ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কাজে আগের ছোট-বড় গোনাহ ক্ষমা করেন আল্লাহ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৯:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য যে কত উদার সে কথা হয়তোবা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সুযোগ রেখে দিয়েছেন। সকল অপরাধের ক্ষমার জন্য শুধু ভাল মনে আল্লাহ’র চাইতে হবে। তাহলেই আল্লাহ দিতে প্রস্তুত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে (হে রাসুল!) আপনি তাদের বলে দিন, যদি তারা এর থেকে বিরত হয় তাহলে অতিতে যা হয়েছে সব ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যদি তা পুনরায় করে তবে পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর) রীতি তো গত হয়েছে।’ (সূরা আনফাল : আয়াত ৩৮)

হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন- বান্দা যখন উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহণ করেন, আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। এরপর শুরু হয় প্রতিদান; একটি সৎকাজের বিনিময় দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত। আর একটি মন্দ কাজের বিনিময়ে ঠিক তার সমপরিমাণ মন্দ প্রতিফল দেয়া হয় (এর বেশি নয়)। অবশ্য আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেন তবে সেটা ভিন্ন কথা।’ (বুখারি)

কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিসের বর্ণনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কোন কাজে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার আগের সব গোনাহ শর্তহীনভাবে ক্ষমা করে দেন। কুরআন-সুন্নাহর এ ঘোষণা অমুসলিমদের জন্য; যখন তারা নিজ নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি নিজেই তা বর্ণনা করেন – আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ করলাম; হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দেন। আমি বায়আত গ্রহণ করতে চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, (তখন) আমি আমার হাত টেনে নিলাম।

(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আমর, কী ব্যাপার? (অর্থাৎ তোমার হাত সরিয়ে নিলে কেন?)
তিনি বলেন, আমি বললাম- তার (বাইয়াত গ্রহণের) আগে আমার একটি শর্ত আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- কী শর্ত? আমি বললাম, আল্লাহ যেন আমার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।

 

তিনি বললেন, আমর! তুমি কি জান না যে-
ইসলাম (গ্রহণ করলে) আগের সব অন্যায়/গোনাহ মিটিয়ে দেয়?
হিজরত (করলে) আগের সব গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়? এবং
হজ আগের সব গোনাহ মিটিয়ে দেয়?’ (মুসলিম)

কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম গ্রহণ করলে, কুফরি থেকে বিরত থাকলে, নাস্তিকতা ছেড়ে দিলে কিংবা শিরকসহ অন্যান্য সব ছোট-বড় গোনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন। ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- হজরত আমর ইবনুল আস কর্তৃক বর্ণিত হাদিস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম গ্রহণ, হিজরত করা এবং হজের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা ফুটে উঠেছে। আর এর প্রত্যেকটি কাজেই মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার জীবনের ছোট-বড় সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (শরহে মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে ইসলামের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের তাওফিক দান করুন। কুফরি থেকে ফিরে থাকার তাওফিক দান করুন। শিরক করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করে গোনাহ মুক্ত জীবন লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে কাজে আগের ছোট-বড় গোনাহ ক্ষমা করেন আল্লাহ

আপডেট টাইম : ১১:২৯:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য যে কত উদার সে কথা হয়তোবা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সুযোগ রেখে দিয়েছেন। সকল অপরাধের ক্ষমার জন্য শুধু ভাল মনে আল্লাহ’র চাইতে হবে। তাহলেই আল্লাহ দিতে প্রস্তুত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে (হে রাসুল!) আপনি তাদের বলে দিন, যদি তারা এর থেকে বিরত হয় তাহলে অতিতে যা হয়েছে সব ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যদি তা পুনরায় করে তবে পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর) রীতি তো গত হয়েছে।’ (সূরা আনফাল : আয়াত ৩৮)

হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন- বান্দা যখন উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহণ করেন, আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। এরপর শুরু হয় প্রতিদান; একটি সৎকাজের বিনিময় দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত। আর একটি মন্দ কাজের বিনিময়ে ঠিক তার সমপরিমাণ মন্দ প্রতিফল দেয়া হয় (এর বেশি নয়)। অবশ্য আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেন তবে সেটা ভিন্ন কথা।’ (বুখারি)

কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিসের বর্ণনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কোন কাজে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার আগের সব গোনাহ শর্তহীনভাবে ক্ষমা করে দেন। কুরআন-সুন্নাহর এ ঘোষণা অমুসলিমদের জন্য; যখন তারা নিজ নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি নিজেই তা বর্ণনা করেন – আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ করলাম; হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দেন। আমি বায়আত গ্রহণ করতে চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, (তখন) আমি আমার হাত টেনে নিলাম।

(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আমর, কী ব্যাপার? (অর্থাৎ তোমার হাত সরিয়ে নিলে কেন?)
তিনি বলেন, আমি বললাম- তার (বাইয়াত গ্রহণের) আগে আমার একটি শর্ত আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- কী শর্ত? আমি বললাম, আল্লাহ যেন আমার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।

 

তিনি বললেন, আমর! তুমি কি জান না যে-
ইসলাম (গ্রহণ করলে) আগের সব অন্যায়/গোনাহ মিটিয়ে দেয়?
হিজরত (করলে) আগের সব গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়? এবং
হজ আগের সব গোনাহ মিটিয়ে দেয়?’ (মুসলিম)

কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম গ্রহণ করলে, কুফরি থেকে বিরত থাকলে, নাস্তিকতা ছেড়ে দিলে কিংবা শিরকসহ অন্যান্য সব ছোট-বড় গোনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন। ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- হজরত আমর ইবনুল আস কর্তৃক বর্ণিত হাদিস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম গ্রহণ, হিজরত করা এবং হজের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা ফুটে উঠেছে। আর এর প্রত্যেকটি কাজেই মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার জীবনের ছোট-বড় সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (শরহে মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে ইসলামের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের তাওফিক দান করুন। কুফরি থেকে ফিরে থাকার তাওফিক দান করুন। শিরক করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করে গোনাহ মুক্ত জীবন লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।