বাংলাদেশি তারকারা কলকাতার সিনেমায় কাজ করছেন বহুদিন ধরেই। আবার সেখানকার তারকাও অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের সিনেমায়। এটা নতুন কিছু না। গত শতকের সাতের দশক থেকেই দুই বাংলায় অভিনয়শিল্পীদের আনাগোনা চলছিল। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে দুই দেশের বিনোদন অঙ্গনেও। দুই দেশের শিল্পীরাই হারাচ্ছেন কাজ। এর মধ্যে বাংলাদেশের শিল্পীদের বয়কটের ডাক দিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। আমাদের আজকের আয়োজন কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করা দেশি তারকাদের নিয়ে।
একটা সময় কলকাতার প্রায়সব সিনেমাই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছিল; কমে এসেছিল প্রযোজক-পরিচালকের সংখ্যাও। তখন বাংলাদেশি কিছু সিনেমার রিমেক এবং বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে সিনেমাশিল্পকে আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়। রিমেক হওয়া সিনেমার মধ্যে ‘সুজন সখী’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার শিল্পীদের মধ্যে কলকাতায় অভিনয় করেছেন অনেকে।
জয়া আহসান
অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘আবর্ত’ সিনেমা দিয়ে কলকাতায় শুভসূচনা তার। এর পর কলকাতার টেলিভিশনে প্রিমিয়ার হওয়া ‘একটি বাঙালি ভূতের গল্প’তে দেখা যায় তাকে। তবে সবচেয়ে আলোচিত হন সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায়। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসার শহরে’ দেখা গেছে ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর পরিচালনায়। অরিন্দম শীলের পরিচালিত থ্রিলার সিনেমা ‘ঈগলের চোখ’ কলকাতায় মহাসমারোহে চলেছে। এ ছাড়াও জয়া অভিনীত অন্য সিনেমাগুলো হলোÑ ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘ক্রিসক্রস’, ‘বিজয়া’, ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’, ‘কণ্ঠ’, ‘রবিবার’, ‘বিনিসুতোয়’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘দশম অবতার’, ‘ভূতপরী’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’।
শাকিব খান
কলকাতার সিনেমার ইতিহাসে ব্যবসাসফল শীর্ষ দশ সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে শাকিব খানের ‘নবাব’। তার অভিনীত ‘শিকারী’, ‘নাকাব’, ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এল রে’ সিনেমাগুলো কলকাতার দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় করেছে তাকে। এ চলচ্চিত্রগুলোর ব্যবসা, দর্শকদের চাহিদা, সহশিল্পীÑ সবকিছু বিবেচনা করে ‘কলকাতা টাইমস’ সেরা ২০ তারকার মধ্যে ১৮-তে স্থান দিয়েছে ঢালিউড কিংকে। ‘কলকাতা টাইমস মোস্ট ডিজায়ারেবল ম্যান’-এ সেরা ২০ তারকার তালিকায় এবারই প্রথম এলো কোনো বাংলাদেশি অভিনেতার নাম।
বিদ্যা সিনহা মিম
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢালিউড নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম কলকাতার সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন বেশ আগেই। গেল বছর সঞ্জয় সমদ্দরের পরিচালনায় ‘মানুষ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তার বিপরীতে ছিলেন জিৎ। আরও আগে একই নায়কের সঙ্গে ‘সুলতান-দ্য সেভিয়র’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ‘মানুষ’ সিনেমাটি বিভিন্ন ভাষায় ভারতের কয়েকটি রাজ্যে মুক্তি পেয়েছে।
ফেরদৌস আহমেদ
১৯৯৮ সালে বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিতে অভিনয় করে বহুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই নির্মাতার আরও দুই সিনেমা ‘চুপিচুপি’ এবং ‘টক ঝাল মিষ্টি’তে অভিনয় করেন ফেরদৌস। তার অভিনীত আরও সিনেমাগুলোর মধ্যে আছেÑ ‘ফাইটার’, ‘খোকাবাবু’, ‘খোলা হাওয়া’ ইত্যাদি। তবে রাজনৈতিক প্রচারে অংশগ্রহণের দায়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন কলকাতার সিনেমায় তার অভিনয় করা হয়নি।
নুসরাত ফারিয়া
নুসরাত ফারিয়া বেশ কয়েকটি সিনেমা করেছেন কলকাতায়। ‘ভয়’ সিনেমাটিতে ফারিয়ার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা। ছবিটি পরিচালনা করেছেন রাজা চন্দ। ‘ভয়’-এর আগে কলকাতার ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ ও ‘বিবাহ অভিযান’ ছবি দুটিতে অভিনয় করতে দেখা গেছে ফারিয়াকে।
আরিফিন শুভ
২০১৯ সালে রঞ্জন ঘোষের ‘আহা রে’ সিনেমার মাধ্যমে টলিউডে অভিষেক ঘটে তার। চার বছর পর ফের কলকাতার সিনেমায় কাজ করেছেন আরিফিন শুভ। সিনেমার নাম ‘১৯শে এপ্রিল’। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন অরিন্দম শীল।
তাসনিয়া ফারিণ
টালিউড দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হয়েছে ঢাকার অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় ‘আরও এক পৃথিবী’ নামের সেই সিনেমা। অতনু ঘোষ নির্মিত ছবিটি প্রশংসা পেয়েছিল বেশ।
মোশাররফ করিম
‘ডিকশনারি’ নামে কলকাতার একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২০২১ সালে। পরিচালনা করেন ব্রাত্য বসু। ২০২৩ সালে একই পরিচালকের দ্বিতীয় সিনেমা ‘হুব্বা’ মুক্তি পায়। এক গ্যাংস্টারের জীবনকে কেন্দ্র করে বেড়ে ওঠে সিনেমার গল্প।
পরীমণি
নতুন বছরের প্রথম মাসেই মুক্তি পাচ্ছে তার প্রথম কলকাতার ছবি ‘ফেলুবক্সী’। আগামী বছরের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বড়পর্দায় দেখা যাবে ছবিটি। ছবিতে পরীমণি অভিনয় করেছেন লাবণ্য চরিত্রে। পরিচালনা করেছেন পরিচালক দেবরাজ সিনহা।
চঞ্চল চৌধুরী
কলকাতার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি নির্মাণ করেন ‘পদাতিক’। এ সিনেমায় মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেন বাংলাদেশের চঞ্চল চৌধুরী। মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রে ওপার বাংলার মনামী ঘোষকে দেখা গেছে।