হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী হরেক ধরনের মেলা বসে থাকে। যা সত্যিই বিচিত্র বটে! তার মধ্যে একটি হলো বিশ্বের বৃহত্তম উটের মেলা। এই মেলাটি বসে ভারতের রাজস্থানের পুস্করে। রাজস্থানকে বলা হয় প্রাসাদের শহর। একই সঙ্গে রাজস্থানকে উৎসবের শহরও বলা যায়।
রাজস্থান আজমির থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পুস্কর। তিন দিকে পাহাড়ে ঘেরা এ স্থানটি খুবই বিষ্ময়কর। স্থানটি দেখতে অনেকটা মরুময় প্রান্তরের মরুদ্যানের মতো। মাঝখানে বিশাল এক হ্রদ। মূলত এই হ্রদটার নামই পুষ্কর। রাজস্থানীয়রা বিভিন্ন রকমের পালা-পার্বণে মেতে থাকে।
তারা ১২ মাসে ১৩ পার্বণের মতো প্রতি ঋতুতে একটি করে উৎসব পালন করে। দুর্গ, প্রাসাদ আর উটের এই ধূসর শহর যেন রঙিন হয়ে ওঠে এসব উৎসবের রঙে। রাজস্থানের একটি জনপ্রিয় উৎসব হলো পুষ্করের মেলা। বলা হয়, এই মেলা দেখতে নাকি স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন ৩৩ কোটি দেব-দেবী।
পুরো ভারতবর্ষে প্রায় ছয়টির মতো ব্রহ্মা মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাচীন ব্রহ্মা মন্দির হলো পুষ্করের ধারের এই ব্রহ্মা মন্দিরটি। রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে পুষ্করের এই মন্দিরের কথা বলা আছে। মহাভারত অনুসারে, পুষ্কর ভারতের প্রাচীনতম তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম৷
এখানেই প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমায় পাঁচদিনব্যাপী পুষ্কর মেলা বসে। প্রায় ১০০ বছরের পুরনো এই পুষ্কর মেলা। কার্তিকী পূর্ণিমার মাঝেই পুষ্কর মেলার সৃষ্টি। এই পুষ্কর মেলাটি প্রতিবছর পূন্যতিথিতেই বসে। সাধারণত, চন্দ্র তিথি অনুযায়ী হিন্দুধর্মের যাবতীয় পালা পার্বণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এজন্যই প্রতিবছর পুষ্কর মেলার তারিখে ভিন্নতা দেখা যায়।
পুরো রাজস্থান তো বটেই, পুষ্কর মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো উট। তাইতো একসঙ্গে বলা হয় পুষ্করের উটের মেলা। প্রায় ৫০ হাজার উটের মেলা বসে এখানে। বলা হয়ে থাকে দেশের অন্যতম ‘ক্যাটল ফেয়ার’ এটি। শুধু দেশের নয়, পুরো বিশ্বের মাঝে অন্যতম বৃহত্তম উটের মেলা হলো এই পুষ্কর মেলা।
উট ছাড়াও গরু, ঘোড়া বেচাকেনাও হয় এই মেলায়। উটের বেচাকেনা ছাড়াও উটের ফ্যাশন শো, উটকে সুন্দর করে সাজানোর প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন রকম খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে রাজ্যের বাইরে উট বিক্রি ও উট হত্যা করা নিষিদ্ধ করে দেয়ায় এখন মেলায় উটের উপস্থিতি কম দেখা যায়। এ মেলা শুরুই হয় উট দৌঁড়ের প্রতিযোগিতা দিয়ে।
পাশাপাশি আনন্দ বাড়িয়ে দেয় মটকা ভাঙা, বড় গোঁফের প্রতিযোগিতা আর গণ বিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন। নাগপুরের রূপার অলংকার আর আজমিরের কাপড় কেনার পাশাপাশি রাজস্থানী গান-বাজনার উপভোগ্য আসর বসে পুস্করের মেলায়। ভালো করে ঝেড়ে মুছে, রংবেরঙের কাপড় আর অলংকার পরিয়ে উটগুলোকে আনা হয় মেলায়। উট সাজানো দেখেও মুগ্ধ হয় দর্শক।
জমে ওঠে মানুষের পাশাপাশি উটেরও অলংকার বেচাকেনা। উটের নাকে নথ পরানো দেখতে ভিড় জমে পর্যটকদের। উট প্যারেডের চাক্ষুস অভিজ্ঞতাও নিতে ভোলেন না পর্যটকরা। একসঙ্গে অনেক মানুষ পিঠে বসিয়ে উটের কসরত দেখানোও উপভোগ করে দর্শনার্থীরা।
চলতে থাকে উটের সার্কাস খেলা। বিভিন্ন স্থান থেকে লুকানো জিনিস অনায়াসেই খুঁজে এনে মালিকের হাতে তুলে দেয় প্রভুভক্ত উট। প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষে আবার ঘাড় উঁচিয়ে দর্শকদের সম্মানও জানায় উটগুলো। উটের মেলায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ভাড়া দিয়ে চড়া যায় উটের পিঠে। মেলার শেষ দিন দর্শনার্থীরা হ্রদের জলে গোসল করে। তাদের মতে, ওই হ্রদে স্নান করলে কঠিন সব রোগ থেকে মুক্তি মেলে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মেলার আয়োজন হলেও আনন্দ, মজা ও আমোদ-প্রমোদে মুখরিত থাকে মেলা। তাই মেলার শুরুতেই আকাশে ফানুশ উড়িয়ে উৎসবের সূচনা করা হয়। পাঁচদিন ব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন সময় আকাশে রঙিন ফানুশ উড়িয়ে দেয়া হয়। এই মেলায় থাকে নাচ, গানেরও ব্যবস্থা।
আয়োজন করা হয় বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতার। যেমন- পুরুষদের জন্য থাকে সবচেয়ে বড় গোঁফের প্রতিযোগিতা, উটের দৌঁড়। আর নারীদের জন্য থাকে দৌঁড়, উট সাজানোর প্রতিযোগিতা, জলভরা কলসি নিয়ে হাঁটা ইত্যাদি নানা রকম প্রতিযোগিতায় মেলা সেজে ওঠে আনন্দের পসরায়। এসব আয়জনের মধ্য দিয়েই শেষ হয় পাঁচদিনব্যাপী মেলাটি।