পাট কাটা, জাগ ও শুকানোয় ব্যস্ত চাষিরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাজশাহীর মাঠে মাঠে এখন পাট কাটা, জাগ ও শুকানো শুরু হয়েছে। বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পাট। তবে জেলায় পুরোদমে এখনো শুরু হয়নি।

কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে ডোবা নালায় পর্যাপ্ত পানি থাকায় চাষিদের পাট জাগের বিড়ম্বনা দূর হয়েছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারো পাটের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার রাজশাহীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৬২২ হেক্টর। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর পাটের আবাদ হয়েছিল ১৩ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার প্রায় ৩২৩ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

দেশে আদমজি জুটমিলসহ বড় বড় জুটমিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে চাষিরা কয়েক বছর শুধুমাত্র শাক ও গৃহস্থালী কাজের জন্য পাটচাষ করতেন। ওই অবস্থায় জেলায় ২০০১ সালে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট পাটকল স্থাপনের পরে আবারো পাটচাষের পরিধি বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে সেখানে জেলায় ১৪ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। পাটের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আবারো পাট চাষ কমতে থাকে। ২০১২ সালে পাটচাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ হেক্টর। ২০১৩ সালে ১২ হাজার ১০১ হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে।

পাট চাষিদের এক বছর সুদিন আবার অন্য বছরে দুর্দিন অবস্থান করে। কিন্তু এবারে কি দাঁড়াবে সেটা নিয়ে বিড়ম্বনায় রয়েছে কৃষকেরা। নতুন পাট এখনো বাজারে আসলেও দাম নির্ধারণ না থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় চাষিরা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পবার এক পাটকলের মালিক জানান, গত বছরের পাট কেনা হচ্ছে ১৫শ’ টাকা মণ (৪০ কেজি)।

তিনি অভিযোগ করেন সরকার দেশের পাট ভারতে বেশী দামে বিক্রি করলেও চাষিরা প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সোনালী আঁশের দেশ বাংলাদেশ হলেও এখন পর্যন্ত ধান-চালের মতো সরকার পাটের দাম নির্ধারিত করে না। এজন্য দেশেরই কোনো কোনো স্থানে চাষিরা ভাল দাম পান। আবার কোনো কোনো এলাকার চাষিদের লোকসান গুণতে হয়।

পবার তেঘর গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন সরকার বলেন, এবারে শ্রমিক, চাষ, নিড়ানি, জাগ ও ধুয়া এবং বাজারজাত করণে প্রায় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিমণ (৪০ কেজি) পাটের দাম ২ হাজারের নীচে হলে চাষিরা লোকসানে পড়বে। কয়েক বছর আগে পাটের দাম ছিল প্রতি মণ ২ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ২ হাজার ৭শ’ টাকা। সেই আশায় চাষিরা এখনো পাটচাষ করছেন বলে অনেক চাষি জানান।

পবার বিলনেপালপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেন ও মধুসুদনপুর গ্রামের বাসের আলী, মোহনপুর উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামের ইয়াদ আলী, বাগমারা উপজেলার কাবাড়িপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুরোদমে পাটকাটা শুরু হয়েছে। পাট জাগ দিতে পর্যাপ্ত পানিও ডোবা-নালায় আছে। এবারে বেশীরভাগ জমির পাটই ভালো হয়েছে। গত কয়েক বছর আগে পাটের দাম ভালো থাকায় জেলার পাট চাষিদের মনে এক সোনালি ঝিলিক দেখা দেয়। সেই ঝিলিকের স্বপ্ন ও লাভের আশায় এবারো অনেকে পাট চাষ করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, এবারে পাটচাষের অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় আবাদ ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। দাম ভালো পেলে আবারো পাটের সুদিন ফিরবে ও সোনালী আঁশের মর্যাদা বাড়বে। লাভবান হবেন চাষিরা। আগামীতে আরো বেশী চাষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর