সিনেমার কাজ নেই, গ্রামে গিয়ে মাছ বিক্রি করব

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলমগীর হোসেন সবুজ। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাতক্ষীরায়। ছোটবেলায় টেলিভিশন ও হলে গিয়ে সিনেমা দেখে মনে মনে ভাবতেন—পর্দার মানুষগুলো বাস্তবে কেমন? তারা কী পর্দার মতো বাস্তবেও এত সুন্দর ও সাহসী?

এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ নিয়ে কিশোর বয়সে ঢাকায় ছুটে আসেন আলমগীর। তারপর পরিচিতজনের মাধ্যমে নাটক-সিনেমার শুটিং দেখতে যেতেন। কিন্তু তার সংসারে ছিল অথনৈতিক টানাপোড়েন। তাই বেশি দিন এভাবে বেকার থাকতে পারেননি। এরপর প্রোডাকশনের কাজ শুরু করেন। শুরুতে প্রোডাকশনের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতেন। ধীরে ধীরে সবার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। এক সময় প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন আলমগীর।

দীর্ঘ ১২ বছর বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমার শুটিংয়ে প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন আলমগীর। বেশ ভালোই চলছিল তার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে বাড়িতেও টাকা পাঠাতেন। বেশ ভালোই চলছিল তার জীবন। চারপাশে আপনজনের অভাব ছিল না, কিন্তু মহামারি করোনা প্রকোপ শুরুর পর থেকে কাউকে আর পাশে পাচ্ছেন না আলমগীর।

করোনার শুরু থেকে সিনেমার শুটিং বন্ধ। এখন পর্যন্ত সিনেমার শুটিং শুরু হয়নি। এদিকে কবে নাগাদ শুরু হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। শুটিং চলুক আর না চলুক মাস শেষে বাসা ভাড়ার জন্য দরজায় কড়া নাড়েন বাড়িওয়ালা। এভাবে কত দিন? গত পাঁচ মাস ধরে বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। বাসা ভাড়া না পেয়ে চাপ দিচ্ছেন বাড়িওয়ালা। বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন তিনি।

আলমগীর রাইজিংবিডিকে বলেন—‌গত পাঁচ মাস ধরে কোনো কাজ নেই। নাটক-সিনেমার কাজ শিখেছি আর কিছু শিখিনি। তাছাড়া এখন অন্যকোনো কাজও পাচ্ছি না। বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য তাগিদ দিয়েই যাচ্ছেন। তাই বাসাটা ছেড়ে দিয়েছি। পরিবারের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি কিছু টাকা পাব তার জন্য এখনো ঢাকায় আছি। আগামীকাল বাড়ি চলে যাব।

বাড়ি গিয়ে কী করবেন জানতে চাইলে আলমগীর বলেন—‌বাবা বাজারে মাছ বিক্রি করেন। এখন বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গেই সময় দেব। সিনেমার কাজ নেই তাই গ্রামে গিয়ে মাছ বিক্রি করব। এছাড়া আর কি করব, করার তো কিছু নেই!

চলচ্চিত্রের কেউ সহযোগিতা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন—আমি আসলে ম্যানেজার সমিতির সদস্য না। যে কারণে সমিতি থেকে সহযোগিতা পাইনি। এছাড়া যাদের কাজ করেছি। তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। সত্যি কথা বলতে এই শহরে কেউ কারো না, যার যন্ত্রণা সেই বুঝে। কত বড় বড় মানুষের কাজ করেছি। কিন্তু কোনোদিন সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেননি।

মহামারি করোনার কারণে সিনেমার শুটিং এখনো শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনো অনিশ্চিত। আলমগীরের মতো আরো অনেকেই অর্থকষ্টে নীরবে ঢাকা ছাড়ছেন। দিনে দিনে এর সংখ্যা বেড়ে-ই চলেছে।

মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘‌জান্নাত’, ‘আনন্দ অশ্রু’ সিনেমার কাজ করেছেন আলমগীর। এছাড়া বুলবুল বিশ্বাস সহ অনেক পরিচালকের সিনেমা, বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর