দুই দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পণ্যটি আসা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশের খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে এ দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ও পাইকারিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই রাতের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকায় উঠেছে। এসময় পাইকারি বাজারে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) পেঁয়াজের দাম প্রায় ৫০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মূলত খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি বন্ধ হওয়ার সংবাদে দেশীয় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ ধরে রাখছেন। এ কারণে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। তবে বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। আশা করা যাচ্ছে, দ্রæত পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ধঘুরে দেয়া যায়, গত মঙ্গলবার পাল্লায় (পাঁচ কেজি) ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। একদিন পর গত বুধবার পাল্লায় বেড়েছে আরও ২০ টাকা। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারেরা দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন।

  এদিকে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানির অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-উর-রসিদ বলেন, আমদানির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপরে নতুন করে আর পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমরা এখন অনুমোদন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছি। যেহেতু সরকার থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানায়নি, সুতরাং দ্রæত অনুমোদন পাওয়ার আশা আছে। তখন বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না থাকায় আমরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছি না। সে জন্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই।
দেশের কৃষকদের সুরক্ষা দিতে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র। এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে খাতুনগঞ্জ পাইকারি মোকামে গত বুধবার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অবশ্য চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার বড় অংশই দেশীয় ফলন দিয়ে মেটানো হয়। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ২২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, যা চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় আমদানি করা পেঁয়াজ দিয়ে।

আইপির মেয়াদ শেষ হওয়ায় হিলি দিয়ে বন্ধ রয়েছে পেঁয়াজ আমদানি
হিলি সংবাদদাতা জানান, আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৫ দিন পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এতে সরবরাহ কমায় খুচরা বাজারে বাড়ছে দাম। মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে আমদানি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৯ টাকা করে। এতে দেশীয় পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে। এদিকে হঠাৎ করে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের সবকটি দোকানেই ভারতীয় ও দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম রয়েছে। এরপরেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। ৩ দিন আগেও প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরাতে ১৫ থেকে ১৬ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দাম বেড়ে সেই পেঁয়াজই ২৮-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে দেশীয় পেঁয়াজও ৩ দিনের ব্যবধানে ২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত পাঁচ দিন ধরে ভারত থেকে কোনও পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এর ফলে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। আর আমদানিকারকদের ঘরে যেসব পেঁয়াজ মজুত আছে তারা এখন ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এ কারণে খুচরা বাজারে বাড়ছে দাম। একইসঙ্গে সরবরাহ কমায় দেশীয় পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে। তবে নতুন করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

হিলি বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি দিয়ে সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। এরপর আইপি মেয়াদ শেষ হওয়ায় বন্দর দিয়ে নতুন কোনও পেঁয়াজ আসেনি।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর