ঢাকা ১২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকের মর্যাদা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫
  • ৪২৫ বার

বাদশাহ আলমগীর-এর পুত্রকে পড়াতেন দিল্লীর এক মৌলভী। একদিন বাদশাহ দেখেন শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে তার পুত্র। এই দৃশ্য দেখে মৌলভীকে দরবারে ডেকে পাঠালেন। মৌলভী তো ভয়ে অস্থির। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে বাদশা বললেন, ছেলেকে সৌজন্য তো কিছু শেখাননি। সেদিন দেখলাম পুত্র আপনার পায়ে শুধু পানি ঢেলে দিচ্ছে। নিজ হাতে ধুইয়ে দিচ্ছে না। এই দৃশ্য দেখে বাদশাহ মনে ব্যথা পেয়েছেন সেকথাও বললেন।

কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতায় যেমনটি উঠে এসেছে-‘বাদশাহ্ কহেন, “সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে/নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,/পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।/নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে/ধুয়ে দিল না`ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।“/উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে/কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-/“আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,/সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।“

সবাই যদি বাদশাহ আলগীরের মত উদার হতেন তাহলে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে এত প্রশ্ন উঠতো না। আমাদের দেশের অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরা যেখানে ছিলেন সেখানেই যেন রয়ে গেছেন। তাদের অবস্থা আরও বোঝা যায় জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে। ‘শিক্ষক যখন কুলি’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জেএসসির খাতা নিতে এসে অনেক শিক্ষকের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার কথা। রিক্সা না পেয়ে অনেক প্রবীণ শিক্ষকই মাথায় খাতার বস্তা নিয়ে নিকবর্তী স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছেন। সেই ভারী বস্তা বহন করতে গিয়ে অনেকেই হয়েছেন গলদঘর্ম। একটি খাতা দেখে একজন শিক্ষক পান মাত্র ১২ টাকা করে। যাতায়াত ভাড়াসহ সব খরচ বাদ দিলে তেমন কিছু থাকে না। এরপর টাকা উঠানোর ঝক্কি-ঝামেলা তো রয়েছেই। সেখানেও বকশিসসহ নানা আবদার।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, যদি জেলা বা উপজেলা থেকে খাতা বণ্টন করা হত তাহলে শিক্ষকরা অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যেতেন। তাদের এ সংক্রান্ত খরচও কম হত। কিন্তু বর্তমানে সেটি হচ্ছে না। ফলে দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষকদের বোর্ডে আসতে হচ্ছে খাতা নেয়ার জন্য। যাতায়াত খরচই শুধু নয় নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষকদের এ নিয়ে। এসব দিক বিবেচনা করে খাতা বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। যদি প্রশাসনিক ব্যবস্থায়ই উপজেলা পর্যন্ত খাতা পৌঁছে দেয়া যায় এবং সেখান থেকেই আবার খাতা গ্রহণ করা হয় তাহলে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বোর্ডের অনিয়ম, দুর্নীতিও বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খাতা দেখার সম্মানীর পরিমাণও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষকরা নানাভাবেই বঞ্চনার শিকার। খাতা দেখা সংক্রান্ত জটিলতা থেকে তাদের উদ্ধার করা গেলে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব। কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে নজর দেয়া। কারণ এটি শুধু পয়সা-কড়ির ব্যাপার নয়, এর সঙ্গে শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্নটিও জড়িত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিক্ষকের মর্যাদা

আপডেট টাইম : ১০:২৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

বাদশাহ আলমগীর-এর পুত্রকে পড়াতেন দিল্লীর এক মৌলভী। একদিন বাদশাহ দেখেন শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে তার পুত্র। এই দৃশ্য দেখে মৌলভীকে দরবারে ডেকে পাঠালেন। মৌলভী তো ভয়ে অস্থির। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে বাদশা বললেন, ছেলেকে সৌজন্য তো কিছু শেখাননি। সেদিন দেখলাম পুত্র আপনার পায়ে শুধু পানি ঢেলে দিচ্ছে। নিজ হাতে ধুইয়ে দিচ্ছে না। এই দৃশ্য দেখে বাদশাহ মনে ব্যথা পেয়েছেন সেকথাও বললেন।

কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতায় যেমনটি উঠে এসেছে-‘বাদশাহ্ কহেন, “সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে/নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,/পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।/নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে/ধুয়ে দিল না`ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।“/উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে/কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-/“আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,/সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।“

সবাই যদি বাদশাহ আলগীরের মত উদার হতেন তাহলে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে এত প্রশ্ন উঠতো না। আমাদের দেশের অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরা যেখানে ছিলেন সেখানেই যেন রয়ে গেছেন। তাদের অবস্থা আরও বোঝা যায় জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে। ‘শিক্ষক যখন কুলি’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জেএসসির খাতা নিতে এসে অনেক শিক্ষকের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার কথা। রিক্সা না পেয়ে অনেক প্রবীণ শিক্ষকই মাথায় খাতার বস্তা নিয়ে নিকবর্তী স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছেন। সেই ভারী বস্তা বহন করতে গিয়ে অনেকেই হয়েছেন গলদঘর্ম। একটি খাতা দেখে একজন শিক্ষক পান মাত্র ১২ টাকা করে। যাতায়াত ভাড়াসহ সব খরচ বাদ দিলে তেমন কিছু থাকে না। এরপর টাকা উঠানোর ঝক্কি-ঝামেলা তো রয়েছেই। সেখানেও বকশিসসহ নানা আবদার।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, যদি জেলা বা উপজেলা থেকে খাতা বণ্টন করা হত তাহলে শিক্ষকরা অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যেতেন। তাদের এ সংক্রান্ত খরচও কম হত। কিন্তু বর্তমানে সেটি হচ্ছে না। ফলে দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষকদের বোর্ডে আসতে হচ্ছে খাতা নেয়ার জন্য। যাতায়াত খরচই শুধু নয় নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষকদের এ নিয়ে। এসব দিক বিবেচনা করে খাতা বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। যদি প্রশাসনিক ব্যবস্থায়ই উপজেলা পর্যন্ত খাতা পৌঁছে দেয়া যায় এবং সেখান থেকেই আবার খাতা গ্রহণ করা হয় তাহলে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বোর্ডের অনিয়ম, দুর্নীতিও বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খাতা দেখার সম্মানীর পরিমাণও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষকরা নানাভাবেই বঞ্চনার শিকার। খাতা দেখা সংক্রান্ত জটিলতা থেকে তাদের উদ্ধার করা গেলে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব। কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে নজর দেয়া। কারণ এটি শুধু পয়সা-কড়ির ব্যাপার নয়, এর সঙ্গে শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্নটিও জড়িত।