তুষার ইমরান পারফরম্যান্সের মূল্য পেলাম না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কিংবদন্তী তিনি। এই দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি তার। কিন্তু এবার ফিটনেসের কারণ বলে তাকে বিসিএলের ড্রাফটেই রাখা হয়নি। অনেকের মতো তুষার ইমরানও শঙ্কা করছেন, এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে তার ক্যারিয়ার। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে, কেন সুযোগ পেলেন না, সে নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান—

বিসিএল খেলতে না পারাটা কতোটা হতাশার?

আসলে বলার কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। খুবই হতাশ; শকড। অন্তত ড্রাফটে তো নাম থাকার মতো খেলোয়াড় বলে নিজেকে মনে করতাম।বলা হচ্ছে, আপনি বিপ টেস্টে ভালো না করাতেই ড্রাফটে নাম রাখা হয়নি। নাহ। আমার নাম তো বিপ টেস্টের তালিকাতেই ছিল না। প্রত্যেক দলের ম্যানেজার যার যার দলের খেলোয়াড়দের বিপ টেস্টের কথা জানিয়েছেন। আমাকে কেউ জানায়নি। আমি অন্য মাধ্যমে শুনেছি, বিসিএলের খেলোয়াড়দের বিপ টেস্ট হচ্ছে। পরে ওপরে (বিসিবি কর্মকর্তাদের) ফোন করে বিপ টেস্ট দিয়েছি। কোনো প্রস্তুতি ছিল না।

প্রস্তুতি থাকলে ভালো স্কোর করতে পারতেন?

১০ আমাদের জন্য এই বয়সে কঠিন। তারপরও ৯.৮ করেছি। পয়েন্ট টু কম। আমি যদি খেলার মধ্যে থাকতাম, প্রস্তুতি থাকত; তাহলে হয়তো ১০ হতো। তার পরও গতবার এনসিএলে আমাদের দ্বিতীয় একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছিল স্কোর বাড়ানোর জন্য। এবার তাও দেওয়া হয়নি।

বিপ টেস্টের সঙ্গে ভালো পারফরম্যান্সের সম্পর্ক আসলে কতোটা?

ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য এরকম টেস্ট তো ঠিকই আছে। কিন্তু বিপ টেস্ট পারফরম্যান্সের সঙ্গে সম্পর্ক সেরকম রাখে না। আমাদের রাজের (রাজ্জাক) কথা ধরেন। ওর তো বিপ টেস্টে স্কোর খুব ভালো না। কিন্তু গত এনসিএলেও এক দিনে ২৫-৩০ ওভার বল করেছে, অনেক উইকেট পেয়েছে। একটা ইয়াং ক্রিকেটার আর আমার বিপ টেস্টে স্কোর এক হবে না। এখানে অভিজ্ঞতার ও রিসেন্ট পারফরম্যান্সের একটা মূল্য থাকতে হবে।

পারফরম্যান্সের মূল্য তাহলে সেভাবে পাচ্ছেন না?

আমি টানা তিনটে বিসিএলে, এনসিএলে সেরা রান স্কোরার ছিলাম মাঝে। সে সময় মিডিয়াতে অনেক লেখালিখি হয়েছে। কিন্তু আমাকে তো জাতীয় দলের ক্যাম্পেও ডাকা হয়নি। পারফরম্যান্সের মূল্যটা কোথায়? গত বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক বছর পর সেরা তিন স্কোরারের মধ্যে ছিলাম না। তাহলে সেরা তিনে যারা না থাকবে, তারা কেউ পরের বছর খেলবে না!

আপনার ক্যারিয়ারের কি এখানেই শেষ দেখতে পাচ্ছেন?

আমি দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, এই বয়সে বাইরের দেশগুলোতে অনেক ক্রিকেটার দারুণভাবে ফার্স্ট ক্লাস খেলে যায়। ওয়াসিম জাফরের চেয়ে অনেক বেশি বয়স নিয়ে খেলছে। ফলে আমি মনে করছি না যে, আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে তো এবার একটা সিগন্যাল দিয়ে দেওয়া হলো। বোঝাই যাচ্ছে, আমাকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও আর চাচ্ছেন না তারা। ফলে এখানে শেষ হয়ে যেতে পারে।

আপনার ১২ হাজার রান পূরণ হতে আর ২৯৬ রান দরকার। এই রানটা করার জন্য স্বপ্ন দেখছিলেন?

দেশের অনেকগুলো মাইলফলকে প্রথম পৌঁছেছি আমি। ভেবেছিলাম, প্রথম ১২ হাজার রানও আমার হবে। সে জন্য এটাও বলেছিলাম যে, ১২ হাজার রান হলে অবসর নিয়ে ভাবব। কিন্তু সে সুযোগটাও আর পাব কি না, কে জানে!

২০০০ সালের দিকের সেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তুষার ইমরান থেকে আজকের সবচেয়ে অভিজ্ঞ তুষার ইমরান—এই যাত্রাটা কীভাবে দেখেন? যা সম্ভাবনা ছিল, তা পূরণ করতে পেরেছেন?

ঘরোয়া ক্রিকেটে হয়তো নিজের মতো পারফরম করেছি। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে পারিনি। যে প্রত্যাশা আমাকে নিয়ে ছিল, তা পূরণ করতে পারিনি।

সে দায় কার?

কাউকে দায় দেব না। আমারই ভুল। খুব কম বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ এসে গিয়েছিল। সুযোগটার মূল্য বুঝতে পারিনি। যেভাবে শুরু করেছিলাম, সেভাবে এক বছর খেলতে পারলেও দলে জায়গা পাকা হয়ে যেত। কিন্তু ২০-৩০ রানে আটকে যাচ্ছিলাম বারবার। আবার পরে যখন পরিণত হয়েছি, তখন আর কখনো সুযোগই পাইনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর