কলা চাষে ভাগ্য ফিরছে চাষিদের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাদারীপুরের শিবচরে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেশীয় জাতের কলা চাষ। এ কলা চাষে ভাগ্য বদল হচ্ছে এখানকার চাষিদের। যেখানে অন্যান্য ফসল করে লাভবান হতে পারছে না স্থানীয় চাষিরা, সেখানে কলা চাষে সফলতার হাসি এনেছে এ অঞ্চলের চাষিদের মুখে। ফলে দিন দিন বাড়ছেই কলার বাগানের সংখ্যা। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন চাষিরা।

কলার বাগান করে বছর শেষে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারায় স্থানীয় যুবকেরা পেশা বদলাচ্ছেন। অন্য পেশা ছেড়ে আসছেন কলা চাষে।

সরেজমিনে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ জমিতে কলার বাগান। পরিচর্যায় ব্যস্ত বাগানের মালিক-কর্মচারীরা। মাদবরেরচর ইউনিয়নের মোল্যাকান্দি এলাকার কয়েকজন কলা চাষির সাথে আলাপ করলে তারা জানান, অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে কলার চাষে খরচ কম এবং লাভও বেশি। এ এলাকার যেসব জমিতে ইতোপূর্বে ধান চাষ হতো এখন সেখানে করা হচ্ছে কলার বাগান। ভালো লাভ হওয়ায় ওই এলাকার এক চাষি অন্যের জমি বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে কলার বাগান করেছেন।

স্থানীয় আক্কাস মোল্যা জানান, তিনি তিন বছর ধরে কলার চাষ করে আসছেন। ইতোপূর্বে ভালো লাভ হয়েছে। এ জন্য এ বছর নিজের এক বিঘা জমির পুরোটাতেই কলার বাগান করেছেন। মাসখানেক পর তার বাগানের কলা বিক্রির উপযোগী হবে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, গত মৌসুমে কলা বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছিল তার। সব মিলিয়ে অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভের অংক একটু বেশি হওয়ায় কলা চাষ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

এলাকার আরো এক কলা চাষি মো. ওমর তালুকদার জানান, চলতি মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে তিনি কলার বাগান করেছেন। আট থেকে ১০ জন কর্মচারী তার বাগানে কাজ করে। তিনিও নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করে আসছেন। কলাচাষে সফল হওয়ায় এটাই এখন একমাত্র পেশা তার।

জানা গেছে, পদ্মাবেষ্টিত মাদবরেরচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ব্যক্তিগত জমি ছাড়াও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে স্থানীয় অসংখ্য যুবকেরা কলাচাষে উৎসাহী হচ্ছেন। বিঘা প্রতি বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা। বিঘা প্রতি কলা চাষে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় চারশ কলার গাছ থাকে। মৌসুম শেষে প্রতি বিঘা বাগানের গাছ হতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কলা বিক্রি করা যায়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানের ক্ষতি হলে এর পরিমাণ কিছুটা হেরফের হয়।

কলার বাগান ঘুরে চাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের দিকে জমিতে কলার গাছ লাগানো হয়। পরবর্তী বছর এই সময়ে কলা বিক্রির উপযোগী হয়। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার এ কলার অন্যতম বিক্রির স্থান। দেশীয় হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। বাজারের দোকানিরা ভালো দামে বিক্রি করতে পারে এসব কলা।

উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামের যুবক কামরুল ইসলাম, ফররুখ হাওলাদারসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবক নিজেদের জমিতে কলা চাষ করছেন। কলা চাষে সফল যুবক কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে নিজেদের অল্প কিছু জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু করি। সে বছর বাগান থেকে ভালো টাকা লাভ এসেছিল। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এ বছর অন্যের জমি ভাড়া নিয়েও কলার বাগান করেছি। তবে সমস্যাও রয়েছে অনেক, ঝড়-বৃষ্টিতে কলার চারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পোকায় ধরলে কলা নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দূর-দূরান্তের বাজারেও কলা বিক্রি হয়। সাধারণত পাইকারি বিক্রেতারা কলা পাকার মৌসুমে পুরো বাগান ধরে কিনে নেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকাতেও এখান থেকে কলা যায়। তাছাড়া বাগান থেকে খুচরাও বিক্রি করা হয় স্থানীয় দোকানিদের কাছে।

শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার প্রায় দুইশ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর ছিল ১২০ হেক্টর। এ সকল জমিতে সবরী ও মেহেরসাগর কলা উৎপাদন করা হচ্ছে।

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল খালেক মিয়া জানান, শিবচর উপজেলায় দিন দিন কলাচাষে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে কলা চাষ করছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান, পাটসহ রবিশস্য চাষে অনাগ্রহীরাই মূলত কলা চাষে ঝুঁকেছেন। কলা চাষে কৃষি কর্মকতারা চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর