ঢাকা ০১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকট কাটাতে দ্রুত ভোট চায় রাজনৈতিক দলগুলো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৫ বার

সময় যত গড়াচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের দাবিটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্রমঞ্চ, কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এসব দলের নেতাদের ভাষ্য- সরকার দেশ চালাতে পারছে না। দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশ আরও বড় সংকটের মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দ্রুত নির্বাচনের দাবি হতে পারে সরকারকে চাপে রাখার একটি রাজনৈতিক কৌশল। কারণ, নির্বাচন যদি আগামী বছরে চলে যায়, সেটা অনেক দেরি হয়ে যাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান গতকাল বলেছেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ে সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচনের দাবি করতেই থাকবে। কারণ, নির্বাচিত সরকারই প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বুধবার (আজ) জমা হওয়ার কথা রয়েছে। রিপোর্ট জমা হলে এগুলোর ওপর আলোচনা হবে। এরপর বিএনপির অবস্থানটা আরও ভালোভাবে জানা যাবে। এই মুহূর্তে তো সব পরিষ্কার না। তবে বিএনপি যেহেতু বৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর, কাজেই তারা এই ধরনের দাবি জানাতেই থাকবে। তারা সে কৌশলই নিয়েছেন বলে আমার মনে হয়।’

আরও অনেক দলও দ্রুত নির্বাচন চায়- এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যদি ধরে নিই, ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হবে, তাহলে এটা দীর্ঘসময় হয়ে যায়। কাজেই তারা একটা দাবি জানাবেন এবং সরকারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়, যাতে নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও সব দল একরকম কথা বলছে না। জামায়াত সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দাবি জানায়নি। অন্যান্য দলের অবস্থানও জানা যায়নি।’

এদিকে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউএনডিপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠক শেষে ইসির সচিব আখতার আহমেদ জানান, তারা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির কাছে নির্বাচনী ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়তা চেয়েছেন। এর আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজও শুরু করতে যাচ্ছে জানিয়েছে ইসি। ফলে নির্বাচন নিয়ে ইসির প্রস্তুতির মধ্যে থাকার বিষয়টিও জানা গেছে।

গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন যারা করেছেন, তাদের সবার সঙ্গে আমরা এরই মধ্যে কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকে বলেছেন, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কারও দ্বিমত নেই। সমমনা দল, বাম দল, ডান দল, যতগুলো আছে- সবাই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছে। এরই মধ্যে সিপিবি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছেন। আর জামায়াতে ইসলামী যে নির্বাচনের ব্যাপারে যে পার্থক্য খুব বেশি আছে, দেখি না। গত কয়েক দিন আগেও উনি (দলটির আমির শফিকুর রহমান) বলেছেন, নির্বাচন করা দরকার, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা দরকার। তাই পার্থক্য কোনো দেখছি না।’ বলা বাহুল্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দাবিতে তার দলের সঙ্গে অন্যান্য দলের বৃহত্তর ঐক্যের অবস্থানকে পরিষ্কার করতে চেয়েছেন।

 

অন্যদিকে, নিষিদ্ধ না হয়েও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারা এবং অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দূরে থাকা জাতীয় পার্টি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনে করেন, নির্বাচন যত দ্রুত হয় তত ভালো। বর্তমান সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ; যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে যা চলছে, তা অত্যন্ত বৈষম্যপূর্ণ এবং অত্যন্ত ফ্যাসিবাদী। আমাদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রতিষ্ঠবার্ষিকী করব, সেখানেও আমাদের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও আমাদের নেতাকর্মীদের হ্যারেজম্যান্ট করা হয়েছে এবং তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আমরা কীভাবে নির্বাচন করব? লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তো হচ্ছে না।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড না হলে নির্বাচন শেখ হাসিনার মতোই হবে, যা মানুষ গ্রহণ করবে না। আমরা মনে করি সংস্কার অসম্ভব হয়ে গেছে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার সম্ভব না। জাতীয় ঐকমত্য এখানে হচ্ছে না। জাতিকে এরই মধ্যে বিভক্ত করে ফেলা হয়ে গেছে।’

নির্বাচন ইস্যুতে সরাসরি কিছু বলেননি ডাকসুর সাবেক ভিপি, গণতন্ত্রমঞ্চের শরিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট জমা দিক। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য স্থাপিত হলে তখন নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিবার্য হয়ে পড়বে। অর্থবহ নির্বাচন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের ক্ষেত্রে সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি। নির্বাচনের পূর্ব শর্ত সংস্কার। সুতরাং, সংস্কার এবং নির্বাচনে কোনো বিরোধ নেই। অচিরেই এসব প্রশ্নের রূপরেখা স্পষ্ট হবে।’

দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হবে- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। আমরা প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি, এই সরকারের একটা কাজ হলো ভালো নির্বাচন করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা দ্রুততার সাথে শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা। সুতরাং, এই বিবেচনায় সংস্কার কমিটি যদি বুধবার ভালো খবর দেয়, তাহলে এটা ভালো খবর হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার তো দেশ চালাতে পারছে না। এই ধরনের পরিস্থিতি যত লম্বা হয়, তত সরকারের জন্য, তথা দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটের খসড়া তালিকা পেশ করেছে। ২০ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার চেক করবেন। পুরো নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজটা এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। সরকার চাইলে বছরের মাঝামাঝিতেই করা সম্ভব।

সাইফুল হক বলেন, সরকারের উচিত এখন নির্বাচন কমিশনকে একটা স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে, আপনারা আপনাদের কাজগুলো ত্বরানি¦ত করেন, জোরদার করেন। বাকি নির্বাচনের সূচি তো নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ঘোষণা করতে পারবে। তবে কোনোভাবেই এ বছরের পরে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই, উচিতও নয়।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সংকট কাটাতে দ্রুত ভোট চায় রাজনৈতিক দলগুলো

আপডেট টাইম : ১১:১৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

সময় যত গড়াচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের দাবিটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্রমঞ্চ, কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এসব দলের নেতাদের ভাষ্য- সরকার দেশ চালাতে পারছে না। দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশ আরও বড় সংকটের মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দ্রুত নির্বাচনের দাবি হতে পারে সরকারকে চাপে রাখার একটি রাজনৈতিক কৌশল। কারণ, নির্বাচন যদি আগামী বছরে চলে যায়, সেটা অনেক দেরি হয়ে যাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান গতকাল বলেছেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ে সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচনের দাবি করতেই থাকবে। কারণ, নির্বাচিত সরকারই প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বুধবার (আজ) জমা হওয়ার কথা রয়েছে। রিপোর্ট জমা হলে এগুলোর ওপর আলোচনা হবে। এরপর বিএনপির অবস্থানটা আরও ভালোভাবে জানা যাবে। এই মুহূর্তে তো সব পরিষ্কার না। তবে বিএনপি যেহেতু বৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর, কাজেই তারা এই ধরনের দাবি জানাতেই থাকবে। তারা সে কৌশলই নিয়েছেন বলে আমার মনে হয়।’

আরও অনেক দলও দ্রুত নির্বাচন চায়- এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যদি ধরে নিই, ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হবে, তাহলে এটা দীর্ঘসময় হয়ে যায়। কাজেই তারা একটা দাবি জানাবেন এবং সরকারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়, যাতে নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও সব দল একরকম কথা বলছে না। জামায়াত সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দাবি জানায়নি। অন্যান্য দলের অবস্থানও জানা যায়নি।’

এদিকে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউএনডিপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠক শেষে ইসির সচিব আখতার আহমেদ জানান, তারা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির কাছে নির্বাচনী ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়তা চেয়েছেন। এর আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজও শুরু করতে যাচ্ছে জানিয়েছে ইসি। ফলে নির্বাচন নিয়ে ইসির প্রস্তুতির মধ্যে থাকার বিষয়টিও জানা গেছে।

গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন যারা করেছেন, তাদের সবার সঙ্গে আমরা এরই মধ্যে কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকে বলেছেন, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কারও দ্বিমত নেই। সমমনা দল, বাম দল, ডান দল, যতগুলো আছে- সবাই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছে। এরই মধ্যে সিপিবি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছেন। আর জামায়াতে ইসলামী যে নির্বাচনের ব্যাপারে যে পার্থক্য খুব বেশি আছে, দেখি না। গত কয়েক দিন আগেও উনি (দলটির আমির শফিকুর রহমান) বলেছেন, নির্বাচন করা দরকার, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা দরকার। তাই পার্থক্য কোনো দেখছি না।’ বলা বাহুল্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দাবিতে তার দলের সঙ্গে অন্যান্য দলের বৃহত্তর ঐক্যের অবস্থানকে পরিষ্কার করতে চেয়েছেন।

 

অন্যদিকে, নিষিদ্ধ না হয়েও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারা এবং অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দূরে থাকা জাতীয় পার্টি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনে করেন, নির্বাচন যত দ্রুত হয় তত ভালো। বর্তমান সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ; যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে যা চলছে, তা অত্যন্ত বৈষম্যপূর্ণ এবং অত্যন্ত ফ্যাসিবাদী। আমাদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রতিষ্ঠবার্ষিকী করব, সেখানেও আমাদের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও আমাদের নেতাকর্মীদের হ্যারেজম্যান্ট করা হয়েছে এবং তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আমরা কীভাবে নির্বাচন করব? লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তো হচ্ছে না।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড না হলে নির্বাচন শেখ হাসিনার মতোই হবে, যা মানুষ গ্রহণ করবে না। আমরা মনে করি সংস্কার অসম্ভব হয়ে গেছে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার সম্ভব না। জাতীয় ঐকমত্য এখানে হচ্ছে না। জাতিকে এরই মধ্যে বিভক্ত করে ফেলা হয়ে গেছে।’

নির্বাচন ইস্যুতে সরাসরি কিছু বলেননি ডাকসুর সাবেক ভিপি, গণতন্ত্রমঞ্চের শরিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট জমা দিক। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য স্থাপিত হলে তখন নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিবার্য হয়ে পড়বে। অর্থবহ নির্বাচন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের ক্ষেত্রে সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি। নির্বাচনের পূর্ব শর্ত সংস্কার। সুতরাং, সংস্কার এবং নির্বাচনে কোনো বিরোধ নেই। অচিরেই এসব প্রশ্নের রূপরেখা স্পষ্ট হবে।’

দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হবে- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। আমরা প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি, এই সরকারের একটা কাজ হলো ভালো নির্বাচন করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা দ্রুততার সাথে শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা। সুতরাং, এই বিবেচনায় সংস্কার কমিটি যদি বুধবার ভালো খবর দেয়, তাহলে এটা ভালো খবর হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার তো দেশ চালাতে পারছে না। এই ধরনের পরিস্থিতি যত লম্বা হয়, তত সরকারের জন্য, তথা দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটের খসড়া তালিকা পেশ করেছে। ২০ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার চেক করবেন। পুরো নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজটা এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। সরকার চাইলে বছরের মাঝামাঝিতেই করা সম্ভব।

সাইফুল হক বলেন, সরকারের উচিত এখন নির্বাচন কমিশনকে একটা স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে, আপনারা আপনাদের কাজগুলো ত্বরানি¦ত করেন, জোরদার করেন। বাকি নির্বাচনের সূচি তো নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ঘোষণা করতে পারবে। তবে কোনোভাবেই এ বছরের পরে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই, উচিতও নয়।’