ঢাকা ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক মাসে গ্রাহক কমল ৬৩ লাখ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১
  • ১৫২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) নিবন্ধিত গ্রাহক কমে গেছে ৬৩ লাখের বেশি। এর সঠিক কারণ স্পষ্ট নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর বা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা। ফলে শুরু থেকেই এ সেবায় বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। কিন্তু হঠাৎ এর ছন্দপতন হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজারে দাঁড়ায়। মার্চে যা ছিল ১০ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার। সে হিসাবে ১ মাসের ব্যবধানে এমএফএস সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক কমেছে ৬৩ লাখ ২০ হাজার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এতসংখ্যক নিবন্ধিত গ্রাহক কমে যাওয়া অস্বাভাবিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক কমেছে। এছাড়া ইউক্যাশ বন্ধ করে নতুন সেবা ‘উপায়’ চালু করেছে। ইউক্যাশের গ্রাহক উপায়ে স্থানান্তর করা হয়েছে ওই তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এসব কারণে নিবন্ধিত গ্রাহক কমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমএফএস সেবা ‘ইউক্যাশ’ ছিল। তারা এটি বন্ধ করে ‘উপায়’ নামের নতুন সেবা চালু করেছে। ‘ইউক্যাশ’ থেকে ‘উপায়’ যে গ্রাহকগুলো নিয়েছে ওই ডাটাগুলো সংযুক্ত করা হয়নি। একইভাবে অন্যান্য ব্যাংকেও এ ধরনের ঘটনা আছে। তাই গ্রাহক কমেছে। এসব যুক্ত করলে গ্রাহক আবার বাড়বে বলে জানান তিনি।

বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম যুগান্তরকে বলেন, শিওর ক্যাশ বন্ধ হয়ে গেছে। তার একটা প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া বড় কোনো কারণ দেখছি না। এ একটি সূচক ছাড়া আর সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী বলে জানান তিনি।

এমএফএসের নিয়ম অনুযায়ী, টানা ৩ মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে ‘নিষ্ক্রিয় হিসাব’ বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক কমলেও ‘সক্রিয় গ্রাহক’ বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজারে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০ তে। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে লেনদেনও বেড়েছে। এমএফএসে এপ্রিলে লেনদেন হয়েছে ৬৩ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’র তথ্য এখনও সংযুক্ত করা হয়নি।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইল ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন ?সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি টাকা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। সেবার বিল ৯৬২ কোটি টাকা ও কেনাকাটার বিল ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এক মাসে গ্রাহক কমল ৬৩ লাখ

আপডেট টাইম : ০২:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) নিবন্ধিত গ্রাহক কমে গেছে ৬৩ লাখের বেশি। এর সঠিক কারণ স্পষ্ট নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর বা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা। ফলে শুরু থেকেই এ সেবায় বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। কিন্তু হঠাৎ এর ছন্দপতন হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজারে দাঁড়ায়। মার্চে যা ছিল ১০ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার। সে হিসাবে ১ মাসের ব্যবধানে এমএফএস সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক কমেছে ৬৩ লাখ ২০ হাজার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এতসংখ্যক নিবন্ধিত গ্রাহক কমে যাওয়া অস্বাভাবিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক কমেছে। এছাড়া ইউক্যাশ বন্ধ করে নতুন সেবা ‘উপায়’ চালু করেছে। ইউক্যাশের গ্রাহক উপায়ে স্থানান্তর করা হয়েছে ওই তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এসব কারণে নিবন্ধিত গ্রাহক কমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমএফএস সেবা ‘ইউক্যাশ’ ছিল। তারা এটি বন্ধ করে ‘উপায়’ নামের নতুন সেবা চালু করেছে। ‘ইউক্যাশ’ থেকে ‘উপায়’ যে গ্রাহকগুলো নিয়েছে ওই ডাটাগুলো সংযুক্ত করা হয়নি। একইভাবে অন্যান্য ব্যাংকেও এ ধরনের ঘটনা আছে। তাই গ্রাহক কমেছে। এসব যুক্ত করলে গ্রাহক আবার বাড়বে বলে জানান তিনি।

বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম যুগান্তরকে বলেন, শিওর ক্যাশ বন্ধ হয়ে গেছে। তার একটা প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া বড় কোনো কারণ দেখছি না। এ একটি সূচক ছাড়া আর সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী বলে জানান তিনি।

এমএফএসের নিয়ম অনুযায়ী, টানা ৩ মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে ‘নিষ্ক্রিয় হিসাব’ বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক কমলেও ‘সক্রিয় গ্রাহক’ বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজারে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০ তে। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে লেনদেনও বেড়েছে। এমএফএসে এপ্রিলে লেনদেন হয়েছে ৬৩ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’র তথ্য এখনও সংযুক্ত করা হয়নি।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইল ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন ?সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি টাকা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। সেবার বিল ৯৬২ কোটি টাকা ও কেনাকাটার বিল ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।