তীব্র তাপপ্রবাহে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে আরও তিন দিন হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এই গরমের মধ্যেও সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার উৎসবে মেতে উঠেছেন কৃষকরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই মনের আনন্দে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায়ও জেলার হাওরে হাওরে ধান কাটতে নেমেছে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের সমারোহ। আর এই সোনালী ধানের উপর নির্ভর করে চলে হাওরপাড়ের কৃষক পরিবারগুলো। ফলে এলাকার বাইরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ হাওরে ছুটে আসছে ধান কাটায় সহযোগিতা করার জন্য। অনেক স্থানে আবার ধান মাড়াই শেষ করে খলায় ধান শুকাচ্ছেন কিষাণীরা। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে হাওরপাড়ের কৃষকদের বাড়ির আঙিনা।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। জেলার সবগুলো হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। অন্যবারের চেয়ে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। নির্বিঘ্নে হাওরের ফসল গোলায় তুলতে পারলে এবার সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ধান উৎপাদিত হবে।
সুনামগঞ্জের হাওরে কাস্তের পাশাপাশি ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক ধান কাটার মেশিন কম্বাইন্ড হারভেস্টার। বোরো ধান কাটতে সুনামগঞ্জ জেলায় শ্রমিকের তেমন সংকট নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর রয়েছে। ৫৫ ভাগ জমির ধান মেশিনে এবং ৪৫ ভাগ জমির ধান কাটবেন শ্রমিকেরা। আরও ১৫ দিন এরকম আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কৃষক মারুফ তালুকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের শাল্লা উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে ধানের পাক ধরেছে। হাওরের দিকে থাকালে মনটা জুড়িয়ে যায়। এত ভালো ধান হয়েছে এবার, এখন মেঘ-বৃষ্টি না হলেই আমরা খুশি। তাহলে আমরা ধানগুলো কেটে ঘরে তোলতে পারব।’
হাসিভরা মুখে জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহৎ নলুয়া হাওরপাড়ের কৃষক সাহেদ আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি এবার প্রায় ১১ কাঠা জমিতে ধান করেছি। জেলার বিভিন্ন হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলেও আমাদের শুরু করতে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে। আর মাত্র কয়টা দিন যদি আবহাওয়া ভালো থাকলে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছি।’
সার্বিক পরিস্থিতি ভালো বলেন জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম। তিনি বলেন, জেলার সব হাওরেই পুরোদমে ধান কাটা চলছে। ধান কাটতে শ্রমিকের সংকট হচ্ছে না। কারণ কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন গতবারের চেয়ে বেশি কাজ করছে। সুনামগঞ্জ জেলার ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনের সঙ্গে অন্য জেলা থেকে আসা ২০০টি মেশিনে সমানভাবে ধান কাটার কার্যক্রম চলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ফলন বেশি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকরা যাতে ভালোভাবে তাদের ধান গোলায় তুলতে পারে, সেজন্য যা যা প্রয়োজন সেই বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা মাঠে কাজ করছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার রাইজিংবিডিকে বলেন, গত সপ্তাহে জেলায় ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা ছিল, তবে আগামী ৪-৫ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে হালকা বৃষ্টি হলেও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা নেই। হাওর নদীতে পানি নেই, এ অবস্থায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই।