সৌদি নারীরা প্রথমবারের মতো গত রোববার থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। তবে, তাঁদের পুরুষদের থেকে পৃথক থাকতে হবে এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজকর্মে নিজেদের সরাসরি সম্পৃক্ত করতে পারবেন না।
আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, পুরুষনিয়ন্ত্রিত দেশটিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য এটিকে একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আগামী ১২ ডিসেম্বর দেশটির পৌর নির্বাচনে প্রায় ৯০০ নারী প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এ নির্বাচন প্রথমবারের মতো নারীদের নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছে।
উপসাগরীয় শহর কাতিফের এক নারী প্রার্থী নাসিম আল-সাদহ বলেন, ‘আমরা দেশকে উন্নত বা সংস্কার করতে চাই, তাহলে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের থাকতে হবে।’
সৌদি আরবে পুরোপুরি ইসলামিক রাজতন্ত্র। দেশটির মন্ত্রিসভায় কোনো নারী সদস্য নেই। পৃথিবীর একমাত্র দেশ সৌদি আরব, সেখানে নারীরা গাড়ি চালাতে পারেন না। বাইরে যেতে হলে নারীদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হয়। পরিবারের পুরুষ সদস্যের অনুমতি ছাড়া তাঁরা ঘরের বাইরে, কাজে যেতে বা বিয়ে করতে পারেন না।
এত বাধাবিপত্তির পরও বাদশা আবদুল্লাহর সময় ধীরগতিতে নারী অধিকারের বিস্তৃতি ঘটে। তিনি ২০০৫ সালে পৌর নির্বাচন শুরু করেন এবং এ নির্বাচনে ভবিষ্যতে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে ঘোষণা দেন।
২০১৩ সালে তিনি নারীদের শুরা কাউন্সিলের সদস্য করেন। শুরা কাউন্সিল মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাদশাহ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর বাদশাহ সালমান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি নারীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারটি এগিয়ে নেন।
উপসাগরীয় অন্যান্য দেশে কয়েক বছর ধরেই নারীদের ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম সৌদি নারীরা সেই অধিকার পেতে যাচ্ছেন।
প্রার্থী নাসিম আল-সাদহ নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের সংখ্যা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। তবে, তিনি বলেন, ‘খুবই কম’ নারী ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
সৌদি নির্বাচন কমিশনের তথ্য, ২৮৪টি কাউন্সিল আসনের বিপরীতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সাত হাজার আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন। ভোটের জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ৬০০ নারী নিবন্ধন করেছেন, যা পুরুষ ভোটারের মাত্র এক-দশমাংশ।দেশটিতে নির্বাচনের জন্য ভোটার হওয়ার বয়স ২১ থেকে ১৮-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। এরপরও একজন নারীর নির্বাচনে জয়লাভ করা এতটা সহজ নয়।
মক্কা জেলার প্রার্থী সাফিনাজ আবু-আল শামাত (৩৩) সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘জেতার ব্যাপারে আগেই বলতে পারছি না, তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব।’
কাতিফে মাত্র দুই হাজার নারী ভোটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সেখানে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৪৮ হাজার। সেখানকার প্রার্থী নাসিম আল-সাদহ বলেন, ‘আমাদের জন্য নির্বাচনে জয়লাভ করা খুব, খুবই কঠিন।’
এ ছাড়া পুরুষদের মতো নারীরা সরাসরি উপস্থিত থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পুরুষদের কাছে তাঁদের প্রচার চালাতে হবে। এমনকি নিজের ছবিযুক্ত কোনো পোস্টারও লাগাতে পারবেন না কোনো নারী প্রার্থী।