হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের দেশে এখন ঘর থেকে বেরোলেই দেখা যায় যেখানে সেখানে ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। ফলে বর্তমানে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হিসেবে সবার সেবা পেতে অনেকটাই সহজ হয়েছে। আমরা এখন অনেক সচেতন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়ে।
আর সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কোনো রোগ হলেই আমরা দ্রুত এলোপ্যাথির দ্বারস্থ হই। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় থাকে না। বিশেষ করে টাইফয়েড জ্বর, ডায়রিয়া, কলেরার মতো পেটের রোগে অ্যান্টিবায়োটিকও চলে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওইসব ওষুধের দাম অনেক সময় নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যায়। অথচ আমাদের হাতের কাছেই কিছু ভেষজ গাছ ও লতাপাতা রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত অল্প দামে বা একটু খুঁজলে বিনামূল্যেও পাওয়া যায়। আমরা জানি না অথবা জেনেও বিশ্বাস করতে পারি না। তেমনি একটি ভেষজ উদ্ভিদ হলো থানকুনি।
বৈজ্ঞানিক নাম: Centella asiatica প্রচলিত নাম : ব্রাহ্মী, হাইড্রোকোথিলি ও ভারতীয় পেননিওয়ার্ট।
বর্ণনা ও বাসস্থান : সাধারণত গ্রামাঞ্চলে আনাচে-কানাছে, রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে, জলাশয়ের তীরে বিশেষ করে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় থানকুনি দেখা যায়। এটি একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যার ফুল সাধারণত লাল ও গোলাপি রঙের হয়।
ঔষধি ব্যবহার: থানকুনি প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকে চীন দেশে প্রথাগত ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। পাশাপাশি ভারতে প্রায় দুই হাজার বছর আগে ভারতীয় আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। চীনে একে ‘ফাউন্টেন্ড অব ইউথ’ বলে।
এটি বিশেষ করে ক্ষত নিরাময় ও মূত্রবর্ধক হিসেবে ব্যবহার হলেও আফ্রিকানরা কুষ্ঠরোগ, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, সিফিলিস, মানসিক প্রতিবন্ধকতার উন্নতি, আইকিউ বৃদ্ধি, ত্বকের রোগ চিকিৎসা, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, জীবনী শক্তি বৃদ্ধি, স্মৃতি বৃদ্ধি, ক্যান্সার চিকিৎসা, শিরা ও রক্তের সংশোধক, শক্তিশালীকরণ, লিভার ও কিডনি, বাত, ওজন কমানো, বার্ন, তারুণ্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে আরো রয়েছে ভিটামিন ‘কে’, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টির বৈশিষ্ট্য।
আধুনিক ব্যবহার: থানকুনি আমাদের দেশে অতিপরিচিত লতাপাতা। পুকুরপাড় বা জলাশয়ের তীরে হর হামেশাই দেখা মেলে। কথায় বলে, পেট ভালো থাকলে মনও ফুরফুরে থাকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, থানকুনিপাতার এমন ভেষজ গুণ রয়েছে যে, নিয়মিত খেলে পেটের অসুখে কোনো দিনও ভুগতে হবে না।
শরীর তো সতেজ থাকেই, অল্পবয়সের শিশুদের খাওয়াতে পারলে বুদ্ধিরও বিকাশ হয়। দেখে নেয়া যাক তারুণ্যকে ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদি সুন্থ থাকতে থানকুনিপাতার ভেষজ গুণগুলো কী কী-
১. পেটের রোগ নির্মূল করতে থানকুনির বিকল্প নেই। নিয়মিত খেলে যেকোনো পেটের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একই সাথে পেট নিয়ে কোনো দিনও ভুগতে হবে না। ২. শুধু পেটই নয়, আলসার, এক্সিমা, হাঁপানিসহ নানা চর্মরোগ সেরে যায় থানকুনির পাতা খেলে। ত্বকেও জেল্লা বাড়ে।
৩. থানকুনি পাতায় থাকে Bacoside A ও B1 Bacoside E, যা মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়। দুধ, মধু ও থানকুনিপাতার রস নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ৪. থানকুনি স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
৫. মৃতকোষের ফলে চামড়া থেকে অনেক সময় শুষ্ক ছাল ওঠে। ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। থানকুনি পাতার রস মৃতকোষগুলোকে পুনর্গঠন করে ত্বক মসৃণ করে।
৬. পুরনো কোনো ক্ষত কোনো ওষুধে না সারলে, থানকুনি পাতা সেদ্ধ করে তার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে সেরে যায়। সদ্য ক্ষত থানকুনিপাতা বেটে লাগালে ক্ষত নিরাময় হয়। ৭. থানকুনিপাতা চুল পড়া বন্ধ করে। এমনকি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
৮. বয়স বাড়লে তারুণ্য ধরে রাখে থানকুনিপাতার রস। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে ৫-৬ চামচ থানকুনিপাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য আসে। আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।
৯. দাঁতের রোগ সারাতেও থানকুনির জুড়ি মেলা ভার। মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে বা দাঁত ব্যথা করলে একটি বড় বাটিতে থানকুনিপাতা সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।
সতর্কতা: খুব উচ্চপর্যায়ে গবেষণালব্ধ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে বমি বমি ভাব হলে, চার বছর বয়সের নিচের শিশুদের ও বুকের দুধ খাওয়ানো বা গর্ভবতী মায়েদের থানকুনি গ্রহণ করা উচিত নয়। এ ছাড়া সিডেটিভস (Sedatives) গ্রহণকারী মানুষের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে থানকুনি ব্যবহার না করাই উত্তম।