ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক সময়ের খরস্রোতা নরসুন্দা নদী এখন ধান চাষের জমি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪
  • ৪৫ বার

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী এখন ‘মৃতপ্রায়’। নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে চর। সেই চরজুড়ে ফসলি জমি। কিছু অংশ ভরাট হয়ে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়িও। খননের মাধ্যমে নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে এনে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদীর মধ্যে নরসুন্দা একটি।  পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা এলাকার মধ্য দিয়ে এসে পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে আরেকটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এটিই নরসুন্দা। এটি ‘নাগচিনি’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইটনা উপজেলার ধনু নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই নদী থেকেই আবার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা এলাকা থেকে আরেকটি শাখা বের হয়ে জাঙালিয়া ও চরফরাদী ইউনিয়নের বুক চিড়ে চরকুর্শা গ্রামের টেকেরবাড়ির পাশ দিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে পড়েছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ অংশটুকুই পাকুন্দিয়ার অংশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময়ের খরস্রোতা নরসুন্দা যৌবন হারিয়ে এখন ‘মৃতপ্রায়’। নেই পানির স্রোতে পাল তোলা নৌকা। বৈশাখ মাসে যেখানে হাঁটুজল থাকতো, সেখানে নদীর বুকজুড়ে ফসলের সমারোহ।

স্থানীয়রা জানান, এ নদী দিয়ে একসময় পাল তোলা নৌকা চলতো। মাঝি-মাল্লারা ভাটিয়ালি সুরে গান গাইতো। জাহাজে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই করে ব্যবসায়ীরা নদীপথে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন অঞ্চলে। তখন নানা জাতের দেশীয় মাছে নদী ভরপুর ছিল। আশপাশের জেলেরা এ নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কয়েক যুগ আগে এ নদীর গভীরতা ছিল ২০ থেকে ২৫ ফুট। নদীর এই জৌলুস হারিয়েছে ২০-২৫ বছর আগে।

কালের আবর্তে নদীটি এখন পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে প্রায় এক যুগ ধরে ইরি-বোরো ধান চাষ করছেন কৃষকরা। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। পাকুন্দিয়ার মানচিত্র থেকে দিনেদিনে মুছে যাচ্ছে এ নদীর নাম। অথচ এ নদী দিয়েই বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান মসনদে আলা বীর ঈশা খাঁ (১৫২৯-১৫৯৯) পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুর থেকে করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি দুর্গে নৌ-বিহারে গিয়েছিলেন।

চরকুর্শা গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, নরসুন্দা নদীতে পানি না থাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচকাজ করতে হয়। এতে কৃষিকাজে খরচ বেশি হয়। নদীতে পানি থাকলে সেচের সমস্যা হতো না। নদীটি পুনঃখনন করা হলে এই এলাকার কৃষকরা উপকৃত হতেন।

চরটেকী গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ছোট বেলায় নরসুন্দা নদীতে সাঁতার কেটেছি। মাছ ধরেছি। এখন নদী আছে, কিন্তু সেই পানি নেই। নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে নরসুন্দা এখন অনেকটাই মরে গেছে। খনন করে ফের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হলে নদীতে পানি থাকবে।

পাকুন্দিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক ও তারাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ছোটবেলায় নরসুন্দাকে একটি খরস্রোতা নদী হিসেবে দেখেছি। বড় বড় পাল তোলা পণ্য ভর্তি নৌকা আমাদের ঘাটে এসে ভিড়তো। ছোট ডিঙিতে আমরা নদীর অপর প্রান্তের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। বড় বড় কালো কালো চিংড়ি মাছের ভয়ে একা নদীতে নামতে সাহস পেতাম না। এখন এসব ভাবতে অবাক লাগে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী-খাল ও জলাশয় খনন ‘দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদীটির এ অংশটুকুও অন্তর্ভুক্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হয়ে এলেই খনন কাজ শুরু হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এক সময়ের খরস্রোতা নরসুন্দা নদী এখন ধান চাষের জমি

আপডেট টাইম : ০৭:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী এখন ‘মৃতপ্রায়’। নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে চর। সেই চরজুড়ে ফসলি জমি। কিছু অংশ ভরাট হয়ে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়িও। খননের মাধ্যমে নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে এনে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদীর মধ্যে নরসুন্দা একটি।  পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা এলাকার মধ্য দিয়ে এসে পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে আরেকটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এটিই নরসুন্দা। এটি ‘নাগচিনি’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইটনা উপজেলার ধনু নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই নদী থেকেই আবার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা এলাকা থেকে আরেকটি শাখা বের হয়ে জাঙালিয়া ও চরফরাদী ইউনিয়নের বুক চিড়ে চরকুর্শা গ্রামের টেকেরবাড়ির পাশ দিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে পড়েছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ অংশটুকুই পাকুন্দিয়ার অংশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময়ের খরস্রোতা নরসুন্দা যৌবন হারিয়ে এখন ‘মৃতপ্রায়’। নেই পানির স্রোতে পাল তোলা নৌকা। বৈশাখ মাসে যেখানে হাঁটুজল থাকতো, সেখানে নদীর বুকজুড়ে ফসলের সমারোহ।

স্থানীয়রা জানান, এ নদী দিয়ে একসময় পাল তোলা নৌকা চলতো। মাঝি-মাল্লারা ভাটিয়ালি সুরে গান গাইতো। জাহাজে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই করে ব্যবসায়ীরা নদীপথে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন অঞ্চলে। তখন নানা জাতের দেশীয় মাছে নদী ভরপুর ছিল। আশপাশের জেলেরা এ নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কয়েক যুগ আগে এ নদীর গভীরতা ছিল ২০ থেকে ২৫ ফুট। নদীর এই জৌলুস হারিয়েছে ২০-২৫ বছর আগে।

কালের আবর্তে নদীটি এখন পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে প্রায় এক যুগ ধরে ইরি-বোরো ধান চাষ করছেন কৃষকরা। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। পাকুন্দিয়ার মানচিত্র থেকে দিনেদিনে মুছে যাচ্ছে এ নদীর নাম। অথচ এ নদী দিয়েই বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান মসনদে আলা বীর ঈশা খাঁ (১৫২৯-১৫৯৯) পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুর থেকে করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি দুর্গে নৌ-বিহারে গিয়েছিলেন।

চরকুর্শা গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, নরসুন্দা নদীতে পানি না থাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচকাজ করতে হয়। এতে কৃষিকাজে খরচ বেশি হয়। নদীতে পানি থাকলে সেচের সমস্যা হতো না। নদীটি পুনঃখনন করা হলে এই এলাকার কৃষকরা উপকৃত হতেন।

চরটেকী গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ছোট বেলায় নরসুন্দা নদীতে সাঁতার কেটেছি। মাছ ধরেছি। এখন নদী আছে, কিন্তু সেই পানি নেই। নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে নরসুন্দা এখন অনেকটাই মরে গেছে। খনন করে ফের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হলে নদীতে পানি থাকবে।

পাকুন্দিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক ও তারাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ছোটবেলায় নরসুন্দাকে একটি খরস্রোতা নদী হিসেবে দেখেছি। বড় বড় পাল তোলা পণ্য ভর্তি নৌকা আমাদের ঘাটে এসে ভিড়তো। ছোট ডিঙিতে আমরা নদীর অপর প্রান্তের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। বড় বড় কালো কালো চিংড়ি মাছের ভয়ে একা নদীতে নামতে সাহস পেতাম না। এখন এসব ভাবতে অবাক লাগে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী-খাল ও জলাশয় খনন ‘দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদীটির এ অংশটুকুও অন্তর্ভুক্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হয়ে এলেই খনন কাজ শুরু হবে।