ভীতি ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু

 হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৭ সালের সুপারিশ ২০১৯ সালে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি :: স্বাস্থ্য অধিদফতর নিজেদের করা ‘মৌসুম এডিস জরিপে ২০২১’ এর সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি :: লার্ভা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ স্বাস্থ্য বিভাগের বা অন্য কোনো বিভাগের নেই : বিশেষজ্ঞদের

করোনাভাইরাস ‘অদৃশ্য’ হলেও ডেঙ্গু জ্বর ছড়ানো এডিস মশা দৃশ্যমান। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায়, মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড-স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু জেঙ্গু জ্বর ঠেকাতে এডিস মশার বিস্তার রোধে লার্ভা মেরে ফেলাই যথেষ্ট। গবেষকদের মতে বাসাবাড়ির ফুলের টব, পচা নর্দমার দুর্গন্ধযুক্ত পানি, ময়লা-আবর্জনা, ডাবের খোসা ও বিভিন্ন কৌটায় জমে থাকা ময়লা পানি এবং পরিত্যক্ত স্থাপনায় পানি জমে থাকলে সেখানেই এডিস মশা বংশবিস্তার করে। করোনাভাইরাস ঠেকানো একটু কঠিন হলেও এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানো খুবই সহজ। শুধু রাজধানী ঢাকার বাসাবাড়ির মালিক এবং বসবাসকারী নাগরিকরা একটু সচেতনভাবে নিজের মালিকানাধীন স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেই এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। এক সময় ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা নির্মূল হয়ে যাবে। অথচ নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তথা নিজেদের বিছানাপত্র ঝকঝকে-তকতকে রাখলেও আশপাশের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন রাখছেন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রতিদিন মশা মারতে ‘কামান দাগানো’ বক্তৃতা দিলেও এডিস মশা তার বংশবিস্তার করেই যাচ্ছে। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার ঘটছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা মারতে শুধু সিটি কর্পোরেশনের ওপর নির্ভর করতে চলবে না। নাগরিক হিসেবে নিজেদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সকলকে সচেতন হতে হবে। সবাই যদি নিজ নিজ বাসাবাড়ির এবং এর আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখি, তাহলে মশা বংশবিস্তার করবেই। দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। যার মধ্যে উত্তরের ৪১টি এবং দক্ষিণের ৫৯টি এলাকা এডিস মশা বেশি জরিপে চিহ্নিত হয়। কিন্তু ওইসব এলাকার বসবাসকারীদের মধ্যে তেমন সচেতন তা দেখা যায়নি। নিজেরা যতি আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতেন তাহলে এডিস মশার দাপট এত বাড়ত না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে এডিস মশা নিধনের বাসাবাড়িতে অভিযান, ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মশার লার্ভা পেলে বাড়ির মালিকের জরিমানা করা হয়। এমনকি এডিস মশার লার্ভা নিধনে ‘ডাবের খোসা’ সিটি কর্পোরেশনে জমা দিলে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সে কার্যক্রমের সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এডিস মশা নির্বিঘ্নে বংশবিস্তার করে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সে সময় এডিস মশা নিধনের কর্মসূচি নেয়া হলেও তাতে সুফল মেলেনি। এমনকি এসিড মশা মারতে ‘নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ’ ওষুধ ছেঁটানোর অভিযোগ উঠে। শুধু তাই নয়, এডিস মশা নিধনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে সংস্থাটির রোগতত্ত্ববিদ কে কৃষ্ণমূর্তিকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়ার জন্য। সে সময় ‘মিডটার্ম প্ল্যান ফর কন্ট্রোলিং অ্যান্ড প্রিভেন্টিং এডিসবর্ন ডেঙ্গু অ্যান্ড চিকুনগুনিয়া ইন বাংলাদেশ’ নামের ২২ পৃষ্ঠার একটি পরিকল্পনা দলিল তৈরি করা হয়। ওই পরিকল্পনা ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক তথা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৪৩৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৬০ জনে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার রাজধানীর এসিড মশা প্রসঙ্গে বলেন, বৃষ্টিপাত শুরু হলে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। এডিস মশার ঘনত্ব বাড়লে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। তাই এখনই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা শুরু করা উচিত। সেইসঙ্গে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া জরুরি। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও এডিস মশা নির্মূলে এগিয়ে আসতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোলরুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া ৪৩৮ জনের মধ্যে ৩১৫ জন ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২৩ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১৯১ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ৩৬৯ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।

রাজধানী ঢাকার বাইরে আরো কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে, মানুষ মারাও যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। তবে করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১০৫ জন মারা যায়।

জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোগতত্ত্ববিদকে কৃষ্ণমূর্তিকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়ার জন্য। সরকারের কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে কে কৃষ্ণমূর্তি ‘মিডটার্ম প্ল্যান ফর কন্ট্রোলিং অ্যান্ড প্রিভেন্টিং এডিসবর্ন ডেঙ্গু অ্যান্ড চিকুনগুনিয়া ইন বাংলাদেশ’ নামের ২২ পৃষ্ঠার একটি পরিকল্পনা দলিল তৈরি করেন। ওই দলিলে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল্যায়ন করার পশাপাশি রোগতত্ত্ববিদ, কীটতত্ত্ববিদ, অণুজীববিজ্ঞানী, তথ্য-শিক্ষা-যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়। ১২টি মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে বলা হয়। ওই পরিকল্পনা ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে এবং কমছে। এ থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কার্যকর কোনো উদ্যোগ স্বাস্থ্য বিভাগের বা অন্য কোনো বিভাগের নেই। এ নিয়ে অতীতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন, তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি।

রাজধানী ঢাকার এডিস মশা বিস্তার এবং ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর কারণ খুঁজতে দু’টি জরিপ করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে একটি গবেষণা জরির করা হয়। অন্যটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করা জরিপের ফলাফল গত বছরের ২২ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘মৌসুম এডিস জরিপে ২০২১’ বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি। সবচেয়ে বেশি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ মগবাজার, নিউ ইস্কাটন, বাসাবো ও গোড়ান এলাকায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ‘মৌসুম এডিস জরিপ ২০২১’ এর ফলাফলে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে জরিপ পরিচালনা করে। যার মধ্যে উত্তরের ৪১টি এবং দক্ষিণের ৫৯টি এলাকা। জরিপে ৩ হাজার বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়। দুই সিটি কর্পোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের ১৯টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৪০-এর বেশি। দুই সিটি কর্পোরেশনের ৫৬টি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ২০ বা তার বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো ও গোড়ান এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স সর্বোচ্চ ৭৩ দশমিক ৩। এছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ৬৬ দশমিক ৭, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরকে মিশন রোড ও টিকাটুলিতে ৫০, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রীতে ৪০ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিন্টো রোড ও বেইলি রোডে ব্রুটো ইনডেক্স ৪০ শতাংশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৫৬ দশমিক ৭ পাওয়া গেছে। এই ওয়ার্ডে রয়েছে মগবাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা। এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নিকুঞ্জ নিয়ে গড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ৪৮ দশমিক ৪। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর ও দারুস সালাম এলাকায় ৪৬ দশমিক ৭, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ায় ৪৩ দশমিক ৩ এবং মহাখালী ও নিকেতন এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৪০।

অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফলে তুলে ধরে বলা হয়, রাজধানীতে মশার ঘনত্ব অন্য সময়ে যা থাকে তার চেয়ে চারগুণ বেশি বেড়েছে। মশার ঘনত্ব কেমন বাড়ছে সেটা জানতে ঢাকার উত্তরা, খিলগাঁও, শনির-আখড়া, শাঁখারিবাজার, মোহাম্মদপুর ও পরীবাগসহ ৬টি এলাকার নমুনা নিয়ে গবেষণা করা হয়। এসব জায়গায় গড় ঘনত্ব প্রতি ডিপে (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) মশা দেখা যায় ৬০টিরও বেশি। অন্যান্য সময় পাওয়া যেত ১৫ থেকে ২০টি।

কীট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে মশা নিধনের নানা কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যথাসময়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এডিস মশার লার্ভা নিয়ে গলাবাজি করে সময় নষ্ট করায় মশার প্রাদুর্ভাব বেগে গেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৫ জন। মহানগরীর পাশাপাশি গ্রামেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, সেপ্টেম্বর মাসের ২০ দিনে নগরীতে ১৭৫ জন এবং জেলায় ৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। আগস্টে মহানগরীতে ৬৮ জন, জেলায় ৮ জন আক্রান্ত হন। জুলাই মাসে মহানগরীতে ৪৬ জন এবং জেলায় ৪ জন। জুন মাসে মহানগরীতে ১৩ জন এবং জেলায় ৪ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩৭১ জনের মধ্যে মহানগরীতে ৩০৮ জন এবং জেলায় ৫৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ১৭০ জন, মহিলা ১০১ জন ও শিশু ১০০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৫ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৮ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত কারও মৃত্যু না হলেও প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনুসন্ধানে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল চট্টগ্রামে এসে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা ডেঙ্গু আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করছেন। গত শনিবার আইইডিসিআরের চিকিৎসক রাফিয়া বিনতে রউফের নেতৃত্বে দলটি চট্টগ্রাম আসে। চার সদস্য দলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ চিকিৎসা কর্মকর্তা ক্যা থোয়াই প্রু, টেকনোলজিস্ট আজিজুর রহমান ও নমুনা সংগ্রাহক মাহবুব আলম খান। অনুসন্ধান শেষে ঢাকায় ফিরে তিন দিনের মধ্যে দলটি প্রতিবেদন জমা দেবে। অপরদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহতভাবে বাড়লেও এ রোগের বাহক এডিস মশা নির্মূলে সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেই। এডিস মশার প্রজননস্থলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জরিমানার মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত আছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর