ইতিহাসের দুয়ারে গিয়ে তামিমের ‘অভিশপ্ত’ শট

মিচেল স্টার্কের লাফিয়ে ওঠা বল তামিম ইকবালের ব্যাট ছোঁয়ার পরপরই যেন থমকে গেল পুরো ওভাল! উড়তে থাকা লাল-সবুজের পতাকাগুলো উড়ছিল না কয়েক সেকেন্ডের জন্য।

হেলমেটের ফাঁকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল তামিম কতটা হতাশ, কতটা মনক্ষুন্ন নিজের ওপর, অভিশপ্ত ওই শটের ওপর। লং লেগে বল তালুবন্দি করতেই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উল্লাস। ততক্ষণে তামিম আউট ৯৫ রানে! আবার সেই ৯৫?

ভুল পড়ছেন না। ওয়ানডে ক্রিকেটে এর আগে আরো দুবার ৯৫ রানে আউট হয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একই রানে। আজ সেই সংখ্যাটা তিনে নিয়ে গেলেন তামিম! শুধু ওয়ানডে না, টেস্টেও তামিম আউট হয়েছেন ৯৫ রানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে ১২৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা তামিমের সোমবার আবারও সুযোগ ছিল তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর। সুযোগ ছিল ক্রিকেটের গ্রেটদের পাশে বসার। কিন্তু ৫ রানের আক্ষেপে পুড়তে হলো তাকে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাত ব্যাটসম্যান টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাঈদ আনোয়ার, সৌরভ গাঙ্গুলি ও হার্শাল গিবসরা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক তামিম ইকবাল আজ তাদের পাশে নিজের নাম লেখাতে পারতেন। কিন্তু স্টার্কের ‘অভিশপ্ত’ ওই বলে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় তামিম গৌরবগাঁথা ইনিংস! ১১৪ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৫ রানের ইনিংসটি সাজান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার ২০০০ সালের ৮ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৫ রানের পর ১১ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৪ রান করেন। একই আসরের ফাইনালে সৌরভ গাঙ্গুলি সেঞ্চুরি করেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ফাইনালের আগে সেমিফাইনালে গাঙ্গুলির ব্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় ভারত। অধিনায়ক গাঙ্গুলি করেছিলেন ১৪১ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ওপেনার হার্শেল গিবস ২০০২ সালে কলম্বোয় কেনিয়ার বিপক্ষে ১১৬ রানের পর ভারতের বিপক্ষেও করেন ১১৬ রান। ২০০৬ সালে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে পরপর দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি হাঁকান উপুল থারাঙ্গা। বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ১০৫ রানের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১০ রান করেন শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি ওপেনার।

ক্রিস গেইল ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে করেছিলেন ১০৪ রান। এরপর তিন ইনিংসে রান ছিল ০, ২৪ ও ৩৪। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গেইলের রান ১০১ ও ১৩৩।

অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন ২০০৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৬ রান করেছিলেন। পরের ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে আসে ১০৫ রান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের শিখর ধাওয়ান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংস খেলার পর ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০২ রান করেন।

অভিজাত এই ক্লাবে নিজের নাম লেখাতে পারতেন তামিমও। বীরত্বের ইনিংসে একটি ভুল ইতিহাসের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দিল দেশসেরা ওপেনারকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর