিল সারাদেশে। ওই মামলার অভিযুক্ত আসামি গত ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে বেরিয়ে গেছে। আরেক ঘটনায় মেহেরপুরে ৯ বছরের শিশু ধর্ষণের মামলায় আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়েই ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবারকে। এ ঘটনায় আসামিদের পক্ষ নিয়ে মামলা তুলে নিতে শিশুর পরিবারকে চাপ দেওয়ায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এভাবে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করে হত্যা-হামলার শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে। আবার তদন্ত ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণেও মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকে। সাক্ষীরাও আদালতে আসতে চাইছেন না। অনেক ক্ষেত্রে সাহস করে মামলা করার পর ভুক্তভোগী পরিবার আরও ভোগান্তির শিকার হয়ে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ ধরনের মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে

সম্পন্ন করার কথা বলা হলেও তা হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত প্রায় ৩৩ হাজার মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন। পাশাপাশি মামলার তদন্তেও কালক্ষেপণ হয়। বিচারের এমন দীর্ঘসূত্রতায় আসামিরা আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণ বা নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন খুবই কঠোর। তবে এটা বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। কারণ, আইন বাস্তবায়নে তদন্তকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুর্বলতা রয়েছে। ফলে অধিকাংশ মামলার সর্বশেষ পরিণতি সমঝোতায় গিয়ে ঠেকে। তাতে আসামি জামিন পেয়ে যায় এবং দণ্ড থেকেও মুক্ত হয়। অপরাধ করেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আসামিরা উৎসাহিত হয় এবং আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো পাশবিক ঘটনা থামনো যাচ্ছে না।

সুপ্রিমকোর্টের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন ৩২ হাজার ৯৭২টি মামলা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ১ হাজার ৬০৭টি মামলা। অন্যদিকে, পুলিশের কাছে তদন্তাধীন ২০ হাজার ১৩৫টি মামলা, যা মোট মামলার ৩৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গুর অবস্থার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হওয়া মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না। পুলিশ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে ব্যস্ত। নারী ও শিশু নির্যাতন-সংক্রান্ত মামলাগুলো তদন্তের জন্য আলাদা পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা থাকা উচিত। নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে আরও সোচ্চার হতে হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত আইন ২০১৩ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হয়। ট্রাইব্যুনাল যদি ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হয়, তা হলে তার কারণসংবলিত একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করবেন, যার একটি অনুলিপি সরকারকেও দিতে হবে। একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, নারী-শিশু নির্যাতন, দমন ও ধর্ষণের আইনটি অত্যন্ত কঠোর। কিন্তু প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। রাষ্ট্রপক্ষ যদি সবকিছু ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারে, তা হলে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নথিপত্রে তথ্য-প্রমাণাদি সঠিকভাবে উপস্থাপন না করার কারণে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। আবার বিচার বছরের পর বছর ঝুলে থাকলে বাদীপক্ষ সামাজিক নানা ধরনের বাধা ও হেনস্তার শিকার হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ১৭ হাজার ৫৭১টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অথচ এর আগের পাঁচ বছরের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৭৬৪টি, ২০২০ সালে ২২ হাজার ৫১৭, ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬, ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬ এবং ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ সর্ম্পকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ঘটনার চূড়ান্ত বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা অপরাধকে উৎসাহিত করে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার পেছনে সামাজিক অবক্ষয় অন্যতম কারণ। অসহিষ্ণুতা, শিক্ষার অভাব ও সামাজিক সুবিচারের অভাবে ধর্ষণ বাড়ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট মামলার ২০ হাজার ১৮৩টি পুলিশের কাছে তদন্তের জন্য রয়েছে। আইন অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। বর্তমানে পুলিশের কাছে সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ১ হাজার ৫৫৬, নরসিংদীতে ১ হাজার ৫৭৪ ও রংপুরে ১ হাজার ১১৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের সমাজে মনস্তাত্ত্বিকভাবে পুরুষের তুলনায় এখনো নারীদের দুর্বল হিসেবে ভাবা হয়। যে কারণে সুযোগসন্ধানী চরিত্রগুলো টার্গেট হিসেবে নারীদের বেছে নেয়। সেটাও ধর্ষণের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঢিলেঢালা কর্মকাণ্ডে এখন মনোভাবটা এমনÑ যেন অপরাধ করলেও কেউ তাদের ধরতে পারবে না বা পার পেয়ে যাবে।

মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের তথ্যমতে, ধর্ষণের শিকার ৭৫ শতাংশ নারীকে স্থানীয় পুলিশ মেডিক্যাল টেস্টের নামে অপেক্ষা করতে বাধ্য করে। এর মধ্যে এফআইআর করতে অস্বীকৃতি এবং নানারকম নথিপত্র বা প্রশাসনিক ধমক প্রয়োগের মাধ্যমে মেডিক্যাল টেস্ট বিলম্বিত করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীরা নানাভাবে ধর্ষণের ঘটনাটি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এর মধ্যে টেস্টের জন্য সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এতে ভমের বিচার না পাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।