রান্সের এক মেয়ে শিশু রক্তে এইডস ভাইরাস নিয়েই জন্ম নিয়েছিল। রক্তে শুধু এইডস ভাইরাস যে ছিল তা নয়, অত্যন্ত সক্রিয় অবস্থায় তা ছিল। বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় চিকিৎসা। কিন্তু কড়া ডোজের ওষুধেও রোগ নিয়ন্ত্রণ হয়নি।
ছয় বছর তা চলার পর কিছুটা হতাশ হয়েই চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন শিশুটির মা। দীর্ঘদিন চিকিৎসা ছাড়া থাকলেও কিছুই হয়নি তার। উল্টো রোগের লক্ষণ শরীর থেকে উধাও।
এর নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না মিললেও, রোগের প্রাথমিক স্তর থেকে সঠিক চিকিৎসার সাফল্য হিসেবেই বিষয়টিকে দেখছেন চিকিতৎসা বিজ্ঞানীরা। যাকে নিয়ে এই আলোড়ন সে আজ ১৮ বছর ৬ মাসের তরুণী।
সে গর্ভে থাকাকালীনই তার মা অনিয়ন্ত্রিত এইডসে আক্রান্ত ছিলেন। সন্তান জন্মের আগে পর্যন্ত তার কোনো চিকিৎসাও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসকদের আশঙ্কা ছিল সেই সন্তান জন্মের আগে থেকে অথবা প্রসবের সময়ই এইডসে সংক্রমিত হবে। সদ্যোজাতের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে চিকিৎসকদের সেই আশঙ্কাই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়।
প্রথম ছয় সপ্তাহের জন্য সদ্যোজাতকে জিদোভুদিন দিয়ে চিকিৎসা করেও বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। তারপরও রক্তে এইডস ভাইরাসের উপস্থিতি অত্যধিক মাত্রায় ধরা পড়ে। ওষুধের ডোজও আরো বাড়তে থাকে। কড়া ডোজের চারটি ওষুধ একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়।
এভাবেই ছয় বছর বয়স পর্যন্ত চিকিৎসা চললেও তেমন কোনো ফল হয়নি। আর সে কারণেই হঠাৎ একদিন মেয়েকে নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান মা। দীর্ঘ ১২ বছর পর অবশ্য ফিরে আসেন তিনি।
পুরনো চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, দীর্ঘ এই সময় মেয়ের কোনো চিকিৎসাই তিনি করাননি। ডাক্তাররা রাগ করার আগেই তাদের চমকে দিয়ে জানান, তার মেয়ের শরীরে এইডসের আর কোনো লক্ষণ নেই।
চিকিৎসকরা অবশ্য তার কথা বিশ্বাস করেনি। করবেই বা কেন, যে মা চিকিৎসকদের হাত থেকে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে পালাতে পারে তার কথা বিশ্বাস করাটা যে বোকামি। তাই নিশ্চিত হতে সেই তরুণীর রক্তপরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্ট হাতে পেয়ে আশ্চর্য হন চিকিৎসকরা। সত্যিই তরুণীর শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের কোনো সিনড্রোম পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসকদের আরো আশ্চর্য করে দিয়ে ওই মা জানান, তার মেয়ের বয়স যখন ১১ বছর তখন থেকেই শরীরে রোগের লক্ষণগুলো হারিয়ে যায়। রোগ উপশম হলেও তাকে এখনো সুস্থ বলতে নারাজ চিকিৎসকরা। তবে এই উপশমের জন্য নিজেদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন তারা। যা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার সাফল্য বলেই মনে করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের দাবি, রোগের প্রথম পর্যায় থেকে কড়া ডোজের যে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা হয়েছে তারই প্রভাবে দেহে এইডস ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। যদিও এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এখনই দিতে পারেননি চিকিৎসকরা।
প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক আসিয়ার সায়েজ সিরিওন বলেন, ‘এটা এইডস চিকিৎসার সাফল্য হলেও এই নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন।’