উৎপাদন বাড়াতে গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর সাত দিনব্যাপী “বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০২২-২৩” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত, কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির স্টল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গবেষণা ছাড়া কোন উপায় নেই। যে জাতি এগিয়েছে, গবেষণার মাধ্যমে এগিয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা এখানে কাজ করছেন। আমাদের বিজ্ঞানীরা কিছুদিন পরপর যে ভ্যারাইটি বের করে এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিতে পারি যে আমরাও পারি, অসম্ভব কোন কিছুই নয়।
কৃষিমন্ত্রী বিজ্ঞানীরা যে সমস্ত জিনিস উদ্ভাবন করছে সেগুলো গণমাধ্যমে বেশি বেশি করে প্রচার করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাহলে কৃষকরা উৎসাহ পাবে এবং উৎপাদন বাড়াবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট শুধু দেশে নয় বরং বিশ্বের মডেল। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) যেমন ফিলিপাইনকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তেমনি ব্রিও বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিন্ডিকেট থাকলে সেটা কীভাবে ধ্বংস করা যায়, তার জন্য প্রক্রিয়া কি, সেটা উদ্ভাবন করে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। রমজান মাসে হারাম ব্যবসা না করার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে অনুরোধ করেন কৃষিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ এনডিসি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি জেকুন সি, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারি। কর্মশালায় ‘গবেষণা অগগ্রতি এবং অর্জন ২০২২-২৩’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ফসল বেশি উৎপাদন করতে পারি তাহলে বিশ্বের কাছে আমাদের মাথানত করতে হবে না। অপচয়, দুর্নীতি যাতে না হয় সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। প্রকল্পগুলো সময়মত শেষ করতে হবে। চালের দাম যাতে বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। এ সময় কৃষিমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মূল্যের তুলনায় বাংলাদেশে চালের দাম অনেক কম বলেও উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিজ্ঞানীদের আরও আন্তরিকভাবে গবেষণা করতে হবে। তিনি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সরকারের সময় দেশের চালের উৎপাদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়লেও বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময় উৎপাদনের হার সবচেয়ে বেশি যা দেশকে খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে সরকারের কৃষি বান্ধব কার্যক্রম যেমন- সার এবং তেলের দাম কমানো, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষিতে প্রণোদনা প্রদান, সার বিতরণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, উন্নত মানের বীজ সরবরাহ ব্যবস্থা, সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসহ নানামুখি পদক্ষেপ।
সকালে কৃষিমন্ত্রী গাজীপুরস্থ ব্রি সদর দপ্তরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী। পরে তিনি ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত ও প্রযুক্তির বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্রি ১১৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ১০৭টি ইনব্রিড এবং ৮টি হাইব্রিড জাত রয়েছে।