মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বামনহাজরা গ্রাম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীভাঙনের শিকার হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙালী নদীর বাঁ তীরের গ্রাম বামনহাজরা জীর্ণদশা ধারণ করেছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে বদলে যাচ্ছে গ্রামের সীমানাও। বন্যা আসার আগেই গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়ে হারিয়ে গেছে। এ গ্রামের একই পরিবারের চার মুক্তিযোদ্ধার দুজনের কবরই এর মধ্যে হারিয়ে গেছে বাঙালি নদীর গর্ভে।

 অসময়ের হঠাৎ ভাঙনে দিশাহারা গ্রামবাসীর এ জন্য বালুখেকোদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙন শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গায়ে লাগায়নি। এখন বাড়িঘর, গাছপালা, জমি নিয়ে গ্রামবাসীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার উত্তরে দেওয়ানতলা রেল সেতুর পূর্ব পাশের এ গ্রামে আগে  কখনো নদীভাঙনের আশঙ্কা ছিল না। ওই রেল সেতুটিই ছিল তাদের গ্রাম রক্ষা বাঁধ। কিন্তু কয়েক বছর আগে রেল সেতুর কিছুটা উজানে দেওয়ানতলা সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এই গ্রাম রক্ষার পরিকল্পনা না থাকায় এই সেতুটির কারণে কয়েক বছর ধরে বামনহাজরা গ্রামে নদীভাঙন দেখা দেয়।

ক্ষুব্ধ মঞ্জু মিয়া বলেন, কয়েক বছর ধরে নদীর ওই এলাকায় প্রভাবশালী বালুখেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। ফলে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে নদীর ডান তীরে খননের কাজ শুরু হতেই বিপর্যয়ের শুরু।

গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে নদীর পানি বাড়ায় উত্তেলন করা বালুর স্তূপ একধরনের বাঁধে রূপ নিয়ে উল্টো দিকের এই গ্রামে তীব্র ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমাজসেবী ফারুক মিয়া বলেন, বালুখেকোরা সবার নাকের ডগায় এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও তাদের ঠেকানো যায়নি। অন্যদিকে খননের পর বালুমাটি নদীর তীরে দেওয়া গেলে এই পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হতো।

ওই গ্রামের বাসিন্দা মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান অভিযোগ করেন, গত বছরের বর্ষা মৌসুমে এ গ্রামের একই পরিবারের চার মুক্তিযোদ্ধার দুজনের কবরই হারিয়ে গেছে বাঙালী নদীর গর্ভে। প্রশাসনের কাছে অনেক আবেদন করেও গ্রামটির ভাঙন প্রতিরোধে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বছর বর্ষা আসার আগেই চার মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও বামনহাজরা গ্রামের বাসিন্দাদের ৮-১০টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে গত এক সপ্তাহের মধ্যে। কিছুটা সচ্ছল পরিবারগুলো অন্যত্র বাড়ি সরিয়ে নিলেও অসচ্ছল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভিটেমাটি হারিয়ে একরকম পথে বসেছে। ভাঙন রোধে বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে গ্রামটির বিস্তীর্ণ এলাকার পাশাপাশি দেওয়ানতলা রেল সেতুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হতে পারে।

এদিকে অসময়ে নদীভাঙনের খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান ও ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা ভাঙনকবলিত এলাকাটি ঘুরে দেখেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এখানকার ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ আজ-কালের মধ্যেই প্রাথমিক কর্মকাণ্ড শুরু করবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর