ঢাকা ১২:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোদির সফর কী পেল বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুন ২০১৫
  • ৪০৮ বার
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি ফিরে যাওয়ার পর ঢাকায় শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। আদতে বাংলাদেশ কী পেল, তা নিয়েই চলছে আলোচনা। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, সফরে আপাতত ভারত বেশি লাভবান হলেও বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতে লাভবান হবে না, তা বলা যায় না। সীমান্ত চুক্তি খুবই আশাবাদী হওয়ার মতো একটি বিষয়। কিন্তু তিস্তা নিয়ে ভারতের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকাটা খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন তারা। মোদির সফরকালে মোট ২২ চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সই হয়েছে। অনেকে বলছেন, এসব চুক্তি ধারাবাহিকতারই অংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে যে আশাবাদ জাগ্রত হয়েছিল, বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তিস্তা নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি না থাকাটা এ আশাভঙ্গেরই প্রতিফলন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কারণে মোদি তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই বলতে পারলেন না। যেন মোদির চেয়ে মমতাই বেশি ক্ষমতাবান। আরেকটি বিষয় হলো, নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গী ছিল খুবই কম। ফলে এটা প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল, এ সফর থেকে তেমন ভালো কিছু পাওয়া যাবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মোদির সফরে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নেই। এ ধরনের একটি প্রতিনিধি দল থাকলে নতুন একটি বার্তা পাওয়া যেত। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যে ২২ চুক্তি সই হয়েছে তাতে কোন দেশ লাভবান হলো, তা বলা মুশকিল। তবে আপাতত ভারত লাভবান হয়েছে বলে মনে হলেও ভবিষ্যতে আমরা যে লাভবান হব না, তা নয়। কারণ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গেলে অনেক বিষয়ে সক্ষমতা থাকতে হয়; নেতৃত্বেরও দক্ষতা থাকতে হয়। সফরের ইতিবাচক দিক হলো দুই দেশের মধ্যে অবশেষে সীমান্ত চুক্তি হলো। আর নেতিবাচক বিষয় হলো তিস্তা চুক্তি না হওয়া। এ বিষয়ে ভারতের মনোভাবও মোদির বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আদৌ তিস্তা চুক্তি হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা কোনো ধারণা পেলাম না। স্বাক্ষরিত ২২ চুক্তির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান না ইতিবাচক, না নেতিবাচক। কিছু চুক্তি আছে যেগুলো বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কানেকটিভিটি সংক্রান্ত চুক্তির ফলে ভারতই বেশি লাভবান হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, ভারতের পাওয়া এক্ষেত্রে অসামান্য। কারণ তাদের উত্তরের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যে দীর্ঘদিনের সমস্যা, সেটা এখন প্রায় মিটে যাবে। তবে ভালো কথা হলো, ছিটমহলের মানুষরা এখন নতুন প্রাণ পাবে। সীমান্ত আরও সুসংহত হলো। এছাড়া ভারতের বিনিয়োগ আসছে- এটাও ভালো খবর।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, গ্লাসের মধ্যে আগে ছিল অর্ধেকটা খালি। এখন খালি জায়গায় অক্সিজেনে পূর্ণ। সেই অক্সিজেন ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়া যাবে। ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হেমায়েত উদ্দিন বলেছেন, সফরের সাফল্যনির্ভর করবে ভবিষ্যতের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্টান্ডিং সই করা ভালো কথা, কিন্তু পরবর্তীতে সেটাকে ফলোআপ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে শক্তিশালী ও দৃঢ় করতে এ সফর যথেষ্ট সফল। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত যে জায়গায় অবস্থান করছে, সেটি নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ সফরে যা যা প্রত্যাশিত ছিল, সেগুলোই হয়েছে। আর অপ্রত্যাশিত আশা হিসেবে তিস্তা চুক্তি পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, যেসব চুক্তি হয়েছে, এগুলো বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূ করার দায়িত্ব দুই দেশের সরকারের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ যাতে যথাযথভাবে রক্ষা হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মোদির সফর কী পেল বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৬:৪২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুন ২০১৫
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি ফিরে যাওয়ার পর ঢাকায় শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। আদতে বাংলাদেশ কী পেল, তা নিয়েই চলছে আলোচনা। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, সফরে আপাতত ভারত বেশি লাভবান হলেও বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতে লাভবান হবে না, তা বলা যায় না। সীমান্ত চুক্তি খুবই আশাবাদী হওয়ার মতো একটি বিষয়। কিন্তু তিস্তা নিয়ে ভারতের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকাটা খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন তারা। মোদির সফরকালে মোট ২২ চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সই হয়েছে। অনেকে বলছেন, এসব চুক্তি ধারাবাহিকতারই অংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে যে আশাবাদ জাগ্রত হয়েছিল, বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তিস্তা নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি না থাকাটা এ আশাভঙ্গেরই প্রতিফলন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কারণে মোদি তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই বলতে পারলেন না। যেন মোদির চেয়ে মমতাই বেশি ক্ষমতাবান। আরেকটি বিষয় হলো, নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গী ছিল খুবই কম। ফলে এটা প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল, এ সফর থেকে তেমন ভালো কিছু পাওয়া যাবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মোদির সফরে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নেই। এ ধরনের একটি প্রতিনিধি দল থাকলে নতুন একটি বার্তা পাওয়া যেত। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যে ২২ চুক্তি সই হয়েছে তাতে কোন দেশ লাভবান হলো, তা বলা মুশকিল। তবে আপাতত ভারত লাভবান হয়েছে বলে মনে হলেও ভবিষ্যতে আমরা যে লাভবান হব না, তা নয়। কারণ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গেলে অনেক বিষয়ে সক্ষমতা থাকতে হয়; নেতৃত্বেরও দক্ষতা থাকতে হয়। সফরের ইতিবাচক দিক হলো দুই দেশের মধ্যে অবশেষে সীমান্ত চুক্তি হলো। আর নেতিবাচক বিষয় হলো তিস্তা চুক্তি না হওয়া। এ বিষয়ে ভারতের মনোভাবও মোদির বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আদৌ তিস্তা চুক্তি হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা কোনো ধারণা পেলাম না। স্বাক্ষরিত ২২ চুক্তির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান না ইতিবাচক, না নেতিবাচক। কিছু চুক্তি আছে যেগুলো বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কানেকটিভিটি সংক্রান্ত চুক্তির ফলে ভারতই বেশি লাভবান হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, ভারতের পাওয়া এক্ষেত্রে অসামান্য। কারণ তাদের উত্তরের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যে দীর্ঘদিনের সমস্যা, সেটা এখন প্রায় মিটে যাবে। তবে ভালো কথা হলো, ছিটমহলের মানুষরা এখন নতুন প্রাণ পাবে। সীমান্ত আরও সুসংহত হলো। এছাড়া ভারতের বিনিয়োগ আসছে- এটাও ভালো খবর।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, গ্লাসের মধ্যে আগে ছিল অর্ধেকটা খালি। এখন খালি জায়গায় অক্সিজেনে পূর্ণ। সেই অক্সিজেন ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়া যাবে। ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হেমায়েত উদ্দিন বলেছেন, সফরের সাফল্যনির্ভর করবে ভবিষ্যতের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্টান্ডিং সই করা ভালো কথা, কিন্তু পরবর্তীতে সেটাকে ফলোআপ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে শক্তিশালী ও দৃঢ় করতে এ সফর যথেষ্ট সফল। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত যে জায়গায় অবস্থান করছে, সেটি নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ সফরে যা যা প্রত্যাশিত ছিল, সেগুলোই হয়েছে। আর অপ্রত্যাশিত আশা হিসেবে তিস্তা চুক্তি পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, যেসব চুক্তি হয়েছে, এগুলো বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূ করার দায়িত্ব দুই দেশের সরকারের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ যাতে যথাযথভাবে রক্ষা হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।