কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা গ্রামে সরকারি খাস জমিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়ি করেছেন পেকুয়া ইউএনও অফিসে কর্মরত পিয়ন সালাহ উদ্দিন। নিজের নামে কোনো জমি না থাকলেও ওই কর্মচারী ১নং খাস খতিয়ানের জায়গার উপর দ্বিতল বাড়ি তৈরি করলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূমি অফিস কোনো বাধা দেয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে খাস জমিতে বাসভবন তৈরি করেছেন সরকারী কর্মচারী সালাহ উদ্দিন। কিন্তু, সরকারি অফিসের প্রভাবশালী ও দাপুটে কর্মচারী হওয়ায় কেউ তাকে বাধা দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পায়নি।
সরেজমিনে গত ২৫ জানুয়ারি সকালে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল বিশিষ্ট এই ভবনের দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। বাসভবনের দেয়ালের বাইরেও টাইলস লাগানো হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় সালাহ উদ্দিন পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তবে নিচ তলায় এখনও কাজ শেষ হয়নি। ১ম ও ২য় তলায় ২২ কক্ষ বিশিষ্ট সুবিশাল এই বাড়িটি নির্মাণ করতে অন্তত কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে পেকুয়া ইউএনও অফিসে কর্মরত পিয়ন সালাহ উদ্দিন। চতুর্থ শ্রেণির চাকরি করে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাজকীয় বাসভবন নির্মাণের ঘটনায় স্থানীয়রাও হতবাক।
ইউএনও অফিসে চাকরি ছাড়া সালাহ উদ্দিন ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দৃশ্যমান আর কোনো আয়ের উৎস্য নেই বলে সরেজমিনে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরশাদুল করিম জানান, ‘সরকারি অফিসের পিয়ন হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দিনে দিনে খাস জমির গাছপালা কেটে পাহাড়ি লাল মাটি এনে ভরাট করে অবৈধভাবে বাসভবন নির্মাণ করেছেন সালাহ উদ্দিন। রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া সরকারি অফিসের পিয়ন সালাহ উদ্দিনের আয়ের উৎস্য উদঘাটন করতে স্থানীয়রা দুদকের তদন্তও দাবি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক মাস পূর্বে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে বদলি হয়ে এসে পেকুয়া ইউএনও অফিসে যোগদান করেন।
উখিয়া ইউএনও অফিসের কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উখিয়া ইউএনও অফিসে কর্মরত থাকাকালে ইউএনও’র নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সালাহ উদ্দিন। আর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন সালাহ উদ্দিন।
জানা যায়, ২০০৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ২৪০০ টাকা বেতন স্কেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পিয়ন পদে যোগদান করেন সালাহ উদ্দিন।
চাকরিতে যোগদান করে সালাহ উদ্দিনকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। সোনার হরিণ পেয়ে দু’হাতে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। যেখানেই পোস্টিং নিয়ে চাকরি করেছেন সেখানেই অফিসের বড় কর্তাদের ম্যানেজ করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে আয় করেছেন টাকা আর টাকা। আর সেই অবৈধ আয়ের টাকা দিয়েই নিজ গ্রামে সরকারি ১নং খাস জমি দখল করে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন সুবিশাল বাড়ি। এভাবে তার উত্থান দেখে খোদ নিজ এলাকার লোকজনও হতবাক হয়েছেন। অফিস পাড়ায় বেশ দাপুটে আর ক্ষমতাধর কর্মচারী হিসেবে তার নামডাকও রয়েছে। এ ভয়ে স্থানীয় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেকুয়া ইউএনও অফিসের পিয়ন সালাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি বাড়ি করে পরিবারের সবাইকে বসবাসের অধিকার তার রয়েছে তিনি বৈধভাবে আয় করে বাড়িটি করেছেন। খাস জায়গায় কেন বাড়ি করেছেন জানতে চাইলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, খাস জায়গায় স্থায়ীভাবে কংক্রিটের পাকা স্থাপনা নির্মাণের কোনো অধিকার কারও নেই’, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান জানান, পেকুয়া ইউএনও অফিসের কর্মচারী কর্তৃক খাস জায়গায় বাড়ি তৈরির বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখবেন।