বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট টিম রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুদকের নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্পদের বিবরণী নোটিশের জবাব না দেওয়ায় গত ২৩ ডিসেম্বর এসকে সুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এদিকে আটকের পর এসকে সুরকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হোসাইন। আদালত সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় এসকে সুরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। তবে এসকে সুরের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিল না। আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে আটক রাখার আবেদনে দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেছেন, এসকে সুরের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। তার নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে বেনামে অর্জিত সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী দাখিলের আদেশ দেওয়া হয়।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, এসকে সুরের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। তাকে দুদকে ডাকা হলে তিনি হাজির হননি। এ কারণে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধে মামলাটি দায়ের করা হয়। তিনি বলেন, এ দিন গ্রেপ্তারের পর এসকে সুরকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তৎকালীন গভর্নরের পদত্যাগ ও দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন আরও দুজন ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তারা হলেন আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান ও এসকে সুর চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, রিজার্ভ কেলেঙ্কারি চাপা দিতে এসকে সুর চৌধুরীরও ভূমিকা ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষকর্তারা দুদকের নজরদারিতে আছেন। এসকে সুরের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে যাচাই করে সম্পৃক্তদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
এদিকে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় এসকে সুর চৌধুরীকে আটক করা হলেও তার অবৈধ সম্পদেরও খোঁজ পেয়েছে দুদক। জানা গেছে, এসকে সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী এবং কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে এসকে সুর ও পরিবারের সদস্যদের যৌথ নামে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একটি প্লট পাওয়া গেছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে এই পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
আলোচিত পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এসকে সুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের ২৯ মার্চে এসকে সুরকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ছিল বলে জানা গেছে। এসকে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান। অভিযোগ আছে, এসকে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন।