সোনার বাংলা গড়তে সবার সহযোগিতা চাই : শেখ হাসিনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে, জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করে সেই জয় ধরে রাখা কঠিন কাজ বলে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের লোকজন বারবার ভোট দিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে দেশ গড়ে তুলতে তিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা চান।

শনিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় উদযাপনে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জীবন উন্নত করব। সুশিক্ষা নিয়ে দেশের মানুষ নিজের জীবন গড়ে তুলবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জয়-পরাজয় একটি নির্বাচনের স্বাভাবিক ব্যাপার। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, এটা সত্য। তবে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। প্রতিটা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাজনৈতিক দলমত দেখা হবে না। যারা ভোট দিয়েছেন, যারা দেননি, সবার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুত ব্যক্ত করেন তিনি।

নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ায় তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সবসময় বিজয় অর্জন করে, এই নির্বাচনে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এ রায় জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। অন্ধকার থেকে আলোর পথের যাওয়ার রায় দিয়েছে জনগণ। এ রায় হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার রায়।

উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী, দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। এ সময় প্রতিটি অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ করার কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমার চাওয়া-পাওয়া নেই। জীবন উৎসর্গ করে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ব। দেশে একটি লোকও না খেয়ে থাকবে না বলে জানান তিনি।

বেলা ৩টার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয় ‘বিজয় মঞ্চ’, তার পেছনের ব্যানার সাজানো হয় দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে।

বৈঠাসহ ছোট-বড় ৪০টিরও বেশি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয় সমাবেশ মাঠ।

মঞ্চে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের বেশিরভাগ সদস্য মঞ্চে ছিলেন।

জনসভার কারণে সকাল ১১টা থেকে শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সিগন্যাল, কাঁটাবন মার্কেট মোড়, নীলক্ষেত মোড়, চানখাঁরপুল, জিপিও ও মৎস্য ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

জনসভায় যোগ দিতে সকাল ৯টায়ই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখী মিছিল দেখা যায় ঢাকার নানা স্থানে। বাংলা একাডেমির বিপরীত দিক দিয়ে উদ্যানে ঢোকার পথে ছিল দীর্ঘ সারি। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে ঢাক-ঢোলের বাদ্যে মুখর এই নেতা-কর্মীদের দুপুরে মাতিয়ে তোলেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পীরা।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলমের পাশাপাশি কণ্ঠ মেলান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মমতাজও। এছাড়াও গান গেয়ে শোনান ফকির আলমগীর, জানে আলম, পথিক নবী, আঁখি আলমগীর, সালমা। ব্যান্ড দল জলের গানও তাদের পরিবেশনা নিয়ে আসে এই উৎসবে।

গানে গানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বন্দনা যেমন ছিল, তেমনি ছিল গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর