শিশুর ডায়রিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তবে এটি কখনও কখনও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, বিশেষ করে শিশুর শরীরে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই ডায়রিয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সবার ধারণা রাখা অপরিহার্য।
ডায়রিয়ার লক্ষণ: ঘন ঘন পাতলা পায়খানা (দিনে তিনবারের বেশি)। পেটে ব্যথা, মোচড়ানো বা অস্বস্তি। বমি বমি ভাব বা বমি। পেট ফাঁপা ও গ্যাস, ক্ষুধামন্দা। কিছু ক্ষেত্রে মলে রক্ত বা শ্লেষ্মা দেখা যেতে পারে। জ্বর ও শরীর ঠান্ডা লাগা ছাড়াও আরও নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।
পানিশূন্যতার লক্ষণ : অত্যধিক তৃষ্ণা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, কান্নার সময় চোখে জল না আসা, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া (চামড়া টানলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে), দুর্বলতা ও ঝিমুনি।
কারণ : ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। দূষিত খাবার ও জলের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের ফলেও ডায়রিয়া হতে পারে।
চিকিৎসা : ডায়রিয়ার প্রধান চিকিৎসা হলো শরীরে জলের অভাব পূরণ করা। এজন্য ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ঙজঝ) বা খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এটি ডায়রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর শিশুকে বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। স্যালাইনের পাশাপাশি শিশুকে ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের জল, পাতলা ডালের জল, লবণ-গুড়ের শরবত, টক দইয়ের মতো তরল খাবার বেশি করে দিন। যদি শিশু বুকের দুধ পান করে, তা হলে তাকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে থাকুন। ডায়রিয়ার তীব্রতা ও সময় কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে ১০-১৪ দিন পর্যন্ত জিংক ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন। ডায়রিয়া চলাকালীন শিশুকে নরম ও সহজে হজমযোগ্য খাবার দিন। খিঁচুড়ি, মুরগির মাংসের স্যুপ, কলা ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
যখন ডাক্তার দেখাবেন : যদি শিশুর ডায়রিয়া ৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা যায়, মলে রক্ত আসে বা খুব বেশি বমি হয়, তা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিন মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে জ্বর (>৩৮ক্কঈ) হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
প্রতিরোধ : শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। খাবার তৈরির আগে ও পরে এবং শিশুকে খাওয়ানোর আগে সাবান ও জল দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া। শিশুকে পরিষ্কার পরিছন্ন পরিবেশে রাখা। জীবাণুমুক্ত জল পান করানো। খাবার ভালোভাবে ঢেকে রাখা ও তাজা খাবার খাওয়ানো। টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। শিশুদের রোটাভাইরাস টিকার মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনে রাখবেন, শিশুর ডায়রিয়া হলে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পরিচর্যা ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে সাধারণত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।